আবাসিক এলাকায় লাশকাটা ঘর, ভয় পান স্থানীয়রা
ঝালকাঠির চার উপজেলার জন্য একটি মাত্র লাশকাটা ঘর। তাও আবার আবাসিক এলাকার মাঝে। ওই এলাকায় রাত তো দূরের কথা, দিনে দুপুরেই পথচারী আর এলাকাবাসীরা চলাফেরা করতে ভয় পান। এমনকি সন্ধ্যা হলেই ওই এলাকায় রিকশা-ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক যেতে চায় না। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন এলাকাবাসী।
ময়নাতদন্তের জন্য আসা উদ্ধারকৃত ক্ষত-বিক্ষত আর পচা-গলিত মরদেহের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অনেক সময় শিশুরা রক্ত দেখে ভয় পাচ্ছে। এতে প্রায় সময় শিশুরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ারও খবর মিলেছে।
এছাড়াও গুরদাম খাল ও এর আশপাশের এলাকায় মরদেহের সঙ্গে পেঁচানো পরিত্যক্ত অংশ এবং রক্ত ফেলার কারণে খালের পানি ও পরিবেশ উভয়ই দূষিত হচ্ছে।
জানা গেছে, আশি-নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঝালকাঠি শহরের পূর্বচাঁদকাঠীর গুরুদাম খালের পাশে নির্জন জঙ্গলের মধ্যে এই লাশকাটা ঘরটি নির্মাণ করা হয়। তখন জনবসতি শূন্য থাকলেও এখন জনবসতি বেড়ে আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে এলাকাটি।
সালমা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বার্তা২৪.কমকে জানান, তার পাঁচ বছরের একটি শিশু রয়েছে। প্রায়ই জ্বরে ভোগে। শিশুটিকে অনেকবার ডাক্তার দেখানো হলে জানা যায়, ভয়ের কারণে এমন জ্বর হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, মাসে ১৫-২০টি মরদেহ আসে এই লাশকাটা ঘরে। সন্ধ্যার পর কোনো মরদেহ আসলে বাউন্ডারির মধ্যে রাস্তার ওপর সারারাত ফেলে রাখা হয়। অনেক সময় পচা অর্ধগলিত মরদেহ আসলে দুর্গন্ধে টেকা যায় না।
সত্তার নামের স্থানীয় এক রিকশা চালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সন্ধ্যার পর এই রাস্তায় রিকশা চালাইতে ভয় লাগে। সন্ধ্যার আগে আগেই রিকশা গ্যারেজে রেখে বাড়ি ফিরে যাই। এখানে যেকোনো সময় মরদেহ আসে। অনেক সময়ই মরদেহ সারারাত এখানে পড়ে থাকে।
ঝালকাঠি নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আবু জাফর বার্তা২৪.কমকে জানান, দীর্ঘদিন যাবত আবাসিক এলাকা থেকে লাশকাটা ঘরটি সরিয়ে নিয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন বাসিন্দারা। এমন নাগরিক ইস্যুতে জেলা প্রশাসক বরাবর নাগরিক ফোরাম একটি স্মারকলিপি দিয়েছে।
স্থানীয় বিশ্লেষক ও সাংবাদিক পলাশ রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রথমে লাশকাটা ঘরটি জঙ্গল পরিষ্কার করে নির্মাণ করা হলেও এখন সেখানে ঘনবসতি হয়েছে। কিন্তু মরদেহের পচা দুর্গন্ধ আর ভয়ে এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে বসবাসে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আবাসিক এলাকাটি।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, ইতোমধ্যে লাশকাটা ঘরটি স্থানান্তর করার দাবিতে ঝালকাঠির নাগরিক ফোরাম নেতৃবৃন্দ একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সিভিল সার্জন বলেছেন, সদর হাসপাতাল ভবনের সম্প্রসারিত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঘরটি দ্রুত সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই জেলা প্রশাসক।
এদিকে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডে একটি লাশকাটা ঘর নির্মাণ করা হলেও তাতে শুরু হয়নি কোনো কার্যক্রম। বরং সেখানে সদর হাসপাতালের এক স্টাফ বসবাস করছেন।