অভিভাবকহীন কীর্তনখোলা



জহির রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
দখল-দূষণ আর নাব্যতা সংকটে অভিভাবকহীন কীর্তনখোলা নদী, ছবি: বার্তা২৪.কম

দখল-দূষণ আর নাব্যতা সংকটে অভিভাবকহীন কীর্তনখোলা নদী, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে একসময় কীর্তনের উৎসব হতো। আবার এই নদীতেই কৃষ্ণলীলার কাহিনী নিয়ে কীর্তনীয়রা গানে গানে মেতে থাকতেন। কিন্তু কীর্তনের সেই উৎসব হারিয়ে গিয়ে এখন পরিণত হয়েছে দখল আর দূষণ উৎসবে।

বর্তমানে যে যার মতো করে এই নদী ব্যবহার করছেন। কেউ নদীর পাড়-সীমানা দখল করে গড়ে তুলছে বিভিন্ন স্থাপনা, কেউ আবার নদীর তীর দখল করে গড়ে তুলছে ইট, বালু, পাথর ও কয়লা বিক্রি ও লঞ্চ তৈরির ডকইয়ার্ড। এমনকি কীর্তনখোলা নদী ভাঙন রোধে ফেলা জিও ব্যাগ থেকে বালি চুরির ঘটনাও ঘটছে।

এছাড়া বরিশাল নগরীর বিভিন্ন খাল ও ড্রেন থেকে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য আর লঞ্চের ময়লা-আবর্জনা ফেলে কীর্তনখোলা নদীর পানিকে করা হচ্ছে বিষাক্ত। পাশাপাশি নিয়মিত ড্রেজিং না করায় নদীতে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। সব মিলে দখল-দূষণ-নাব্যতা সংকট আর জাহাজ ডুবি উদ্ধারের ব্যর্থতায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে কীর্তনখোলা নদী।

দখল

নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডে রূপাতলী খলিফাবাড়ি সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় মেহগনি গাছের তৈরি করা পাইলিং আর ব্লক ব্যবহার করে ইট, বালু, পাথর বিক্রির ডকইয়ার্ড গড়ে তুলেন ওই এলাকার বাসিন্দা রাইভিউল কবির স্বপন। চলতি মাসের ১৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে পাইলিং ও ব্লক ভেঙে দিলেও ফের আবার বহাল তবিয়তে আছে ডকইয়ার্ডটি।

নাব্যতা সংকটে কীর্তনখোলা নদী এখন হুমকির মুখে

তবে রাইভিউল কবির স্বপনের দাবি, খলিফা বাড়ি থেকে কাঁটাদিয়া খাল পর্যন্ত কীর্তনখোলা তীরে তার ১৭ একর রেকর্ডীয় জমি আছে, যেখানে পাইলিং দেওয়া হচ্ছে মাত্র।

এছাড়া কীর্তনখোলা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে ওঠা রসুলপুর চর, মোহাম্মদপুর চর, দপদপিয়ার চর, কর্ণকাঠী চর, পলাশপুর চর, খোন্নারের চর এবং চর বাড়িয়ার চর দখল করেছে প্রভাবশালীরা। দখল করা হয়েছে দপদপিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকা।

এদিকে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্যোগে বরিশাল নগরে নদীর তীরে সীমানা নির্ধারণে কাজ শুরু হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কীর্তনখোলার তীরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছেদ ও নিজেদের বসতঘর হারানোর আতঙ্ক। উচ্ছেদ থেকে রেহাই পেতে বরিশাল সিটি মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন দখলদার বসতিরা।

অপরদিকে সারা দেশের ন্যায় বরিশালের নদী দখলদারের নাম প্রকাশ করেছে সরকার। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে ও জেলা প্রশাসন প্রণীত ওই তালিকায় বরিশাল জেলায় নদীর দখলদার রয়েছে ২ হাজার ২৭২ জন। ওই তালিকা অনুসারে জেলা ভিত্তিক মূল্যায়নে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বরিশাল জেলা।

