সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র- সিআরপির নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র প্রত্যয় কুমার সরকার নিহতের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কটির উভয় লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, গত শনিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের পাকিজা পয়েন্টে ঠিকানা পরিবহনের বাসচাপায় নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী প্রত্যয় সরকার নিহতের ঘটনায় আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
নিহত প্রত্যয় সরকার সিআরপি নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার জনাতন সরকারের ছেলে।
নার্সিং ছাত্র সমাজের ব্যানারে সোমবার সকালে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভে নামে সিআরপি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিমুলতলায় অবরোধ করলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
এসময় জড়িত বাস চালক ও হেলপারের গ্রেফতারসহ সড়ক শৃঙ্খলায় ছয় দফা দাবি জানান তারা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।
নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়ি ছেড়েছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে লাঞ্ছিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানু (৭৮)।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলেই তিনি কুমিল্লা থেকে ফেনীতে চলে যান বলে জানা গেছে।
এদিকে, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা ঝড় বইছে।
বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বলেন, তিনি এখন ফেনীতে তার ছেলের সঙ্গে অবস্থান করছেন। মারধর করায় সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে চৌদ্দগ্রামে বাড়িতে ফিরে আসবেন বলেও জানান তিনি।
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আব্দুল হাই বলেন, গতকাল দুপুরে তিনি ওষুধ কিনতে বাড়ির কাছে বাজারে গিয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয় জামায়াত কর্মী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ১০-১২ জন তাকে ধরে জুতার মালা পরিয়ে দেন। সেই সঙ্গে তাকে দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আব্দুল হাইয়ের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী রেহানা বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, গতকালের ঘটনায় আত্মসম্মানে আঘাত পেয়েছেন তার স্বামী। এ কারণে ঘটনার পর পরই তিনি এলাকা ছেড়ে ফেনী চলে যান। মূলত জামায়াত নেতা হোসেন মজুমদার নেতৃত্বে নিযার্তন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দফায় তাদের বাড়িতে হামলা হয়। হামলাকারীরা তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ করার কারণেই তাদের বাড়িতে হামলা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। তবে সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে। এ বিষয়ে আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে ৭/৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম। তবে ঘটনার পর থেকে জড়িতদের কেউই এলাকায় নেই।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কানু আওয়ামী লীগ করেও বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। কারাগারে গেছেন। তার ভুলক্রটি থাকলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল।
তিনি আরও বলেন, এভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা সরকারকে বলবো ১২ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। না হয় সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামবেন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ওনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর সাথেও কথা হয়েছে উনি ফেনীতে আছেন। উনার সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। উনাকে আইনিভাবে সহায়তা করার জন্য যে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাংলাদেশে লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুতালিব এস এম সুলেমান লিবিয়ার উন্নয়নে সহায়তায় আরও পেশাদার ও দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও পাটজাত পণ্য আমদানি বাড়ানোর জন্য লিবিয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত জনাব আব্দুল মুতালিব এস এম সুলিমান রোববার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এ আগ্রহের কথা জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয় পক্ষই আগামী বছর বাংলাদেশ ও লিবিয়ার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের প্রস্তুতির এ সময়ে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
পররাষ্ট্র সচিব কৃষি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং ব্যবসায়িক আদান-প্রদান বাড়াতে উভয় দেশের চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে জোরালো সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এছাড়া তিনি লিবিয়ার পক্ষকে কূটনৈতিক এবং সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মওকুফের বিষয়ে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য সরকারি পর্যায়ের সম্পৃক্ততা বাড়াতে আহ্বান জানান।
অনিয়মিত অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ স্বীকার করে, রাষ্ট্রদূত সুলেমান সমস্যা সমাধানে একটি ইলেকট্রনিক নিবন্ধন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য লিবিয়ার প্রচেষ্টার কথা জানান।
পররাষ্ট্র সচিব লিবিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশি পেশাজীবী ও শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য অবদানের প্রশংসা করেন এবং আরও দক্ষ কর্মী ও পেশাজীবী প্রেরণের মাধ্যমে নিয়মিত অভিবাসনকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
উভয় পক্ষই উচ্চ-পর্যায়ের সফরের সুবিধার্থে এবং দ্বিপক্ষীয় পরামর্শের জন্য দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিতে বিস্তৃত বিষয়াদি কভার করে এমন একটি এমওইউ স্বাক্ষর ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়।
গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি সংস্কার ছিলো উল্লেখ করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমরা কেউ কেউ হয়তো এখন সংস্কারের কথা ভুলে যাচ্ছি। আবার কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে যে, সংস্কার আরও পরে হলেও হবে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সুশাসনের জন নাগরিক আয়োজিত ‘সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিবেদন পেশ: তারপর কী’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আবার কেউ যেন স্বৈরাচারী হতে না পারে এমন দাবি ছিলো জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আবার যেনো স্বৈরাচার ফিরে না আসে, নেভার-এভার এগেইন। আর কোনদিন নয় এই স্বৈরাচার, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা, ফ্যাসিবাদ যেটাই বলতে চাই। তার জন্যই সংস্কার দরকার। আমরা হয়তো কেউ কেউ ভুলে গেছি আবার কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে যে, সংস্কার আরও পরে হলেও হবে। হ্যা, পরে কিছু কিছু সংস্কার করতে হবে কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের অন্যতম দাবি ছিলো গভীর সংস্কার। যাতে পুরনো কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী সরকারের আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তাই সংস্কারের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে। গণমাধ্যম এখানে খুবই ভালো ভূমিকা পালন করছে।
বৈষম্যের অবসান এই অভ্যুত্থানের অন্যতম আরেক দাবি ছিল জানিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, আমাদের বৈষম্য দিন দিন আকাশচুম্বী হচ্ছে, অর্থনৈতিক বৈষম্য তো দিন দিন বেসামাল পর্যায়ে যাচ্ছে। এই বৈষম্যের অবসান করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই অভ্যুত্থানের পেছনে আরও একটি কারণ ছিলো। যারা অপকর্ম করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধ করেছে তাদের ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা।
নির্বাচনী সংস্কারে প্রধান উপদেষ্টার কাছে খসড়া কিছু মতামত জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, নো ইভিএম। এবং ইভিএম যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত।
নির্বাচনে না ভোটের বিধান যুক্ত করার বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।