নতুন আইনে শৃঙ্খলা ফিরছে সড়কে

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নতুন আইনে শৃঙ্খলা ফিরছে সড়কে, ছবি: সুমন শেখ

নতুন আইনে শৃঙ্খলা ফিরছে সড়কে, ছবি: সুমন শেখ

সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। নতুন আইনের প্রায় সব ধারায় বাড়ানো হয়েছে চালক ও পথচারীদের জেল-জরিমানার পরিমাণ।

এদিকে, আইনটি কার্যকরের পর থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। বাড়তি জরিমানার ফলে চালকরাও নিয়ম মেনে সড়কে চলাচল করছেন। দৃশ্যপটও অনেকটা পাল্টেছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর গুলিস্তান, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, সাতরাস্তা মোড়সহ বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে এলোমেলোভাবে চলাচল করা গাড়িগুলো ট্রাফিক সিগনাল মেনে নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করছে। প্রধান সড়কগুলোতে আগের মতো কোনো যানবাহন জেব্রা ক্রসিংয়ের সীমানা অতিক্রম করছে না। চালকরাও অনেকটা সচেতনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। আর ট্রাফিক পুলিশ-সার্জেন্টরা এখন ব্যস্ত সচেতনতামূলক প্রচারণায়। সিগনাল পড়লেই সেখানে সার্জেন্টরা চালকদের নতুন আইন সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। আহ্বান জানাচ্ছেন আইন মেনে চলার।

নতুন আইন সম্পর্কে চালককে ধারণা দেওয়া হচ্ছে, ছবি: সুমন শেখ

রাজধানীর কাজলা ফ্লাইওভারে প্রতিদিন যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়ালেও আজকের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। কেউ নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে গাড়ি থামালে ট্রাফিক সার্জেন্টরা তাদের নতুন আইনের শাস্তির বিষয়টি অবহিত করছেন। যাত্রীদেরও জানাচ্ছেন নতুন আইনের শাস্তির বিষয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: রাইড শেয়ারিং বন্ধের উড়ো খবরে আতঙ্কে চালকরা

এ বিষয়ে দায়িত্বরত ডেমরা জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট আল মামুন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা এখন সবাইকে সচেতন করছি। কারণ, নতুন আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন না করে প্রয়োগ করলে অনেকটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমরা এখন প্রচারণা করে যাচ্ছি। চালকরাও কিন্তু আমাদের প্রচারণায় আইন মানার বিষয়ে একমত পোষণ করছেন। আশা করছি আইনটি কার্যকর হলে সড়কে অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে এখন অনেকেই অতিরিক্ত জরিমানার বিষয়টি মাথায় রেখেই গাড়ি চালাচ্ছেন।’

গুলিস্তানে রজনীগন্ধা পরিবহনের বাস চালক শামসুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নতুন আইন যেহেতু হইছে আমরাও তা মেনে চলব। কিন্তু সবসময় চালকদের দোষী করা হয়, এটি কিন্তু সঠিক না। কারণ, রাস্তায় যে দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে যাত্রী এবং পথচারীদেরও দোষ আছে। অনেক সময় মানুষ হুট করেই দৌড়ে রাস্তা পার হয়। তখন আমাদেরও গাড়ি ব্রেক করতে সমস্যায় পড়তে হয়। সুতরাং সবারই আইন মানতে হবে।’

সিগনালে গাড়ি থামানোর জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ, ছবি: সুমন শেখ

ধানমন্ডিগামী যাত্রী আজিজুল হাকিম বলেন, ‘নতুন যে আইন হয়েছে, সেটা খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শুধু আইন করলেই হবে না, প্রয়োগ করতে হবে। সবাই সচেতন হলে কিন্তু আর সমস্যা থাকবে না। আইনের বাইরেও সরকারসহ সবাইকে যথযথ পরিকল্পনা করতে হবে। গাড়ি কোথায় থামবে, কোথায় থামবে না সেটাও নির্ধারণ করে দিতে হবে। সরকার যদি সেই শৃঙ্খলা আনতে পারে, আমরাও কিন্তু সেভাবেই মেনে চলব।’

আরও পড়ুন: নতুন আইন কার্যকর হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ট্রাফিক সার্জেন্টরা

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সার্জেন্ট আব্দুল জলিল ও আসাদুজ্জামান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘নতুন আইন কার্যকরে আমরাও যথযাথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে এখন আমরা সচেতনতায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এখন কয়েকদিন যাবত মামলা দেওয়া বন্ধ আছে। আরও কয়েকদিন বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি।’

নতুন আইনের পর ট্রাফিক সিগনাল মেনে নির্দিষ্ট জায়গায় থামছে গাড়িগুলো, ছবি: সুমন শেখ

উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সে বছরই সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন। কার্যকর হওয়া নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে দোষী চালকের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে তা আদালতে উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে প্রমাণিত হতে হবে। নতুন আইনে ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহারকারী, লাইসেন্স ছাড়া, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো কিংবা যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের অপরাধে চালক, হেলপার, মালিক ও পথচারীকে বিভিন্ন মেয়াদে জেলের পাশাপাশি জরিমানা গুনতে হবে ৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। সব অপরাধই নতুন আইনে অজামিনযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।