দুর্ঘটনা

গেল ১৪ ডিসেম্বর কীর্তনখোলা নদীর বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ডুবে যায় এমভি হাজী মোহাম্মদ দুদু মিয়া-১ নামের কার্গো। জাহাজে ছিল সিমেন্ট তৈরির ১ হাজার ২০০ টন ক্লিংকার আর জাহাজটির ওজন ৬০০ টন। পানিসহ মোট ২ হাজার টন ওজনের কার্গোটি উদ্ধার না করতে পেরে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে উদ্ধারকারীরা। এছাড়া গেল ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া এলাকায় দুটি নৌযানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ডুবে যায় কয়লা বোঝাই বাল্ক হেড। সেটিও উদ্ধার করা যায়নি। ফলে জাহাজের ভেতর ও পাশে পলি পড়ায় ওই সব নৌ চ্যানেলে সৃষ্টি হয়েছে নাব্যতা। রয়েছে চ্যানেলগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা।

নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কাযক্রম হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ

বরিশাল নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের অসহায়ত্বের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘৬০ টন উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন হামজা কেনা হয় ১৯৬৪ সালে আর রুস্তম ১৯৮২ সালে। অর্ধশত বছর পুরনো হামজা আর ৩৭ বছরের পুরনো রুস্তুম এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া ২০১২ সালে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ও প্রত্যয়ের উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন করে। কিন্তু কারিগরি জটিলতায় জাহাজ দুটিও একসঙ্গে উদ্ধার কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে না।’

তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ধারকারী জাহাজ ক্রয়ের চিন্তাভাবনা করছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তারা।

স্থানীয় লঞ্চ মালিকরা বলছেন, কীর্তনখোলা নদীতে প্রতিদিন অসংখ্য নৌযান চলাচল করে। এছাড়া কলকাতা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী পণ্যবাহী নৌ চলাচলেরও রুট এটি। যেখানে কার্গো দুটি ডুবেছে সেখান দিয়েই বিভিন্ন নৌযান নিয়মিত চলাচল করে। বিশেষ করে যেসব জাহাজের বেশি পানির প্রয়োজন হয়, সেসব বড় আকারের নৌযান ডুবে যাওয়া কার্গোটির আশপাশ দিয়ে চলাচল করে। তাই ডুবে যাওয়া নৌযানটি দ্রুত উদ্ধার না করা হলে নৌপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান লঞ্চ মালিকরা।

দূষণ

গ্লোবাল ক্যাপসুল লিমিটেড, কেমিস্ট ল্যাবরেটরি লিমিটেড, অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড, রেফকো ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যাংকর সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ কলকারখানায় ব্যবহৃত বিষাক্ত কেমিক্যাল বিভিন্নভাবে কীর্তনখোলা নদীতে সরাসরি নির্গত হচ্ছে। এছাড়া নদীর পাড় এলাকায় গড়ে ওঠা বস্তিবাসীর মল-মূত্র ও ব্যবহৃত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব কারণে নদীর পানি দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগীসহ বাড়ছে দূষণের শঙ্কা।

বিষাক্ত বর্জ্য আর লঞ্চের ময়লা-আবর্জনায় কীর্তনখোলা নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে

এদিকে, প্রতিদিন বরিশাল থেকে ঢাকা নৌযানের কয়েক হাজার যাত্রীর ব্যবহৃত উচ্ছিষ্ট এবং বরিশাল নদীবন্দরে ফেরার পর লঞ্চের ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। ফলে নদীর তলদেশে জমাট বেঁধেছে পলিথিন-প্লাস্টিকসহ নানান ধরনের আবর্জনার। যা নদী ড্রেজিং করার সময় বালির সঙ্গে উঠে আসছে।

