মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ
'আমার বাপের শরীলডা তিন ভাগ হয়া গেছে'
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ কইরা বাপের পিছে পিছে আমার রুবেল (১১) ঘর থেকে বাহিরে যায় বেলুন কিনতে। রুবেলের বাপের কাছে টাকা না থাকায় বলে, বাপ তুমি ঘরে যাও, আমি সন্ধ্যার সময় তোমার জন্য বেলুম লইয়া আমু। এই কথা বলে রুবেলের বাপে চইলা যায় রিকশা চালাইত।
রুবেল ঘরে না আইসা ওই বেলুন উলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়ছে বেলুন দেখতে। কিছুক্ষণ পরে ভয়ংকর শব্দ। আর আমি কাছে গিয়া দেখি আমার বাপের শরীরের সামনের দিকটা এদিকে আর নিচের দিকটা ভাগ হয়ে আরেক দিকে পইড়া রইছে। আর ডাইন হাতটা দূরে গিয়া পইড়া রইছে। এটা দেখে আমি অজ্ঞান হইয়া পইড়া যাই। আমি আর কিছু কইতে পারবো না।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বোনের ছেলে রুবেলকে রূপনগরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় হারিয়ে এভাবেই মাতম করছেন করিম জান বেগম।
করিম জান বেগম বলেন, রুবেল যখন ঘর থিকা বেলুন দেইখ্যা বের হয়, আমিও তখন বাইর হয়ছিলাম। আমার জামাই ডাকছিল বাজার নিতে। বাজার নিয়া যখন ঘরে ফিরতে ছিলাম তখন হঠাৎ করেই শব্দ শুনলাম। গিয়া দেখি কয়েকটা বাচ্চা মাটিতে পইড়া রইছে। দেহি তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাংস পড়ে গেছে।
তখন আমি আমার জামাইরে কইতেছিলাম এই বাচ্চাগুলোরা মা-বাপ কই। তখন আমার জামাই আমারে কইল রুবেল কই দেহ। রুবেল এহানে ছিল, তুমি দেহ রুবেল কই।
তখন আমি যা দেখলাম নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি নাই। গিয়া দেখি আমার বাপের শরীরটা তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। শরীরের সামনের দিকটা চইলা গেছে একদিকে, নিচের দিকটা চইলা গেছে আরেকদিকে আর ডাইন হাতটা উড়িয়া গিয়া দূরে পইরা রইছে।
রুবেলরে আমার বোইনে পালে নাই। গত ১১ বছর ধইরা রুবেলরে আমার বুকে রাইখা পালছি। আমার বাপে যে এভাবে যাইবোগা বিশ্বাসই করতে পারতাছি না।
করিম জানান বেগম আরও জানান, তার ছোট বোন পারভীনের চার ছেলে সন্তান ছিল। এর মধ্যে জিহাদ নামে একটি সন্তান গত বছরের জানুয়ারি মাসে মারা যায়। আর আজকে তার সন্তানদের মধ্যে সবার বড় রুবেল মারা যায়। রুবেলের বাবা নুর ইসলাম রিকশা চালক।
এদিকে বোনের ছেলে হারানোর ব্যাথায় করিম জান বেগম মাতম করলেও নির্বিকার অবস্থায় বসে রয়েছেন রুবেলের মা পারভিন। পর পর দুই সন্তানকে হারিয়ে তিনি যেন বোবা হয়ে গেছেন। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না চুপ করে বসে রয়েছেন আর শুধু চোখ দিয়ে পানি ফেলছেন।
একইদিন বুধবার বিকেল পৌনে ৪টায় রূপনগর আবাসিক এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, রূপনগরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ শিশু, ২ জন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছে।
আরও পড়ুন: মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৬ শিশুর মৃত্যু