'আত্মহত্যার' আগে চিরকুটে দায়ীদের নাম লেখে সুমনা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কেদার গ্রামে চিরকুট লিখে রেখে এক কিশোরী 'আত্মহত্যা' করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। 'আত্মহত্যার' আগে তাঁর মৃত্যুর জন্য দুইজন ব্যক্তিকে দায়ী করে ‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী রফিকুলের বউ জাহেদা। আমার জীবনটা নষ্ট করেছে কাওছার।’ লিখে গেছে। ওই কিশোরী চিরকুটে আরও লিখেছে, আমার জীবনের মূল্য নেই, এসবের পিছনে সব দায়ী জাহেদা, আমি এই দুনিয়া থেকে চলে যায়তেছি (যাইতেছি), আমি তখনি শান্তি পাব যখন জাহেদা আর কাওছার সারা জীবন জেলে ধুকে ধুকে মরবে। আমি তখনই শান্তি পাবো।

ওই কিশোরীর নাম সুবর্না আক্তার সুমনা(১৭)। তিনি ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কেদার গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি বুধবার রাতে বিষপানে করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সুমনা। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ভূরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

বিজ্ঞাপন

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে মারা যায় সুমনা। পরে ময়না তদন্ত শেষে গতকাল রোববার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সুমনার মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। রোববার (১৩ জানুয়ারি) রাতেই ওই কিশোরীর মরদেহ পারিবারিকভাবে দাফন হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বলদিয়া ইউনিয়নের সাদুমোড় এলাকার শহিদুল ইসলামের কিশোরী মেয়ে সুমনার সাথে বাড়ির পাশের আজাদ আলীর ছেলে কাওছারের (২২) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘদিন মন দেয়া নেয়া একপর্যায় তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এতে কিশোরী গর্ভধারণ করে। বিষয়টি লোকসমাজে জানাজানি হলে মেয়ের পরিবার বিয়ের জন্য কাওছারকে চাপ দেয়। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা গ্রাম্য সালিশ হয়। এতে কোন সুরহা হয়নি। অপর দিকে কাওছার গোপনে অন্যত্র বিয়ে করে। পরে উপায়া না পেয়ে মেয়ের পরিবার কাওসার, তাঁর মা রোজিনা খাতুন, বাবা আজাদ আলী ও জাহেদার নামে কুড়িগ্রাম আদালতে মামলা করে। আদালত কচাকাটা থানাকে মামলাটি রেকর্ড করার আদেশ দেয়। পরে কচাকাটা থানায় সুবর্নার মা আনিছা বেগম বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা ৯(১) ধারায় এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন দণ্ডবিধি ৩২৩/৫০৬/১০৯ ধারায় মামলা করেন। এদিকে মেয়ের গর্ভের সন্তানের বয়স পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও গর্ভের সন্তানের পরিচয় ও প্রেমের স্বীকৃতি না পেয়ে ৮ জানুয়ারি বুধবার রাতে বিষপান করে সুমনা।

বিজ্ঞাপন

কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, কিশোরীর মায়ের দায়ের করা মামলাটি ৭ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যেই গত ৮ জানুয়ারি রাতে ওই কিশোরী বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে রংপুর মেডিকেলে মারা গেছে বলে শুনেছি। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে। সকালে আমি নিহত ওই কিশোরীর পরিবারের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আজ সন্ধ্যায় একটি হত্যা মামলা করবে বলে জেনেছি। তবে এখন পর্যন্ত হত্যা মামলা করতে কেউ আসেনি। পূর্বের মামলায় আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।