নাব্যতা সংকট

নিয়মিত ড্রেজিং না করায় ঢাকা-বরিশাল নৌপথের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এ কারণে ডুবোচরে প্রায়ই আটকে যাচ্ছে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজ। এতে লঞ্চ, জাহাজসহ নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণের পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনাও। এতে হাজার হাজার যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

এরইমধ্যে মেঘনা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে নৌপথের হিজলার মিয়ার চ্যানেল দিয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ১০ কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরে কালীগঞ্জ দিয়ে লঞ্চ চলাচল করছে। এছাড়া বরিশাল নদীবন্দর এলাকায়ও দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। তবে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নদীবন্দরসহ নৌপথের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাপিটাল ও হাইড্রোলিক ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করছে বিআইডাব্লিউটিএ।

জিও ব্যাগ খুলে বালু চুরি

কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন ঠেকাতে বেলতলা ঘাট এলাকায় ফেলা জিও ব্যাগ খুলে ঘটছে বালি চুরির ঘটনা। এ ঘটনায় পারভেজ নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাদী হয়ে একটি মামলা দায়েরও করেছে।

নদী খাল বাঁচাও রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নগরীর ওষুধ শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত হয়ে কীর্তনখোলা নদীর পানিকে দূষিত করছে। এছাড়া রাতের আঁধারে স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা হোটেলের সকল বর্জ্য কীর্তনখোলায় দেদারসে ফেলে পানিকে দূষিত করছে। এসব বিষয়গুলো নদী কমিশনের চেয়ারম্যান জানানো হয়েছে।’

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরজুড়ে কীর্তনখোলা নদীর পানি ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই লক্ষ্যে এরইমধ্যে নদীবন্দর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় অর্ধশত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহতের পাশাপাশি লঞ্চে ময়লা-আবর্জনা নদীতে না ফেলে নির্দিষ্টস্থানে ফেলার ব্যবস্থা করার জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’

নদী ভাঙন রোধে ফেলা জিও ব্যাগ থেকে বালি চুরির ঘটনাও ঘটছে

বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকায় ডুবে যাওয়া এমভি হাজী মোহাম্মদ দুদু মিয়া-১ নামের কার্গোটি উদ্ধার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্ধারকারী টিমের দেওয়া তথ্য মতে আগামী মাসের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কার্গোটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। কার্গোটিতে থাকা ১ হাজার ২০০ টন সিমেন্ট তৈরির উপাদানের (ক্লিংকার) প্রায় ৭০ ভাগই উদ্ধারকারী টিম কার্গো থেকে তুলে ফেলেছে। এই নৌচ্যানেলটি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পরিবেশ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো. আবদুল হালিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদীর পানি বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে। এছাড়া নগরীর খাল ও ড্রেন থেকে কলকারখানার বর্জ্য, মানববর্জ্যসহ ময়লা-আবর্জনা সরাসরি নদীতে নির্গত হচ্ছে।’

বরিশাল সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদফতর মিলে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নদী দূষণ রোধে কাজ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদী দখল বন্ধ আর পানি দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ করা হচ্ছে তাদের বিভিন্ন অবৈধ অবকাঠামো আর স্থাপনা। পাশাপাশি নদীর পানি দূষণকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কীর্তনখোলা নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনতে বরিশালবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।’

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে দেশের নদী ভাঙন রোধ, নদীর সীমানা নির্ধারণ, নদীর তীর সংরক্ষণ আর নদীর নাব্যতা সংকট নিরসনে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নদীগুলোকে দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কীর্তনখোলা নদী দখল বন্ধ ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

   

