আজ হানাদার মুক্ত হয় বৃহত্তর লাকসাম
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল কুমিল্লা। তবে তখনো মুক্তির স্বাদ পাননি জেলার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর লাকসামের মুক্তিযোদ্ধারা। যদিও এরপর খুব বেশি সময় লাগেনি তাঁদের। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরেই প্রাণ দিয়ে লড়াই করে কুমিল্লা জেলার বৃহত্তর লাকসাম অঞ্চলকে হানাদার মুক্ত করেছিলেন ৭১ এর রণাঙ্গনের বীর সেনারা। আজ বুধবার সেই ঐতিহাসিক ১১ ডিসেম্বর।
জানা গেছে, বতর্মানে কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা নিয়ে ছিলো বৃহত্তর লাকসামের ভৌগলিক অবস্থান। ১৯৭১ এর এই দিনে লাকসাম হাইস্কুল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির আহমেদ ভূঁইয়া সর্ব প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে এ দিনে পাক হানাদার বাহিনী লাকসাম থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো। এদিকে, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা মুক্ত দিবসটিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও ব্যাপক কর্মসূচী পালন করবেন বলে জানা গেছে। এতে যুদ্ধকালীন কমান্ডাররা স্মৃতিচারণ করবেন বলেও জানা যায়।
লাকসাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুল বারী মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা প্রথমে লাকসাম জংশন ও দৌলতগঞ্জ বাজার দখলে নিয়ে লাকসাম সিগারেট ফ্যাক্টরিতে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে।
উক্ত ক্যাম্প থেকেই চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনীসহ অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতো তারা। ৮ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর বিভিন্ন কমান্ড লাকসামে অবস্থানরত পাক হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তীতে মিত্র বাহিনী লাকসাম জংশন ও সিগারেট ফ্যাক্টরীসহ বিভিন্ন অবস্থানের উপর বিমান হামলা চালিয়ে পাকী সেনাদের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। দুই দিন ধরে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাক বাহিনী লাকসাম থেকে পশ্চিম দিকে মুদাফ্ফরগঞ্জ হয়ে চাঁদপুরের দিকে পালাতে থাকে।
তাঁরা আরো জানান, পালানোর সময় মিত্র বাহিনী লাকসামের চুনাতী গ্রামে এবং মুক্তিবাহিনী শ্রীয়াং ও বাংলাইশ গ্রামে পাকহানাদার বাহিনীকে মুখোমুখি আক্রমণ করে। এ সকল আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনীর অসংখ্য প্রাণহানীসহ অনেক হানাদার বন্দী হয়। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ভোরে যৌথবাহিনী বৃহত্তর লাকসামকে শত্রুমুক্ত বলে ঘোষণা করেন।