‘বাজেট জানলে আমগর কী লাভ?’



উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, ময়মনসিংহের একটি রেস্তোরাঁ থেকে তোলা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, ময়মনসিংহের একটি রেস্তোরাঁ থেকে তোলা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাজেট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে চারদিকে। চায়ের দোকানি থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষ কিংবা রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সবার মাঝেই রয়েছে বাজেট ভাবনা। বাজেট কেমন হয়েছে, কোন জিনিসের দাম বেড়েছে, কোন জিনিসের দাম কমেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে কিনা- কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এসব আলোচনা।

সরকারি দলের নেতারা বাজেটকে গণমুখী ও উন্নয়নের বাজেট হিসেবে আখ্যা দিলেও তরুণরা মনে করছেন, ‘স্মার্ট’ হিসেবে জাহির করা এ বাজেটে নতুনত্ব নেই খুব একটা। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের চেয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল গ্রহণযোগ্য একটি বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

তরুণদের মতে, সবচেয়ে ভালো দিক এ বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে না। মুহিত প্রতিবার যেখানে ভুল করতেন সেখানেই সংশোধন করেছেন লোটাস কামাল। তবে নির্জীব বিরোধীদল কোনো ছায়া বাজেট প্রস্তাব না করায় সমালোচনাও করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে ময়মনসিংহ নগরীর সি. কে. ঘোষ রোডস্থ সারিন্দা রেস্টুরেন্টে বসে বাজেট আলোচনা নিয়ে মুখর ছিলেন একদল তরুণ-যুবা। তাদেরই একজন জাহাঙ্গীনর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এহসানুল হক। বাজেট কেমন হয়েছে, জানতে চাইলেই সোজাসাপ্টা উত্তর দিলেন এ তরুণ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/14/1560504432076.jpg

এহসান বলেন, ‘গতানুগতিক বাজেট হয়েছে। নতুনত্ব নেই খুব একটা। তবে মুহিত সাহেবের চেয়ে কামাল সাহেবের বাজেট গ্রহণযোগ্যতা পাবে। দেশে উন্নয়নের জোয়ার না ঘটলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের উন্নয়ন ঘটবে। কারণ, এ বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বার্থ পুরোপুরি না হলেও বেশ রক্ষা করা হয়েছে।’

যদিও বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আদৌ পুরোপুরি অর্জিত হবে কি-না এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

এহসানুল হকের কথার সঙ্গে বিপরীত মত প্রকাশ করে স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক মিয়াদাদ হক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এ বাজেট গরিববান্ধব বলে মনে করি না। সবকিছুতেই করের পাল্লা ভারী করা হয়েছে। তবে একটি দিক ভালো, যেসব জিনিস আমাদের সব সময় লাগে, সেসব জিনিসের দাম বাড়েনি।’

অবশ্য চিনি আমদানির উপর কর বাড়ানোকে যৌক্তিক উল্লেখ করে এ শিক্ষক বলেন, ‘অতীতে দেশের কৃষকরা আখ চাষ করে লোকসান গুণেছেন। এবার চিনি আমদানির উপর কর বাড়ানোর ফলে কৃষক উপকৃত হবে। সাবেক অর্থমন্ত্রীর চেয়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী এ জায়গাতে নিজের বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।’

বাজেট নিয়ে আলোচনার সময়েই রুটি-নানের অর্ডার নিচ্ছিলেন রেস্টুরেন্টটির এক ওয়েটার। কাজ থামিয়ে ‘হা’ করে শুনছিলেন তাদের কথা। দৃষ্টি দিতেই হেসে উঠে এ ওয়েটার বললেন, ‘আমরা বাজেট বুঝি না। কোন রকম খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে চাই। আমরা চাই বাজেটে সাধারণ মানুষের কাজের সুযোগ সুবিধা বাড়বে। গরিবকে মূল্যায়ন করা হবে।’

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে রিকশায় চড়ে নগরীর গাঙ্গিনারপাড় মোড় থেকে সানকিপাড়ায় যাওয়ার পথে কথা হয় রিকশাচালক হাসমত মিয়ার সঙ্গে। ব্রক্ষপুত্র নদের ওপারের এ বাসিন্দার বাজেট নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এমনকি বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) যে ঘটা করে সংসদে বাজেট পেশ হয়েছে এ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন এ শ্রমজীবী।