গরমে স্বস্তি আনে নরসিংদীর বাঙ্গি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রীষ্মকালের এমন তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড রোদের কারণে অস্থির মানুষজন। কাজকর্মে নেমে এসেছে অসহনীয় অবস্থা। এই অবস্থায় ঠান্ডা জাতীয় খাওয়ার পাশাপাশি রোদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ। বেশি করে ফলমূল ও পানি খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফলমূলের মধ্যে, ডাব, শসা, পেপে, বাঙ্গি আনারস ইত্যাদি। এই অবস্থায় জেলার চরাঞ্চলের মিষ্টি মধুর বাঙ্গির কদর বেড়েছে কয়েকগুন। এর ফলে একদিকে বেড়েছে বাঙ্গির উৎপাদন, অপরদিকে বেড়েছে মৌসুমি শ্রমিকের কর্মসংস্থান। আর এই নরসিংদীর সাগরকলা, লটকটন, বোম্বাই লেবুর পর এবার বাঙ্গি দিয়ে পরিচিত হচ্ছে নরসিংদী। মূলত মৌসুমি ফল হিসেবে নরসিংদীতে চাষাবাদ হয়ে থাকে এই বাঙ্গি।

গ্রীষ্মের অন্যতম ফল বাঙ্গি গ্রীষ্ম আসার আগেই নরসিংদীর চরাঞ্চলের মাঠে বেড়ে উঠে। ইতিমধ্যে বাঙ্গি চাষে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠছে নরসিংদীর রায়পুরা ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অল্প শ্রম ও অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাঙ্গির চাষ। ফলে এ অঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে মৌসুমি কর্মসংস্থানের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বেষ্টিত বাঁশগাড়ি, শ্রীনগর, চরমধূয়া ও মির্জাচর ইউনিয়নের সর্বত্র বাঙ্গি চাষ হয়ে থাকে। তুলনামূলকভাবে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি বাঙ্গির আবাদ হয়ে আসছে। গত মৌসুমে রায়পুরার চরাঞ্চলে প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষাবাদ হয়েছে। যা আগের বছর হয়েছিল ৪০ হেক্টর জমিতে। এ বছর বাঙ্গি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন।

বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মধ্যনগর ও চান্দেরকান্দি গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাঙ্গি চাষ করে। শুধু মধ্যনগর বা চান্দেরকান্দি নয় আশপাশের বেশ কয়েকটি চরে বাঙ্গির আবাদ হচ্ছে। এই সকল চরের উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও হলদে রঙের উজ্জ্বল হয়ে থাকে।

বাঁশগাড়ি ও শ্রীনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে পলি দ্বারা বিস্তৃত চর। বিস্তৃর্ণ পূর্ব পুরুষদের অনুকরণে চরে ধান জাতীয় ফসলের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির উপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গিগাছের সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারগণ জমিতে ছুটে আসেন। জমিতেই পাইকারগণ দরদাম  করে নিয়ে যাচ্ছেন যার যার মতো।

বাঙ্গি চাষীরা জানান, আগে নিজেরা খাওয়ার জন্য অল্প জমিতে বাঙ্গিচাষ করা হতো। পরবর্তীতে এটি লাভ জনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। ফলে বর্তমানে চরের অর্ধেক জমিতেই বাঙ্গি চাষ হয়ে থাকে।

কৃষকরা আরো জানান, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একবারে যায়। রসুনের জন্য সার দেয়ায় বাঙ্গির জন্য আলাদা করে সার লাগেনা। বীজ ও ঔষুধে এবছর দুই বিঘা জমিতে মাত্র ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করা যায় আড়াই লাখেরও বেশি টাকা বিক্রি করা সম্ভব।

বাঙ্গি চাষ শুধু কৃষকদের সমৃদ্ধিই বয়ে আনেনা, সৃষ্টি হয়েছে মৌসুমী কর্মসংস্থানের। মৌসুমি শ্রমিকরা জমি থেকে বাঙ্গি ঝুঁড়িতে তুলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নৌকা কিংবা ভ্যানে ভর্তি করে থাকেন। এতে পুরো চরে চোখে পড়ে কৃষক-শ্রমিকের কর্মচঞ্চলতা।

