চীনে কুঁচিয়া রফতানি বন্ধ, লোকসানে বরিশালের ব্যবসায়ীরা
সম্প্রতি নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনে বরিশালের কুঁচিয়া রফতানি বন্ধ রয়েছে৷ এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার কয়েকশ কুঁচিয়া চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবুও তাদের ব্যাংক, এনজিও এবং রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ আর দাদনের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে নিয়মিত৷ ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুঁচিয়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক পরিবার।
জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার, বাশাইল, চেঙ্গুটিয়া, বাটরা, গৈলা, সাহেবেরহাট, মোল্লাপাড়া, পয়সারহাট, বড়মগড়া, কারফাসহ বিভিন্ন এলাকায় কুঁচিয়া চাষ, সংগ্রহ ও মজুদ করা হয়।
এরপর মজুদকারীরা কনটেইনারে করে ঢাকার টঙ্গীর কামারপাড়া ও নলভোগ এলাকার অর্কিড ট্রেডিং করপোরেশন, আঞ্জুম ইন্টারন্যাশনাল এবং গাজী এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন কুঁচিয়া রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান৷ সেখান থেকে সরাসরি বিদেশে রফতানি হয়ে থাকে এ সব কুঁচিয়া। বিশেষ করে চীনেই রফতানি হতো প্রায় ৯০ শতাংশ কুঁচিয়া। বাকি ১০ শতাংশ রফতানি করা হতো হংকং, তাইওয়ানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে।
প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এসব কুঁচিয়া চীনে রফতানি করা হয়৷ তবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুমাস কুঁচিয়া সংগ্রহ করার ভরা মৌসুম থাকে৷ কিন্তু এই ভরা মৌসুমের শুরুতেই চীনে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চলতি বছরে গেল ২৩ জানুয়ারি চীনে কুঁচিয়া ও কাঁকড়া আমদানি-রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
ফলে রফতানি বাণিজ্যে ধসের পাশাপাশি লোকসানে পড়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার কুঁচিয়া ধরা শ্রমিক, ব্যবসায়ী, আড়ৎদারসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা।
আরও জানা গেছে, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য স্থানীয় কুঁচিয়া ব্যবসায়ীদের দাদনে টাকা দিতেন। এতে আগৈলঝাড়ার ব্যবসায়ীরা সুদে অথবা কুঁচিয়া বিক্রির শর্তে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে দাদনে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করতেন। দাদনের টাকা পরিশোধ করতে প্রতিদিন পুকুর, ডোবা-নালা, খাল-বিল থেকে কুঁচিয়া ধরে এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতেন সংগ্রহকারীরা ।
করোনা ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা গেছে চীনে। আক্রান্তের সংখ্যা পৌনে ১ লাখ ছাড়িয়েছে। চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাস ২১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও।
স্থানীয় অর্জুন মন্ডল, প্রদীপ বাড়ৈ ও জয়দেব মন্ডল নামে কুঁচিয়া ব্যবসায়ী জানান, চীনা নাগরিকদের খাবারের তালিকায় কুঁচিয়া অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার। তাই চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর দেশের অন্যান্য জায়গার মতো আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকেও কয়েক কোটি টাকার কুঁচিয়া চীনে রফতানি করা হয়। কিন্তু চীনে সম্প্রতি নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রামক মারাত্মক আকার বিস্তারের কারণে চলতি বছরের গত ২৩ জানুয়ারি থেকে চীনের সঙ্গে কুঁচিয়া রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিপাকে পরেছেন তারা।
আগামী এক মাসের মধ্যে চীনে রফতানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু না হলে ব্যবসায়ীদের মজুদ করা কুঁচিয়া সম্পূর্ণ মারা যাওয়া এবং পুরোপুরি আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা করছেন এই ব্যবসায়ীরা।
আগৈলঝাড়া উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রোজিনা আকতার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য চীনে কুঁচিয়া আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফলে এখানকার স্থানীয় কুঁচিয়া সংগ্রহকারী ও ব্যবসায়ীরা চরম লোকসানের মুখে পড়েছে। একদিকে দাদনের টাকা পরিশোধের চাপ আরেক দিকে কুঁচিয়া মৃত্যুর ভয়। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত মজুদকৃত কুঁচিয়া রফতানি করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘চীনে সম্প্রতি নোভেল করোনা ভাইরাস দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় দেশ থেকে কুঁচিয়া রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার কুঁচিয়া সংগ্রহকারী ও ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে। ফলে তারা বিভিন্নভাবে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি মজুদকৃত কুঁচিয়া স্থানীয় অথবা দেশীয় বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয়, তাহলে একটু হলেও লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেত কুঁচিয়া সংগ্রহকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে এই পরিস্থিতিতে কারও কিছু করার নেই। তারপরও আমরা আশা করছি এটি একটি সাময়িক সমস্যা। যা অচিরেই দূর হয়ে যাবে।’