আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক

বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ভোটে সহিংসতার শঙ্কা

  ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন
  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোটের আগে ও ভোটের দিন সহিংসতার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থা।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে নির্বাচন ভবনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ইসি। টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক চলে। বৈঠকে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে, এসব বিষয়ে সার্বিক আলোচনা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। দু’ একটি ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত ও ভালো রয়েছে বলে জানান তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকার চারপাশের জেলার বাসিন্দারা যাতে ভোটের দিন রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি প্রবেশ পথে চৌকি বসানো হবে।

এসময় কমিশন বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন, তার মধ্যে কেন্দ্রগুলোতে কত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে সে বিষয়টিও উঠে আসে। কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রের পাহারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

বিজ্ঞাপন
ছবি: বার্তা২৪.কম

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটিতে ৫৩ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ১৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত মামলার রয়েছে। তারাও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকি স্বরূপ। হত্যা ও মাদক মামলার আসামিরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেন তারা। একইসঙ্গে অনেকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে জানিয়ে কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হলে জবাবে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইন অনুযায়ী ওয়ারেন্টেড একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। এটি অনুসরণ করতে হবে। আরেক নির্বাচন কমিশনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আইনের বাইরে বলার কিছু নেই। তবে প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হলে ইসির উপর কালিমা আসে। আপনারা ভোটের আগে ওয়ারেন্ট থাকলেও গ্রেফতার না করার চেষ্টা করবেন। অনেক কিছুই অ্যাডজাস্ট করেন, এ বিষয়টিও অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করবেন। নির্বাচনের পরে গ্রেফতার করুন।

আর নির্বাচনে প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে যাতে বের করে দেওয়া না হয় সেদিকে নজর রাখতেও নির্দেশনা দেয়া হয় বৈঠকে।

এছাড়াও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েও সহিংস পরিবেশ তৈরি করার অপচেষ্টা চলতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শঙ্কা প্রকাশ করে। এর জবাবে কমিশন বলেছে, গুজব ঠেকাতে সাইবার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সদের কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নজরদারি করতে হবে।

তবে কমিশনের প্রায় সব প্রস্তাবে সম্মতি জানালেও একটি বিষয়ে দ্বিমত পোষ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য নিজ এলাকায় যেতে প্রাইভেট কার ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়। এতে আপত্তি জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটের দিন প্রাইভেটকার চালানোর অনুমতি দিলে শহরের বিপুল সংখ্যক গাড়ি রাস্তায় নামবে, এতে সেসব নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকের কাজ করতে হবে। আর ভোটের দিন প্রাইভেট কার চলতে দিলে কমিশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। পরে কমিশন প্রাইভেটকার ব্যবহারের বিষয়টি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে তিন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব, জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‍্যাব, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও ঢাকার পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৈঠকের শুরুতে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, কোনো ধরনের অনিয়ম ও ত্রুটি বিচ্যুতি দেখতে চাই না। কোনো ধরনের গাফলতি সহ্য করা হবে না। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে অনিয়মে কারা জড়িত তা দেখে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। বারবার অভিযোগ আসে এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয় না অথবা ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। কেন্দ্র থেকে কেউ যেন এজেন্ট বের করে দিতে না পারে এবং আসা যাওয়ার পথে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়- সে বিষয়টি দেখতে হবে। কোনো অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ছবি: বার্তা২৪.কম

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে মোট ১৮টি কেন্দ্র শুধু ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া তাদের কাছে এমন কোনো রিপোর্ট নেই পরিস্থিতি খারাপ কিছু হতে পারে। একই সাথে ভবিষ্যতে এমন কিছু হতে পারে তার রিপোর্টও তাদের কাছে নেই। সব সময়ই তারা সতর্ক আছেন, কোন সমস্যা থাকলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য থাকবে।

আর বৈঠক শেষে পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো ঘটনা ঘটেনি। ভোটারদের আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। আমি মনে করছি, শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং আমরা তা বজায় রাখবে।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।