বে-টার্মিনালের ১২শ কোটি টাকায় অধিগ্রহণ হবে ৮০৩ একর খাস জমি

  • আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বে-টার্মিনালের ১২শ কোটি টাকায় অধিগ্রহণ হবে ৮০৩ একর খাস জমি। ছবি: বার্তা২৪.কম

বে-টার্মিনালের ১২শ কোটি টাকায় অধিগ্রহণ হবে ৮০৩ একর খাস জমি। ছবি: বার্তা২৪.কম

আগামীর বন্দর খ্যাত চট্টগ্রাম বে-টার্মিনালের ভূমি নিয়ে সকল জটিলতা নিরসন হচ্ছে। বিভিন্ন লোকে দখলে থাকায় খাস জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৮০৩ একর খাস জমি অধিগ্রহণের জন্য ১২শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ২৮ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে বে-টার্মিনালের ভূমি জটিলতা নিরসনে সব ভূমিই অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বে-টার্মিনালের জন্য মোট ৮৭১ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানা এবং ৮০৩ একর খাস জমি। খাস জমিতে মামলার জটিলতা এড়াতে তা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব ৬ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে আগামীর বন্দর হিসেবে বিবেচিত বে-টার্মিনালের জন্য দুই ধাপে ৮০৩ একর জমি নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে ৬৮ একর জমি অধিগ্রহণে ৪৬৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই জায়গার ওপর ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। আর ৮০৩ একর খাস জায়গা অধিগ্রহণে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এবার ওই খাস জায়গা অধিগ্রহণের জন্য ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় বন্দর।

জানা গেছে, নগরীর ইপিজেডের পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় সাগরের ভেতরের অংশে ২৩০০ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে এই বে-টার্মিনাল। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা নেভিগেশন সুবিধার সম্ভাবনার এই টার্মিনালের জমি বরাদ্দ প্রক্রিয়া ঘুরছে তিন বছর ধরে। ২০১৫ সালে জমি বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/10/1554862536034.gif

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নতুন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রামের বে-টার্মিনালের জমির সমস্যা সমাধান করেছে। জমি অধিগ্রহণ করায় আগামীর স্বপ্নের বন্দর প্রতিষ্ঠায় আর কোনো বাধা রইল না।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, আগে সরকারি খাস জায়গা বরাদ্দ নেওয়ার পর দেখা যায়, এখানে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার জমি সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষের দখলে নেওয়া যাচ্ছিল না। মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষা করলে অনেক সময় ব্যয় হবে। তাই মামলা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য ওই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে বে-টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপের কার্যক্রম শেষ করেছে জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের মাধ্যমে বে-টার্মিনাল গড়ে তুলবে। যেখানে ৩টি টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল ও দুটি কনটেইনার টার্মিনাল থাকবে। প্রাথমিকভাবে বে-টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারগুলো ডেলিভারি দেয়ার জন্য স্পেস তৈরি করা হবে। ফলে বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করা দিনে প্রায় ৬ হাজার ট্রাককে আর নগরে প্রবেশ করতে হবে না।

উল্লেখ্য, বে-টার্মিনালে জোয়ার-ভাটা, দিন-রাত, বাঁকা চ্যানেল কিংবা ড্রাফটের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এখানে যেকোনো দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমান চ্যানেলে মাত্র ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ কর্ণফুলীতে প্রবেশ করতে পারে। বিদ্যমান পোর্ট জেটিতে একসঙ্গে ১৬টি জাহাজ বার্থিং করা যায়। আর বে-টার্মিনালে গড়ে প্রায় ৫০টি জাহাজ একসঙ্গে বার্থিং করা যাবে।