পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বৃহৎ পরিকল্পনামাফিক সময়সাপেক্ষ কাজ করার সুযোগ কম তবে এই সরকার কয়েকটি বিষয় গুরুত্বসহকারে ভাবছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঢাকার খালগুলোকে উদ্ধার করে ব্লু নেটওয়ার্ক করার পরিকল্পনা হচ্ছে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও বন অধিদপ্তরে "বিগত ১০০ বছরে ঢাকা শহরের নগর প্রতিবেশ, ভূমি ব্যবহার, এবং জীববৈচিত্র্যে স্থানিক ও সময়ানুক্রমিক পরিবর্তন এবং কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন" শীর্ষক এক মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এর সহযোগিতা ও ইউএনডিপি, বাংলাদেশ- এর উদ্যোগে এ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে সিটি করপোরেশন, রাজউক, এর সঙ্গে যারা দীর্ঘদিন খাল নিয়ে গবেষণা করেছেন তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো। কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লু নেটওয়ার্ক এর প্ল্যান আমরা করতে পারি সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই প্ল্যান করতে আমাদের ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগতে পারে বা এর একটু বেশি।
এসময় তিনি খাল দখল থেকে পুনরুদ্ধার করতে সুসংহত বাজেট তৈরির আহ্বানও জানান।
রাজধানী ঢাকার সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক বিশেষ এই কর্মশালায় গবেষণালব্ধ একটি বিশদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের টিম লিডার ও সিইজিআইএস এর প্রিন্সিপাল স্পেশালিস্ট ড. ফারহানা আহমেদ।
প্রতিবেদনটিতে উঠে আসে, ঢাকা গত এক শতাব্দী ধরে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং এ সংশ্লিষ্ট পরিবেশ-প্রতিবেশগত উল্লেখযোগ্য স্থানিক এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনগুলি প্রত্যক্ষ করে আসছে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে নগর অবকাঠামো বৃদ্ধির ফলে ক্রমান্বয়ে এখানকার সবুজ আচ্ছাদন ও জলাভূমির পরিমাণ সমহারে হ্রাস পাচ্ছে এবং এই নগরের ভূমিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বাষ্পীভবন ও বায়ু দূষণ বাড়ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাসের জন্য এই শহর দিনে দিনে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
সিইজিআইএস এর মাধ্যমে পরিচালিত এই গবেষণা ঢাকার বাস্তুতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে পুনরুদ্ধারের সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ ইত্যাদির ভিত্তিতে সিইজিআইএস কাজটি সম্পন্ন করে একটি খসড়া কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে।
প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনাটিতে ঢাকা শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ১৯টি স্থানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে তিনটি বৃহত্তর কর্মসূচির আওতায় ১৯টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। কৌশলগত এই কর্মপরিকল্পনাটি যাচাই বাছাইপূর্বক বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
পরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন ঢাকাবাসীকে একটি সুন্দর, সুস্থ ও পরিবেশবান্ধব নগরী উপহার দেবে বলে জানায় তারা।
সিইজিআইএস এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ. খান এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এর সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর প্রশাসক মো: নজরুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এর প্রশাসক মো: মাহমুদুল হাসান, এনডিসি, রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: ছিদ্দিকুর রহমান সরকার (অব), বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মো: আমীর হোসাইন চৌধুরী সহ অনেকে।
