বাদী-বিবাদীর গল্পেই রহস্যের চাবি
একের পর এক ‘ক্লু-লেস’ মামলার রহস্য উন্মোচন করে চলেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অপরাধ সংঘটনের তথ্য-প্রমাণ ও সূত্রহীন এসব মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ার সাফল্যের মূল রহস্য লুকিয়ে থাকে বাদী-বিবাদীর গল্পে। বাদী-বিবাদী কিংবা তৃতীয় পক্ষের কোন ব্যক্তির গল্প শুনেই বোঝা যায় রহস্য উদঘাটনে কোন পথে হাঁটতে হবে।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া ও কর্মকৌশল নিয়ে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান সংস্থাটির প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি প্রতিটি মামলার ভেতরে ঢুকতে। যেহেতু আমাদের তেমন একটা ডিউটি করতে হয় না তাই আমরা পুরোটা সময় তদন্তের মধ্যেই থাকি। তবে আমাদের বিশেষত্ব হলো, আমরা তদন্তকালে মামলার বাদী পক্ষ, আসামিপক্ষ এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট তৃতীয় পক্ষের প্রতিটা লোকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। তারা যা বলেন সবকিছুই আমরা গ্রহণ করি। আর সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেই আমাদের তদন্ত কোন দিক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাব।
পিবিআই প্রধান বলেন, তবে রহস্য উন্মোচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটা হয়—আসামিই সত্যটা বলে দেন। অবশ্য তদন্তের শুরুতে আসামি/আসামিরা নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তখন আমরা উল্টো প্রশ্ন করি, আপনি কী কারণে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন? কেনই বা আমরা বিশ্বাস করব আপনি নির্দোষ? তখন অভিযুক্তরা আমাদের কতগুলো কারণ জানান। সেই কারণগুলো খুঁজতে থাকি আমরা। তখন তদন্তে তার কথা সত্য না মিথ্যা জেনে ফেলি। মামলার রহস্য উদঘাটন হয়। এতে কখনো অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী প্রমাণিত হন, কখনো নির্দোষ প্রমাণিত হন। আবার অনেক ক্ষেত্রে নতুন কোন তথ্য পাই।
বনজ কুমার মজুমদার আরও বলেন, এমনও হয়েছে খুনের মামলায় চার্জশিট দিয়েছে থানা পুলিশ। আসামিরা ২/৩ বছর পর কারাগার থেকে বের হয়ে পিবিআইয়ের কাছে এসেছেন। আমি আশ্বাস দিয়েছি অধিকতর তদন্ত সঠিক হবে। নিরাপরাধ হলে মুক্তি পাবেন। তখন তারা আমাদের বিভিন্ন পয়েন্ট দেখিয়ে দিতেন। এরপর মামলার আসল রহস্যে প্রবেশ করতে পারতাম। পরে ঠিকই দেখা গেছে—তারা নির্দোষ ছিলেন, প্রকৃত আসামি ছিলেন অন্য মানুষ।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, এমন একটা হত্যা মামলার সত্য উদঘাটন করতে পারলে আমাদের মধ্য হৈ-হুল্লোড় লেগে যায়। তখন ওই নির্দোষ মানুষগুলোই আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ান।
সত্য জানার প্রধান শর্ত মনোযোগ দিয়ে গল্প শোনা—এমন মন্তব্য করে পিবিআই প্রধান বলেন, আমাদের মূল কৌশল হচ্ছে তদন্ত। আর তদন্তের মূল শর্ত হলো—মনোযোগ দিয়ে গল্প শোনা। আমরা ভিজিটরকে খুব প্রাধান্য দেই। তিনি আসামি কিংবা বাদী যেই হোক। ভুল তথ্য দিক, মিথ্যা তথ্য দিক—আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি। তারপর আর আমাদের অন্য দিকে তাকাতে হয় না।
তদন্ত চালাকালে পিবিআইকে কোন প্রতিবন্ধকতা কিংবা সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করতে হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ২০১৬ সালে আমরা যখন তদন্ত শুরু করেছি, শুরু থেকেই তদন্তের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি। যদি আমাদের কাজের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয় সেটা আইজিপি স্যার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমাধান করে দেন।
আরও পড়ুন: শেষ ভরসা পিবিআই