এক টাকা সেলামির কাঠের জেটি থেকে আজকের চট্টগ্রাম বন্দর

  • আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট চট্টগ্রাম বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম বন্দর ভবন / ছবি: বার্তা২৪

চট্টগ্রাম বন্দর ভবন / ছবি: বার্তা২৪

বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর, যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে (১৮৬০ সালে) ইংরেজ ও দেশি ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। এরপর ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়, ১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয় এবং ১৮৮৮ সালে ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) মহাসমারোহে পালিত হয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যের এ সমুদ্রবন্দরের ১৩২তম বর্ষপূর্তি। এ দিবসকে ঘিরে আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান। চলছে সাজ সাজ রব।

বিজ্ঞাপন

বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলওয়ে সংযোগ স্থাপন করা হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-এ পরিণত করা হয়। বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টকে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা। এভাবেই গড়ে ওঠে আজকের চট্টগ্রাম বন্দর। যেখান থেকে আসছে বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ রাজস্ব।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/27/1556384082026.jpg

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের পন্টুন জেটিসহ মোট ১৭টি জেটির মধ্যে ১৩টি জেটিতে শোরক্রেন ও রেলওয়ে লাইনের সংযোগ আছে। ১১টি জেটিতে রয়েছে শেড। ১৬টি ট্রানজিড শেডের মোট আয়তন ১২ লাখ ৩০ হাজার ৮৫০ বর্গফুট। ওয়্যার হাউসের মোট আয়তন ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪০ বর্গফুট, যার মাল ধারণ ক্ষমতা ২৭ হাজার ৬০০ টন।

পতেঙ্গা সংকেত কেন্দ্র থেকে সমুদ্রাভিমুখে সাড়ে ৫ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের সমুদ্র সীমা ধরা হতো। ২০১১ সালে আলফা, ব্রেভো এবং চার্লি নামে তিনটি অ্যাংকারেজে ভাগ করে বন্দরের জলসীমা বাড়ানো হয় ৭ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। এরপর কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতাও বাড়ানো হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে ৫০ নটিক্যাল মাইল। মিরসরাই থেকে মাতারবাড়ি-কুতুবদিয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের এলাকা ধরা হয়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হালিশহর উপকূলে জোয়ার-ভাটার নির্ভরতামুক্ত এলাকায় ৮০৩ একর ভূমিতে বে-টার্মিনাল গড়ে তুলছে, যার দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৬০০ মিটার। বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালসহ সবগুলো জেটিতে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হয়। বে-টার্মিনাল হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। বন্দরে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ টিইইউএস কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যায়, বে-টার্মিনালে ৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যাবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/27/1556384102896.jpg

এদিকে গত বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য চারটি স্বতন্ত্র টার্মিনাল নির্মাণ, ১০টি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে বন্দরের আয়তন বাড়বে ১৩ গুণ। মাত্র ছয়টি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে যাত্রা শুরু করা চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৮ সালে সর্বশেষ ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬টি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষম হয়েছে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ।

বন্দরে বর্তমানে ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে চলছে কন্টেইনার ওঠা-নামার কাজ। আরও চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযুক্ত হওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। লাইটারেজ জাহাজ থেকে নদীপথে পণ্য আনা-নেওয়ার কার্যক্রম সহজ করতে বন্দরের বহির্নোঙরে একটি ফ্লোটিং হারবার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্দরকে পরিবেশবান্ধব করতে গ্রিন পোর্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের ফলে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে গতি বেড়েছে। ফলে বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এসেছিল ৩ হাজার ৩৭০টি। ২০১৮ সালে এসেছিল ৩ হাজার ৭৪৭টি। ২০১৯ সালে তা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/27/1556384136066.jpg

চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বক্ষমতা বহুগুণে বেড়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বিশ্বের কয়েকটি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর হবে অন্যতম।’