‘সাজা’ আতঙ্কে বিআরটিএ-তে উপচেপড়া ভিড়
নতুন সড়ক পরিবহন আইন চালু হয়েছে। নতুন আইনে এখনও মামলা দেওয়া শুরু করেনি ট্রাফিক পুলিশ। তবে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হতেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে উপচেপড়া ভিড় জমেছে। সেখানে লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদের আবেদনের ধুম পড়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন সড়ক আইন কার্যকর হতেই ভিড় বেড়েছে। গত দুই দিনে লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বৈধ ডকুমেন্ট তৈরির আবেদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
মিরপুরে বিআরটিএ সার্কেল-১ কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ি আর লোকজনের সমাগমে দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। বিআরটিএ অফিসের প্রবেশ মুখে এক মিনিটের জন্যও যানজট কমেনি। দায়িত্বরত আনসার বাহিনীর সদস্যরা যানজট দূর করতে হিমশিম খাচ্ছেন। গাড়ি আর মানুষের বাড়তি চাপে কার্যালয়ের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সার্টিফিকেট আর মালিকানা পরিবর্তনের আবদেন নিয়ে কেউ কেউ এসেছেন জন্য। আবার কেউ এসেছেন ডিজিটাল নম্বর প্লেট ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ এসেছেন লার্নার কার্ডের জন্য। সোমবার সকাল থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ সারছেন আগতরা। হঠাৎ বাড়তি লোকের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা।
নতুন আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চালানোর শাস্তি অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আর ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়ি চালানোর অপরাধে শাস্তি ৬ মাস থেকে ২ বছরের জেল বা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
ধানমণ্ডি থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা মোতাহার হোসেন বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের সরকারি ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ছয়-সাত মাস সময় লাগবে। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে রাস্তায় চলা যাবে না। তাহলে আমরা যারা নতুন বাইক বা গাড়ি কিনেছি তাদেরও কেন ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে?
তিনি বলেন, আগে উচিৎ ছিল লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটা সহজ করা। তা না করে অহেতুক মানুষকে বিপদে ফেলা হচ্ছে।
ফার্মগেট থেকে গাড়ির লাইসেন্স নবায়ন করতে এসেছেন ইমরান হাসান। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, সকাল ১০টায় এখানকার ব্যাংকে নবায়ন ফি জমা দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন দুপুর হয়ে গেছে, এখনও টাকা জমা দিতে পারিনি। এখানে যে এত লম্বা লাইন হয় জানা ছিল না।
জানতে চাইলে বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (লাইসেন্স) মোহাম্মদ আলী আহমেদ মিলন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, গত দুই দিনে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রায় ৫শ’র মতো আবেদন জমা পড়েছে। স্বাভাবিক দিনগুলোতে এত আবেদন জমা পড়ে না। নতুন সড়ক আইন কার্যকর হওয়ার পরের দুই কার্যদিবসে বিআরটিএ-তে অস্বাভাবিক ভিড় বেড়েছে। শুধু লাইসেন্স-সংক্রান্ত কার্যক্রমই বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে একইরকম ভিড় দেখা গেছে ট্রাফিক পশ্চিক বিভাগের কার্যালয়েও। সেখানে আগতরা মূলত পূর্বের মামলা ভাঙাতেই এসেছেন। পূর্বের মামলা না ভাঙালে সেই মামলার ওপরে নতুন সড়ক আইনে ফের কঠোর মামলার গ্যাড়াকলে পড়তে পারেন—এই ভয়েই পশ্চিম বিভাগের কার্যালয়ে ভিড় করেছেন চালকরা।