রংপুরে জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে বিপাকে রোগীরা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

দুই দিন ধরে সর্দি ও কাশিতে ভুগছেন লিটন মিয়া। কলেজ বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। গত শুক্রবার বাড়ির পুকুরে নেমে মাছ শিকারের সময় বেশি ঠান্ডা লাগায় এখন সর্দি কাশিতে আক্রান্ত। সোমবার (২৩ মার্চ) সকালে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন কিন্তু সর্দি কাশির কথা শুনে তাকে কোনো সেবা দেয়নি চিকিৎসকরা।

পীরগাছা থেকে এসে ভর্তি হয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে। সেখানে সাধারণ ওয়ার্ডে তাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। লিটন মিয়ার মতো অনেক রোগী সর্দি কাশি আর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

এসব রোগীর মধ্যে কারো কারো উচ্চ কাশি, হাঁচি আর যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথার আহাজারিতে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ওয়ার্ডটিতে। তাদের দেহে করোনার কোনো সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তাও পরীক্ষা করা হয়নি। একারণে সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে রমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জ্বর, সর্দি, কাশির রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়ছেন তাদের স্বজনরা। রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক রোগীকে শুধু পরামর্শ আর কিছু ট্যাবলেট হাতে ধরে দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

রমেকের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত অন্তত ২০ জন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় হাসপাতালে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি রোগীর স্বজনদের।

তারা জানান, সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে হাসপাতালে আসলে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ওই সব রোগীদের যে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে সেই ওয়ার্ড থেকে বাকি রোগীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে দিচ্ছেন।

হারুন-অর-রশিদ নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসক, নার্সদের কোনো সুরক্ষা নেই। সবার মধ্যে করোনা আতঙ্কে এক ধরণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। একারণে রোগীরা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না।

যাদের সমস্যা নেই তাদেরকে ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে দাবি করে রমেক হাসপাতালের পরিচালক ফরিদুল ইসলাম জানান, রোগীদের চিকিৎসাসেবায় কোনো কমতি হচ্ছে না। বরং করোনা আতঙ্কে কিছু দিন ধরে রোগী ভর্তির চাপ কমে গেছে।

অন্যদিকে রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, যেসব রোগী হাসপাতালে রয়েছে, এরা সাধারণ জ্বর সর্দির রোগী। করোনাভাইরাস থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তারপরও আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

তবে এ ধরণের কত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবিষয়ে পরিসংখ্যান নেই তার কাছে। তিনি বলেন, বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে (সঙ্গরোধ) রাখা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. রুস্তম আলী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালে তীব্র মাস্ক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা মারাত্মক উৎকণ্ঠায় পড়েছে। ঢাকায় স্বাস্থ্য দফতরে মাস্কের চাহিদা দিয়েও তা প্রয়োজন মত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্থানীয়ভাবে কারুপণ্য থেকে সরবরাহ করা মাস্ক দিয়ে সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হচ্ছে।