হাঁস এনে দিয়েছে হাসি

  • সাজন আহাম্মেদ, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জ: জেলার তাড়াইল উপজেলায় তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে শতাধিক পরিবার।

সিলেট, নেত্রকোণা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ১৭টি জেলায় যাচ্ছে এখানকার ফুটানো হাঁসের বাচ্চা। আর এ সকল খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার লোকের। এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে এ ব্যবসা। ফলে দিন দিনই এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার ঋণ প্রদান কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারের পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের ঋণ সহায়তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে অভাব জয় করেছেন তাড়াইল উপজেলার দামিহা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন। তিনি জানান, তার পিতা মারা যাওয়ার সময় পৈতৃক ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই পান নি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে নাখেয়ে দিন কাটাতে হতো। ১৯৯৪ সনে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথম তুষপদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের ঋণের টাকায় ডিম কিনে তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন শুরু করি। এ কাজে লাভও আসছিল ভাল।

এক সময় নিজের পায়ে দাঁড়ালাম। আবুল হোসেন জানান, এ পদ্ধতিতে প্রয়োজন হয় ধানের তুষ, হারিকেন বাতি, বাঁশের চাটাই, ঝুড়ি এবং লেপ বা তোষক। এ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি সুখ ও সচ্ছ্বলতার দেখা পেয়েছেন। পরে তার কাছ থেকে দেখে ও শিখে আরো অনেকেই এ ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তাড়াইলের দামিহা ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি গ্রামে শতাধিক পরিবার এ ব্যবসা করছে। এর মাধ্যমে দারিদ্রপীড়িত এসব পরিবারে সচ্ছ্বলতা ফিরেএসেছে। অভাবের কারণে একসময় কলহ ও অশান্তিতে থাকা বিষন্ন মুখগুলোতে এ কাজএনে দিয়েছে হাসি।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/12/1534050269792.jpg

খামারিরা জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে ডিম সংগ্রহ করে এনে এসব খামারে বাচ্চা ফুটানো হয়। এখানকার ফুটানো হাঁসের বাচ্চা জেলার সীমানা ছাড়িয়ে সিলেট, নেত্রকোণা, যশোর, খুলনা, সাতীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ১৭টি জেলায় বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। পাইকাররা এসে এসব বাচ্চা কিনে নিয়ে যান।

খামারিরা আরো জানান, কেবল উপজেলার দামিহা গ্রামেরই অর্ধশতাধিক খামার রয়েছে। কিন্তু তাদের খামার সম্প্রসারণসহ নানা ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে তারা জানান।

কয়েকজন খামারি জানান, এখানকার খামারিদের এ ব্যবসায় বড় অসুবিধা হচ্ছে পূঁজি সংগ্রহ। ব্যাংক থেকে তারা সহজে ঋণ পাচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ। ব্যাংক ঋণের সুবিধা পেলে এ ব্যবসার পরিধি আরো বাড়বে বলে খামারিদের ধারণা। পাশাপাশি ডাক প্লেগ নামে একটি রোগ খামারিদের প্রধান অন্তরায় বলে জানালেন তারা। এক্ষেত্রে বাজারে সঠিক কোন ওষুধ তারা পাচ্ছেন না এবং স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও বিশেষ কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে তাদের অভিযোগ।

তাড়াইলে তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানো খুবই লাভজনক ব্যবসা বলে উল্লেখ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মান্নান খামারিদের বিভিন্নভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি খামারিদের প্রয়োজনীয়প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জানান, হাওর অধ্যুষিত তাড়াইলের প্রাকৃতিক পরিবেশ এক্ষেত্রে খুবই অনুকূল বলে যে কেউ প্রশিক্ষণ নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করতে পারে।