ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মুসলিমদের অন্যতম বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। দেশের লাখ লাখ মুসলমানদের পাশাপাশি কয়েক হাজার বিদেশি মুসলিমরাও এসেছেন ইজতেমায় অংশ নিতে।
এ দিকে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও গুজব প্রতিরোধে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০ থেকে ইজতেমা মাঠের বিভিন্ন ব্লক ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি তাবুতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইজতেমার মাঠে আসা মুসল্লীরা ইবাদত বন্দেগি করছেন। কেউ ঘুমাচ্ছেন আবার অনেকেই ইজতেমার সহযাত্রীদের জন্য খাবার রান্না করছেন। সবাই আগেভাগে রান্না শেষ করে প্রথম দিনের জুমার নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পল্টন থেকে ইজতেমার মাঠে এসেছেন আহমেদ রাফি। তিনি বলেন, আমরা প্রায় ৩০০ জন এসেছি। এবারের পরিবেশ আগের চেয়ে ভালো। আমাদের সবারই চাওয়া দেশে শান্তি। আমরা যেনো ইসলামের পথে চলতে পারি।
১৫০ সাথী নিয়ে পুরান ঢাকার লালবাগ থেকে এসেছেন জামিল বলেন, এখানে আগেও এসেছি। অতীতের চেয়ে পরিবেশ ও নিরাপত্তা অনেক ভালো। বর্তমানে তাবলীগ জামায়াত ঘিরে যে সমস্যা চলছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এর সমাধান চাইবো।
ভারত, সৌদি আরব ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের ৭০ টি দেশ থেকে দুই হাজারের বেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা তাবুর ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে কেউ চাইলেই তাদের সংস্পর্শে আসতে পারবে না।
পাকিস্তানের পেশোয়ার থেকে এসেছেন জিয়াউর রহমান ফারুকী। তিনি বলেন, আমি এপর্যন্ত ৫ বার এসেছি। বাংলাদেশের মানুষ অনেক অতিথিপরায়ন। আল্লাহর পথে দাওয়াতি কাজে মেহনত করতে এসেছি। বাংলাদেশিদের আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দেবেন কারণ তারা আমাদের মতো বিদেশি মেহমানদের জন্য ভালো ব্যবস্থা করেছেন। মেহমানদারিতে বাংলাদেশের মানুষ অনেক এগিয়ে।
বাংলাদেশি নাগরিক হলেও বিদেশি কামরায় অবস্থান দিন ইসলাম। কথা বলে জানা গেলো, বাংলাদেশি নাগরিক হলেও মূলত তিনি কুয়েত প্রবাসী। তিনি দেশটি থেকে ২০ জনের একটি জামায়াত নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, আমরা বাঙালিরা যারা বিদেশে আছেন তারা কাকরাইল মসজিদের মাধ্যমে ম্যাসেজ পেয়ে যান। আমরা সময় মতো চলে আসি। আমরা আরব তাবুতে আছি। এখানে অনেক সুন্দর আয়োজন। প্রতিটি টেন্ড ও খেমায় আমল হচ্ছে। সবাই নিজ নিজ খেমায় অংশ নিচ্ছেন। প্রতিটি পর্বে আমল হচ্ছে।
ইজতেমা মাঠে হামলার বিষয়টি নিয়ে বিদেশি মুসল্লিদের ভাবনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ইজতেমায় অংশ গ্রহণ করি। একটা গ্রুপ আছে ইজতেমার এই সুন্দর আয়োজনকে নষ্ট করার জন্য কাজ করছে। তারা ভয় দেখিয়ে বিদেশি মেহমানদের না আসার চক্র করে যাচ্ছে। দাওয়াত ও তাবলীগের এই কাজটি তো হকের কাজ। কিন্তু এই কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা নিরিহ ও ঘুমন্ত মুসল্লীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে।
জানা গেছে ইজতেমার মাঠের নিরাপত্তায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি পুলিশ এবং প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছেন।
ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তার বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড.নাজমুল করিম খান বলেন, ইজতেমার মাঠে খুবই শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। ইজতেমা ঘিরে কোনো যানজট নেই। দূরপাল্লার গাড়ি চলছে। মানুষ চলাচল করছে, নিরাপত্তা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ইজতেমার মাঠে আসা হকারদের আমরা সরিয়ে দিচ্ছি।
জিএমপি কমিশনার বলেন, ইজতেমা ঘিরে বিপুল পরিমাণ ভিক্ষুক এসেছে। এটা নিরাপত্তার জন্য একটা সমস্যা হতে পারে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেলে তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেব।