রংপুরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার আলুর আবাদ বেশি
আলু উৎপানদকারী অঞ্চল হিসেবে রংপুরে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত কৃষকরা। তবে ন্যায্য দাম আর আলু সংরক্ষণে হিমাগার সংকট সৃষ্টি না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে (২০১৯-২০২০) রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৮৬ হাজার ৬শ ৪২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ৯২ হাজার ৬শ ৭৫ হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শতকরা সাত ভাগ বেশি।
তবে গত মৌসুমের চেয়ে এবার আলুর জমির লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদন কম ধরা হয়েছে। এবার রংপুর অঞ্চলে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২২ লাখ ৬৩ হাজার ৮শ ৯৭ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিলো ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৮শ ৩১ মেট্রিক টন।
কৃষকরা বলছেন, গত বছরে আলুর ভালো দাম আর এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে দিন দিন। এখন ক্ষেতে ক্ষেতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এরই মধ্যে আগাম জাতের আলু ঘরে তোলার কাজ শুরু করেছেন অনেকেই।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার দেউতি গ্রামের আনোয়ার শিকদার বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আগাম কিছু আলু বিক্রি করে দামও ভালো পেয়েছেন। তবে নভেম্বরের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় আলু ক্ষেতে রোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন বলেও তিনি জানান।
অন্যদিকে মিঠাপুকুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি পনের একর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। ভালো ফলন হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলের আলু চাষিরা এবার আগে ভাগেই দ্রুত বর্ধনশীল জাতের গ্রানোলা, লরা, মিউজিকা, ক্যারেজ, রোমানা ও ফাটা পাকরি চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে রংপুরে এবং সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। আসছে মার্চ মাসের শেষের দিকে জমিতে আলু উত্তোলন শেষ হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ।
চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে রংপুরে ৫০ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এছাড়া নীলফামারী ২১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হাজার ৩০, কুড়িগ্রামে ৬ হাজার ৪৪৫ এবং লালমনিরহাট জেলাতে ৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে বলে জানান রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম।
বার্তা২৪.কমকে এই কৃষিবিদ জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ ও সচেতনতার কারণে কৃষকরা আলুর ফলন ভালো পেয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট উৎপাদনের ১২ হাজার ৩শ ৮৬ হেক্টর জমির আলু উত্তোলন করা হয়েছে। যা প্রতি হেক্টরে ২০ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।
তিনি আরও জানান, ২২ লাখ ৬৩ হাজার ৮শ ৯৭ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এখন পর্যন্ত উৎপাদিত আলু থেকে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৮ মেট্রিক টন বাজারজাত হয়েছে। মাঠে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন।
২০০৯ সাল থেকে মুন্সীগঞ্জকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ আলু উৎপানদকারী জেলা হিসেবে রংপুর দেশের কৃষি খাতে সুনাম ধরে রেখেছে উল্লেখ করে কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, রংপুর অঞ্চলে আলু সংরক্ষণে ৬৭টি হিমাগার রয়েছে। এরমধ্যে ৪০টি হিমাগার রয়েছে রংপুরে এবং ১০টি নীলফামারী জেলার মধ্যে। বাকি তিন জেলায় ১৭টি হিমাগার রয়েছে।