মৌসুমি শ্রমিকরা জানান, বাঙ্গির পুরা মৌসুমে এই গ্রামের কেউ বসে থাকেননা। সকলেই কিছু না কিছু কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জমি থেকে প্রতিটি বাঙ্গি ঘাটে নৌকায় বা ভ্যানে বোঝাই করে দিলে ৫ টাকা পান। এতে প্রতিদিন গড়ে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করা সম্ভব হয়। আকারভেদে পাইকারী হিসেবে একশ বাঙ্গি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এই এলাকার বাঙ্গি দেখতে সুন্দর, মিষ্টি ও ভালো মানের হওয়ায় ব্রাহ্মনবাড়িয়া, বাঞ্ছারামপুর, যাত্রাবাড়ি, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট,নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।  

রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান জানান, চরাঞ্চলখ্যাত রায়পুরায় বাঙ্গি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গি চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বীজ কৃষকরা ব্যবহার করছেন। বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের।

;

ঠাকুরগাঁওয়ে নিখোঁজের ২ দিন পর ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঠাকুরগাঁও
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ঠাকুরগাঁও শহরের মাদ্রাসা পাড়া থেকে নিখোঁজের দুইদিন পর বাড়ির পাশের গলি থেকে নিবির (১২) নামে এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে বাড়ির পাশের গলিতে ছেলের অর্ধগলিত মরদেহটি দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন নিবিরের মা। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

নিবির ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাদ্রাসা পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ওমান প্রবাসী আব্দুস সালাম বাবলুর ছেলে। সে সালান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন- একই এলাকার শিপন আলীর ছেলে আলিফ ও ফজর আলীর ছেলে লিখন।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বাড়ি থেকে খেলতে বের হয়ে আর বাড়িতে ফেরেনি নিবির। এ নিয়ে সদর থানায় জিডি, মাইকিং ও ইন্টারনেটে ব্যাপক প্রচার করা হলেও সন্ধান মেলেনি তার।

বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্য রাতে (শনিবার, ২০ এপ্রিল) বাড়ির জানালায় বিকট শব্দ করে দুর্বৃত্তরা। ভয়ে কেউ বাড়ি থেকে বাইরে আসেননি। তবে সকালে বাড়ির পাশের গলিতে নিবিরের নিথর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে ওঠেন নিবিরের মা। এরপর পরিবারের সবাই সেখানে হাজির হয়। পরে থানায় জানানো হয়।

এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের পর তদন্তসাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো যাবে।

;

হাতিরঝিল থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর বাড্ডা থানার হাতিরঝিল অংশের পুলিশ প্লাজার পেছনের ব্রিজের নিচ থেকে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে এ মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতের নাম- মো. রবিন (২৯)। পিতা আব্দুল সাত্তার। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায়।

এর আগে, শনিবার সকাল বেলা ব্রিজ ধরে যাওয়ার পথে মরদেহ ভাসতে দেখে পথচারীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে হাতিরঝিল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনাস্থল বাড্ডা থানাধীন হওয়ায় পরে বাড্ডা থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহটি উদ্ধার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসিন গাজী।

তিনি বলেন, হাতিরঝিল থানা পুলিশের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি পুলিশ প্লাজার পেছনে ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। পরে বাড্ডা থানার একটি টিম গিয়ে উদ্ধার করে মরদেহটি।

ওসি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তার নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পুলিশ কাজ করছে। তবে তার শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।

;

সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত 



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে মনিরুজ্জামান বাচ্চু (৪৫) নামে এক মৌয়াল নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ এপ্রিল) সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের নটাবেকী এলাকায় বাঘের আক্রমণের শিকার হন তিনি।

তিনি গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত কাশেম গাজীর ছেলে।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা নুর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন জানান, গত ২ এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে পাশ নিয়ে বাচ্চু গাজী সহকর্মী মৌয়ালদের সাথে সুন্দরবনের গহীনে মধু আহরণ করতে যান। সকালে বাঘের আক্রমণে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরই  মধ্যে বনবিভাগের একটি দল তার মরদেহ উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তারা ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।



;