তিনি বলেন, ‘সরকারের বাজেট জানি না। আমি জানি আমার সংসারের প্রতিদিনের বাজেট চাল-ডাল, তেল-নুন। এজন্য আমার দরকার প্রতিদিন ৪০০ টাকা। মালিককে আমদানি দেওয়া শেষে এ টাকা উঠলেই আমার কোনো চিন্তা নেই। সরকারের বাজেট নিয়া কথা কইলে বা জানলে আমগর আর কী লাভ অইবো?’

   

নির্দেশনা অমান্য করেই ঢাকামুখী শতাধিক চামড়াবাহী ট্রাক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেই রাজধানীর অভিমুখে ছুটছে পশুর চামড়াবাহী ট্রাক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি টোলপ্লাজায় এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ট্রাক ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

সোমবার (১৭ জুন) বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, সাভারের চামড়াশিল্প নগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) পরিশোধন ক্ষমতার মধ্যে সীমিত রাখতে কোরবানির পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে কোরবানির পশুর চামড়া ঢাকার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

তবে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, তাদের অনেকে সরকারি নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ব্যবসায়ীরাও তাদের কিছু জানায়নি।

বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ঈদ পরবর্তী ১০ দিন ঢাকার বাইরের পশুর কাঁচা চামড়া ঢাকায় ঢুকতে না দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের টিম কাজ করছে। এক্ষেত্রে নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই।

;

আশা দেখাচ্ছে চামড়ার দাম, দেখা নেই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আজহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে খামারি ও সাধারণ কৃষক নিজেদের পোষা গরু-ছাগল বিক্রি করে কিছু লাভের মুখ দেখেন। তেমনি এ সকল পশুর চামড়াকে কেন্দ্র দেশে গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম বড় চামড়া বাজার। কিন্তু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে গত কয়েক বছর চামড়া নিয়ে কেঁদেছেন শতশত মৌসুমি ব্যবসায়ী। এবার চামড়া কেনা নিয়ে সেই চেনা দৃশ্যের দেখা মেলেনি। স্থানীয় তরুণদের চামড়া কেনার তোড়জোড়ও চোখে পড়েনি।

তবে টানা কয়েক বছর ধরে চলা চামড়ার বাজারের আক্ষেপ এবার এসে কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে।

সোমবার ঈদের দিন বিকেলে রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে এসে ফিরছেন হাসিমুখে। তাদের একজন মো. আমির হোসেন।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. আমির হোসেন এক ট্রাক চামড়া নিয়ে এসেছেন পোস্তায়। এবার গরুর চামড়া বিক্রি করে হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়নি।

চামড়ার দাম কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে আমির বলেন, দাম ঠিক আছে। ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিতাছে। সাইজ যেইটা ভালো, সেটা আর একটি বেশি দিতাছে।

আমির হোসেন ছাড়াও বেশ কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ীকে গরুর চামড়া বিক্রি করে প্রত্যাশিত দাম পেতে দেখা গেছে।

এদিকে আড়ৎদারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসা থেকেই আসছে বেশিরভাগ চামড়া। পোস্তায় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চামড়াবাহী ট্রাকের বেশির ভাগই বিভিন্ন এলাকার মসজিদ মাদ্রাসার। হাতেগোনা কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী এসেছেন।

চামড়ার আকার ও অবস্থা দেখে দাম নির্ধারণ করছেন আড়ৎদাররা। সেক্ষেত্রে ছোট আকার ও কাটাছেঁড়া চামড়া কেনা হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় কেনা হচ্ছে মাঝারি আকারের চামড়া। বড় আকারের চামড়া কিনতে আড়ৎদাররা ৯০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত গুনছেন।

আড়ৎদার ও বিক্রেতাদের ভাষ্য মতে, এই দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি।

প্রসঙ্গত, এবার সরকারিভাবেও চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে। লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

;

