পুলিশ কর্মকর্তা জহিরুলের মানবিকতায় বিয়ের পিঁড়িতে পপি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া চাকরি করেন পুলিশে। গত দশ বছর ধরে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসবে। নিষ্ঠা আর সততার সাথে দায়িত্ব পালন করায় হাসপাতালের সবাই তাকে এক নামে চেনেন। আজ তার মানবিকতায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান পপি।

জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের ডানে পুলিশ ফাঁড়িটি ছিল একটি ছাপড়া ঘর। সেখানে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এক মহিলা স্বামী নিয়ে বসবাস করতেন। তাদের সংসারে ছিল এক কন্যা সন্তান, নাম তার পপি। এক সময় ছাপড়া ঘর থেকে আধুনিক সুযোগ সুবিধায় পরিণত হয় পুলিশ ফাঁড়ি। ফলে সম্বলহীন হয়ে পরে পরিবারটি। তবে ছোট একটি তাবু ঘরে স্থান হয় তাদের। পপিকে দেখে মায়া অনুভব করেন জহিরুল। তখন থেকে সাধ্যমতো পরিবারের দেখভাল আর পপির দায়িত্ব নেন তিনি। পরে মাদ্রাসায় ভর্তি করান তাকে। নিজের মেয়ের মতো তার আবদার পূরণ করতেন।

বিজ্ঞাপন

সময়ের পরিক্রমায় ছোট পপির বয়স ১৯। বাবা বাবুল মিয়া পেশায় দিনমজুর। পরিবারের খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। ফলে পপির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেন জহিরুল। পরিকল্পনা করেন তাকে ‍নিজের হাতে বিয়ে দিবেন। যেই কথা, সেই কাজ। নেমে পড়েন পপির জন্য ছেলে খুঁজতে। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জসিম নামে এক ছেলের খোঁজ পান। জসিম পেশায় একজন কৃষক। উভয়ই দেখাশুনার পর তাকে পছন্দও করেন।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে পপি আর জসিমের বিয়ে হয়। পুলিশ ফাঁড়ির আঙিনায় সামিয়ানা টাঙিয়ে বিয়ের প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। আর ভেতরে চলে বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠানিকতা। হাসপাতাল আঙিনায় বিয়ের প্রস্তুতি দেখে সেবা নিতে আসা রোগীরা আর গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় শুরু হয়। উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। দুপুরে দুইটায় বর পক্ষের লাল ফিতা কাটার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বিয়েতে পপির পরনে ছিল বেনারসির শাড়ি।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/01/1556689394795.jpg

এরপর দুই লাখ টাকার কাবিন আর ৫০ হাজার টাকার উসলে বিয়ে পড়ান কাজী জাহেদুল ইসলাম। অতিথিদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকায় জহিরুলের ভূয়সী প্রশংসা করেন সবাই। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবদূত মজুমদার, পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া, চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাউয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু প্রমুখ।

এ সময় উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক সাংবাদিকদের জানান, পুলিশও মানুষ, জনগণের নেতিবাচক ধারণার মাঝে জহিরুলের এমন উদ্যোগ গোটা বাহিনীর সম্মানকে সমুন্নত করবে। হতদরিদ্র পরিবারটির প্রতি সবসময় আমাদের সহায়তার দৃষ্টি থাকবে।

এদিকে, মেয়ের বিয়ে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা বাবুল মিয়া। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিয়ের কোনো খরচ আমি দেইনি। জহির ভাই সবকিছুর আয়োজন করেছেন। আমারে শুধু বলছেন, মেয়ের জন্য দোয়া করতে। আমরা সারজীবন তার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো।’

জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়াকে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি পুলিশ সদস্য হিসেবে একটি মেয়েকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে তুলে দিয়েছি। আমি মনে করি, মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। আজ আমি খুবই খুশি। এ কাজে যারা আমাকে পরামর্শ এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ।’

অন্যদিকে, পপির বিয়েতে পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিজানুর রহমান মজুদার একটি সেলাই মেশিন উপহার দেন। এছাড়াও স্থানীয়রা নগদ টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন।