ঈদের আগেই সুখবর পাচ্ছেন ২৮৩ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে আশার আলো দেখছেন ২৮৩টি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। মামলাসংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে ঈদের আগেই এসব কলেজ সরকারিকরণের গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২৮৩ কলেজ সরকারিকরণ সংক্রান্ত ফাইল এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই এসব কলেজ সরকারিকরণের গেজেট প্রকাশ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই গেজেট ঈদের আগেই প্রকাশের সম্ভাবনা আছে।
আর চলতি মাসের প্রথম দিনে ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারি আত্তীকৃত বিধিমালা ২০১৮’ জারি করেছে সরকার। অনেকদিন ধরেই ঝুলে ছিলো এসব কলেজের সরকারিকরণের গেজেট। বেশকিছু কলেজের মামলাও চলছিল। সেসব মামলাসংক্রান্ত জটিলতা এখন শেষ পর্যায়ে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগেই খুশির সংবাদ দিতে যাচ্ছে সরকার। খুব দ্রুতই কলেজগুলোর সরকারিকরণের গেজেট প্রকাশ হতে যাচ্ছে। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের অপেক্ষায়।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ইতোমধ্যে জারি হয়েছে। আমরা সবকিছু সংশোধনী করে চূড়ান্ত ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) এখন সই করলেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী কিছু বিষয়ে সংশোধনী দেন তবুও ঈদের আগেই গেজেট প্রকাশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।
এছাড়া প্রায় ২১টি কলেজের আইনি জটিলতা চলছে। খুব দ্রুতই এগুলো নিষ্পত্তি হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিধিমালা প্রকাশ করার আগে ফুঁসে উঠেছিলেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। তারা বলেছিলেন, বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারে যেন অন্তর্ভুক্ত না করা হয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। এরপর আন্দোলনের ঘোষণাও আসে সেখান থেকে। সবদিক বিবেচনা করে সরকার ২৮৩ বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের যোগ্যতা অনুযায়ী পিএসসির অধীনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেন। এর ফলে এখন উভয়পক্ষে সমতা বিরাজ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিধিমালায় বলা হয়, কোনো শিক্ষক শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্যে ওই ক্যাডারের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে পিএসসির অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। কোনো শিক্ষক পিএসসির অধীনে নেওয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিতে পারবে। যোগদানের তারিখ থেকেই শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হবেন এসব শিক্ষকরা। পাশাপাশি ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া শিক্ষকরা বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও দপ্তরে বদলি হতে পারবেন। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক ও কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট কলেজ সরকারিকরণের তারিখ থেকে বিদ্যমান জাতীয় বেতন স্কেলের সংশ্লিষ্ট গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে স্ব-স্ব পদের বেতন-ভাতাদি প্রাপ্য হবেন। তবে বিধিমালা অনুযায়ী সাধারণভাবে সরকারি হতে যাওয়া কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকরা নন-ক্যাডার হিসেবে নিজ নিজ পদে নিয়োগ পাবেন। তাদের চাকরি বদলিযোগ্য হবে না।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই, সেগুলোয় একটি করে কলেজ জাতীয়করণের জন্য ২০১৬ সাল থেকে তালিকাভুক্তির কাজ শুরু করে সরকার। ২৮৩ কলেজকে সরকারিকরণের জন্য চূড়ান্ত করা হলে সরকারি কলেজের শিক্ষকরা বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি করেন। এ নিয়ে আন্দোলনও করেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ২৮৩ কলেজের বাদ পড়া শিক্ষকদের আত্তীকরণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ২৮৩ কলেজ পূর্ণাঙ্গ সরকারি না হওয়ায় শিক্ষকদের বদলি, পদায়ন এবং মর্যাদা কী হবে, তা আটকে যায়।