ঈদের দিন সড়কে প্রাণ ঝরল চাচা-ভাতিজার



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (গৌরীপুর) ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী চাচা-ভাতিজা নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার ধামদী গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে রনি মিয়া (১৭) ও আবুল হাসেমের ছেলে আশিক (১৬)। নিহতরা সম্পর্কে প্রতিবেশী চাচা-ভাতিজা।

সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে ঈশ্বরগঞ্জ -নেত্রকোনা আঞ্চলিক সড়কের উপজেলার পাইভাকুরি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে রনি ও আশিক মোটরসাইকেল যোগে পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার তেলিহাটি গ্রামে যাচ্ছিলেন বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য। পথিমধ্যে পাইভাকুরি এলাকায় আসতেই মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি রাইস মিলের দেয়ালে ধাক্কা খায়। এসময় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে দুজনে গুরুতর আহত হয়।

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত রনিকে ঘোষণা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আশিককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, পরিবারের অভিযোগ না থাকায় দুজনের মরদেহ দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে।

;

বন্যা বিপর্যস্ত সিলেট, পরিত্রাণ কোথায়?



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত মহানগরীর তালিকায় নাম যুক্ত হয়েছে সিলেটের। এই তিনটি শহরই বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরও এই তিন শহরে অবস্থিত। বৃষ্টিতে শহর তিনটির লবেজান পরিস্থিতি দেশের আর্বান গভার্নেন্সের করুণ চিত্র তুলে ধরে।

নগর ব্যবস্থাপনা বা আর্বান গভার্নেন্সের ক্ষেত্রে আমরা কত পিছনে রয়েছি, তা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়। বায়ু দুষণে, অপরিকল্পিত নির্মাণে, যানজট ও জলাবদ্ধতায় প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত শহরগুলো। অল্প বৃষ্টি বা ঢলে তলিয়ে যায় শহর। পথঘাটে কোমর পানি জমে। বাড়িঘরও সয়লাব হয়ে যায় পানিতে। ড্রেন আর রাস্তা একাকার হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষের মৃত্যুও ঘটে। আহত হয় বহুজন।


ঢাকা ও চট্টগ্রামের চেয়ে সিলেটের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সিলেট মহানগরী পরিবেষ্টিত হাওয়াঞ্চল দ্বারা। তদুপরি সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানির তোড় বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আঘাত হানে সিলেটে। অসংখ্য হাওর ও নদী থাকায় পানির প্রবাহ অচিরেই আরো নিচে নেমে সাগরের দিকে চলে যাওয়ার কথা। অতীতে সিলেটের বন্যার পানি খুব তাড়াতাড়িই নেমে গিয়েছে। এখন তা হচ্ছে না। পানি ফুঁসে তলিয়ে দিচ্ছে সিলেট নগর। নদীগুলো ভরাট ও দখল হওয়ায় এবং হাওরের নানা স্থানে, বিশেষত কিশোরগঞ্জ প্রান্তে নানা স্থাপনার কারণে পানি নেমে যেতে পারছে না। আক্রান্ত ও বিপর্যস্ত হচ্ছে মহানগরসহ বৃহত্তর সিলেট।

বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট দুর্যোগের ঘনঘটা সিলেটে নিয়মিত বিপদের কারণে পরিণত হয়েছে। একের পর এক দুর্যোগে কাবু হচ্ছে সিলেট মহানগরী ও আশেপাশের বিশাল জনপদের লক্ষ লক্ষ মানুষ। এক মাসের মধ্যে ফের দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে নগরটিতে। এমন অবস্থায় শহরের লাখো মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। বন্যার কারণে অনেকেই প্রথম দিনে কোরবানি দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরের নিম্নাঞ্চলও। খোদ নগরেই হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নগরের উপশহর, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে।


