রংপুরে টার্কি খামারিদের ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
রংপুরে অক্টালিংক এগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ছয় পরিচালকের বিরুদ্ধে আট কোটি টাকার অধিক আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। টার্কি মুরগির খামারিদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ও বেকার পুনর্বাসনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় আট কোটি টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় নিজ চেম্বারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ করেছেন অক্টালিংক এগ্রো লিমিটেড কোম্পানির পরিচালক ডা. সৈয়দ আবু তালেব ও সাবেক চেয়ারম্যান মওদুদা আখতার।
গা ঢাকা দেওয়া ছয় পরিচালকের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আনতে ১৮ নভেম্বর রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা হয়েছে বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে ডা. সৈয়দ আবু তালেব বলেন, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর আমার গ্রামের বাড়ি মিঠাপুকুর এলাকার শাকিল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ইসমাইল হোসেন শাওনের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে শাওন বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে স্থানীয় খামারিদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলাসহ এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, গত বছরের ৩ এপ্রিল জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হতে অক্টালিংক এগ্রো লিমিটেড নামে এই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়। ওই সময়ে আমার স্ত্রী মওদুদা আখতারকে চেয়ারম্যান, ইসমাইল হোসেন শাওন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তাকে সহ আরও ছয় জনকে পরিচালক করা হয়। ব্যক্তিগত কারণে চলতি বছরের ২৫ জুন কোম্পানির চেয়ারম্যান পদ থেকে মওদুদা আখতার পদত্যাগ করেন।
অক্টালিংক এগ্রো লিমিটেডের এই পরিচালকের অভিযোগ, কোম্পানির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাওন ও বাকি পরিচালকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। এমনকি গ্রাহকদেরকে যুক্ত স্বাক্ষরে চেক দেওয়ার নিয়ম থাকলেও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শুধুমাত্র কোম্পানির চেয়ারম্যানের একক স্বাক্ষর করা চেক সরবরাহ করে।
কোম্পানির কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে কোম্পানির আয়-ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য সকল পরিচালককে নিয়ে সভা আহ্বান করতে বলা হলেও কেউ কোনো সাড়া না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। চার্টার্ড একাউন্টিং ফার্মের মাধ্যমে হিসাব সম্পন্ন করার জন্য তাগাদা দেয়া হলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন শাওন, পরিচালক আরমানুল হক, শফিকুল ইসলাম, ফিরোজ কবির, আবুল কালাম আজাদ ও তাজুল ইসলাম কোনো কিছু না জানিয়ে গ্রাহকের ৮ কোটি টাকার অধিক পাওনা রেখে গা ঢাকা দেয়।
কোম্পানির পরিচালক হিসেবে এই ঘটনায় নিজের ব্যর্থতা ও দায়ভার এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ডা. সৈয়দ আবু তালেব বলেন, ‘গা ঢাকা দেওয়া পরিচালকদের একজন ছাড়া বাকিরা সবাই দিনাজপুর, নওগাঁ ও গাইবান্ধা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। এদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য খামারিদের দরকার। আমি এবং আমার স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক হিসাবে যতোটুকু দায়ভার বর্তায় তা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকব।
এদিকে ডা. সৈয়দ আবু তালেবের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন আরেক পরিচালক ফিরোজ কবির। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে। একারণে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে খামারিদের সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কোম্পানিতে চেয়ারম্যান মওদুদা আখতার ও তার স্বামী পরিচালক সৈয়দ আবু তালেবের ৪০ ভাগ শেয়ার রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলার মানে তারা নিজেরা যে অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তা আড়াল করতে পায়তারা করছে। তবে অফিস কার্যক্রম বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।’
অন্যদিকে মিঠাপুকুরের টার্কি মুরগি খামারের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কম-কে জানান, অক্টালিংক এগ্রো লিমিটেড ঝুঁকিবিহীন চুক্তি ভিত্তিক টার্কি খামার ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন ২৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকার প্যাকেজে সহস্রাধিক খামারির কাছ থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা নিয়ে খামার পরিচালনা করেন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ৯০ থেকে ৯৯ দিন পূর্ণ হলে অর্থ পরিশোধের কথা বলা হলেও তারা খামারিদের টাকা পরিশোধ করছে না।