ধ্বংসপ্রায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবন

  • ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবন/ ছবি: বার্তা২৪.কম

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবন/ ছবি: বার্তা২৪.কম

ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ রংপুর অঞ্চলের প্রাচীনতম ভবনগুলোর একটি রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবন। আনুমানিক ১৬৫ বছর আগে এ ভবনটি নির্মিত হয়েছে। কালের বিবর্তনে বহু স্মৃতিবিজড়িত রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি এখন সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

শতবর্ষী পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। রীতিমতো হুমকির মুখে। তারপরও এই পুরনো ভবনেই হয় নানা আয়োজন। বিভিন্ন সংগঠন প্রায়ই সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান আয়োজন করছে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে এই ভবনের পেছনেই নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক শিল্পকলা একাডেমি ভবন। এর পাশে রংপুর টাউন হল। রয়েছে বিভাগীয় সরকারি গ্রন্থাগার। তবে শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবনের আড়ালে পরে গেছে পাবলিক লাইব্রেরি ভবন। অথচ এই পাবলিক লাইব্রেরি ভবনেরই একটি অংশে রয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সাহিত্য চর্চার বাতিঘর হিসাবে খ্যাত ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ’ কার্যালয়।

১৮৯৩ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ এর কলকাতার বাইরে প্রথম শাখা হিসাবে ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ’। ভারতীয় উপমহাদেশের সাহিত্য চর্চায় ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ’ গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী।

বিজ্ঞাপন
রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ ভবন/ছবি: বার্তা২৪.কম

বিভিন্ন সময়ে জমিদার ও রাজাদের আগ্রহে ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ’ নিজস্ব কার্যালয় ‘মহিমা রঞ্জন সারস্বত ভবন’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ১৯১৩-১৯১৪ সালে নির্মাণ কাজ শেষ। প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ৭৫ হাজার টাকা।

ইংরেজ আইসিএস অফিসার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রস্তাবে মহিমা রঞ্জন স্মৃতি ভবনের নাম পরিবর্তন করে এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল করা হয়। পরে সাহিত্য পরিষদের কার্যালয়ের পরিবর্তে রঙ্গপুর পাবলিক লাইব্রেরির কার্যালয় হিসাবে ঘোষিত হয়। ১৯১৪ সালের জানুয়ারি মাসে সাহিত্য পরিষদ এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলের একটি অংশে স্থানান্তরিত হয়।

১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি রংপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর অথবা টাউন হল চত্বর নতুবা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ- এই তিন নামের খোঁজ মানেই পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি এক নজর দেখার সুযোগ। জরাজীর্ণ এ ভবনের কাছে গেলে চোখে ভাসবে পুরনো স্থাপনা সংরক্ষণের উদাসীনতার চিত্র। করুণ দশা বলে দেয় ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা পাবলিক লাইব্রেরি ভবনের সংরক্ষণ কতটা জরুরি। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের নীরব কালক্ষেপণই প্রমাণ করে এটি ধ্বংসের অপেক্ষায়।

সচেতন মহলের দাবি, এই পুরাতন স্থাপনাটি না ভেঙে সংস্কার করা হোক। এতে নতুন প্রজন্ম ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের গৌরবময় ইতিহাসও জানতে পারবে।

ধ্বংসপ্রায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবন/ ছবি: বার্তা২৪.কম

এ ব্যাপারে বার্তা২৪.কম-কে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ এর কার্যকরী সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রাচীন এ স্থাপনাটি। কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এ ধরনের স্থাপনাগুলো যুগের পর যুগ ধরে সংরক্ষণ করা হয়। আর আমাদের দেশে তা না করে উল্টো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। যার প্রমাণ এই পাবলিক লাইব্রেরী ভবনটি। দেড়শ বছরের পুরনো এই ভবনের সংস্কার ও সংরক্ষণ জরুরি।’

অন্যদিকে শিক্ষাবিদ ও সংগঠক অধ্যাপক মলয় কিশোর ভট্টাচার্য বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘দিন যতই যাচ্ছে, ততই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। তারপরও সংস্কারের উদ্যোগ নেই। স্থাপনাটি সংরক্ষণে কোন পরিকল্পনা না থাকা খুবই দুঃখজনক। আমাদের অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুরনো এ স্থাপনা না ভেঙে সংস্কার করা দরকার। এতে আগামী প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে।’