বিপদজনক পরিস্থিতির এখানেই শেষ নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি এবার স্থায়ী রূপ নিতে পারে। সংস্থাটি বলছে, ঈদের দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৩টি নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সিলেটের সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসব উপজেলার ৫১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের সব উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে শনিবার থেকে মানুষজন উঠতে শুরু করেছেন।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার (১৭ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরে সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে আরো ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। বেলা ১টার পর নগরে বৃষ্টিপাত কমলেও জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে উঠে এসেছে। উজান থেকে নামছে ঢলও। এরই সাথে বজ্র-বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেটের ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ এলাকায় কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। অথচ প্রতি ঈদের জামায়াতে ঈদগাহে লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে জামায়াত আদায় করতে দেখা যায়। এই ঈদে নিজ এলাকার মসজিদে মুসল্লিরা জামায়াত আদায় করেন।

জলাবদ্ধতায় ঈদের আনন্দ কষ্টে পরিণত হওয়া ছাড়াও সিলেট তথা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অপেক্ষা করছে বন্যার বিপদ। বৃহত্তর সিলেট ও সন্নিহিত নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে জনজীবনের দুর্ভোগ ছাড়াও ফসল এবং মৎস্য সম্পদের বিরাট ক্ষতি হতে পারে। উল্লেখ্য, দেশের খাদ্য-শস্য ও মিঠা পানির মাছের সবচেয়ে বড় সরবরাহস্থল হলো হাওর। ফলে সিলেটের বন্যার প্রভাব আশেপাশে ছড়িয়ে গেলে দেশের কৃষি অর্থনীতি বড় ধরনের চাপের সম্মুখীন হবে। এ কারণেই সিলেট বন্যা কেবল সিলেটই নয়, সারা দেশের জন্যেই চিন্তার কারণ।

সিলেটকে বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে নগর পরিকল্পনাবিদগণ কেমন পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। যদি স্পষ্ট হতো, তাহলে প্রতি বছর বৃষ্টি ও ঢলে সিলেট শহর তলিয়ে যেতো না। সিলেটে জলাবদ্ধতা ও পানিবন্দিত্বের দুঃসহ জীবন দিনে দিনে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হচ্ছে বলেই মনে হয়। যেমনভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রতিকারহীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশের তিনিটি শীর্ষতম প্রধান শহরের যদি প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এতো ভঙ্গুর ও নাজুক হয়, তাহলে টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং নাগরিক জীবনের সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। ফলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে।


পরিত্রাণের উদ্যোগ হিসাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেটের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তথা সিটি করপোরেশনের প্রতি তাকিয়ে থাকলেই চলবে না। এসব প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও সামর্থ্য বাড়ানোর দিকেও মনোযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে প্রধান শহরগুলোর জন্য জাতীয় ভিত্তিক পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এতে বাংলাদেশের নগর ব্যবস্থাপনা বা আর্বান গভার্নেন্সের মান বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাকৃতিক বিপদে টিকে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে নাগরিক নিরাপত্তা প্রসারিত হবে।

সিলেটের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নগর সুরক্ষার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণগুলোকে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী ও হাওরগুলোকে ভরাট ও দখল হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে সেগুলো খনন করে জল প্রবাহের ব্যবস্থা বাড়িয়ে জলাবদ্ধতা ঠেকাতে হবে। বিশেষ করে, সিলেট ও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরগুলোর ব্যাপারে সরকারের কঠোর ভূমিকা নিতেই হবে। হাওরগুলো ভরাট হলে, আবর্জনা ও বর্জ্য দিয়ে ভরিয়ে ফেললে এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ ব্যাহত হলে উজানের সিলেট ও আশোপাশে বন্যার পানি জমে জলাবদ্ধতা হবেই। তাই সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত ও দূরীভূত করতে হবে।

বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর রয়েছে যে তিনটি শহরে, সেখানে জলাবদ্ধতায় স্বাভাবিক জীবন স্তব্ধ হলে জাতীয় উন্নয়নের গতিও থেমে থাকবে। ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তৈরি হওয়াও কষ্টকর হবে প্রধান শহরগুলোর বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কারণে। এই সত্য যত তাড়াতাড়ি নীতি নির্ধারকগণ উপলব্ধি করতে পারবেন, তত তাড়াতাড়িই সমস্যার সমাধান হবে এবং জনদুর্ভোগের অবসান ঘটবে।

ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; চেয়ারম্যান ও প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;