সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছ
বাংলাদেশে করোনাক্রান্তিতে প্রকৃতির বুকে চলছে চৈত্র সংক্রান্তির ক্ষণগণনা। চৈত্রের ঝলমলে রোদে হেলে দুলে হাসছে সবুজ প্রকৃতি। গাছে গাছে ফুল ফলে খেলা করছে ভ্রমর। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন দেখতেও মানা। কারণ করোনার সংক্রমণ রোধে থাকতে হচ্ছে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরবন্দি। কিন্তু চোখ তো বন্ধ নেই।
রোদের ঝলকে চোখের পলকে প্রকৃতি উঁকি মারছে নিত্যদিন। ঘর থেকে জানালার পর্দা সরালেই ছন্দপতন জীবনে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির হাতছানি। সুনসান কোলাহলমুক্ত বাড়ির ছাদের ওপরে দাঁড়ালে নজর কাড়ছে সজনে ডাঁটায় ভরা গাছটা।
সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালেও চোখের পলক থেকে দূরে থাকেনি ছোট ছোট সবুজ পাতা ভেদ করে ঝুলে থাকা সজনে ডাঁটা। পুরো গাছ সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে।
সজনে ডাঁটায় ভরা গাছটা দেখে মনে পড়ছে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতাটি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা কবিতাটি ৬৮ বছর পর আজও প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে আছে। কবিতায় কবির মতে-
“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা, তুই কবে আসবি?
কবে ছুটি ?”
কবিতার এই আংশিক লাইনগুলো মনে করতে করতে ছাদের ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম। জানালার পাশে বসে মোবাইলফোনের বাটন টিপে খোঁজ নিলাম সজনে ডাঁটার বাজার কেমন। যান্ত্রিক যোগাযোগে জানানো হলো- কাঁচাবাজারে সজনে ডাঁটা আসতে শুরু হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম, তাই দাম বেশি। প্রতি কেজি সজনে ডাঁটা এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শহরে চোখে পড়া নেতানো সজনে ডাঁটার মতো গ্রামেও গাছে গাছে ঝুলছে সজনে ডাঁটা। তবে এখন করোনার প্রভাবে বাজারে সরবরাহ কম। সজনে ডাঁটা যেমন প্রচণ্ড গরমে দেহ সতেজ ও ঠাণ্ডা রাখে। তেমনি এর পাতা আঞ্চলিক খাবার ‘শোলকা’তে ব্যবহার হয়।
সজনে পাতায় ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আয়রন ও পটাসিয়াম রয়েছে। কারও কারও মতে, সজনের পাতায় অরেঞ্জ ও লেবু থেকে সাত গুণ বেশি ভিটামিন-সি আছে। গাজর থেকে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন-এ, দুধ থেকে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও ডিম থেকে দুই গুণ বেশি প্রোটিন আছে। এছাড়াও শাক থেকে ২৫ গুণ বেশি আয়রন এবং কলা থেকে ৩ গুণ বেশি পটাশিয়াম আছে।
সজনে পাতা ও ডাঁটা হার্ট ভাল রাখা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও রক্তের সুগার লেভেল কমিয়ে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ, দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, রক্তশূন্যতা দূর, বাতের ও হাঁটুর ব্যথা উপশমে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।