আসন সমঝোতায় 'বিলম্বিত' বিএনপির ঐক্য প্রক্রিয়া
ঢাকা: বরাবরই জাতীয় নির্বাচনের আগে জোরেশোরেই শোনা যায় দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের কথা। এসময় কদর বেড়ে যায় ‘খুচরা’ রাজনৈতিক দলগুলোর। যাদের কখনোই কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম থাকে না। না অফিস, না আছে নেতাকর্মী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে অক্টোবরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ইভিএমসহ কেন্দ্র নির্বাচনের কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সারাদেশে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। অপরদিকে দ্বিতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন কথা শোনা গেলেও দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দলের নেতাকর্মীদের মামলা নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছে দলটি।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এদিকে সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা করছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে যুক্তফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিয়মিত বসছেন।
সম্প্রতি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রস্তাব দেন। এসময় বি চৌধুরী যুক্তফন্টের পক্ষে ১৫০ আসন দাবি করে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারই দেয়া সাক্ষাৎকারে উঠে আসে। তবে মির্জা ফখরুল তাৎক্ষণিক কোন জবাব দেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’ এরপর আর ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কোন কথা শোনা যায়নি।
সম্প্রতি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। সরকারের বাইরে সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, গোষ্ঠী যারা গণতন্ত্রকামী তাদেরকে নিয়ে ঐক্য করা হবে। তবে ঐক্য প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আলোচনা চলছে।
জাতীয় ঐক্য কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিএনপির দাবির সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে। আমরা জোট করছি না। তবে জাতীয় ঐক্য হতে পারে। তবে তার আগে নিশ্চিত হতে হবে ক্ষমতায় গেলে তারা কিভাবে মূল্যায়ন করবে। আমাদের আহ্বান হল, ভারসাম্যের ভিত্তিতে ঐক্য করতে হবে। নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তারা ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করবে।
বিএনপি ও যুক্তফ্রন্টের যখন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে এমতাবস্থায় যুক্তফ্রন্টের আরেক উদ্যোক্তা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাক্ষাত করেন। এতে আলোচনা ভিন্ন মোড় নেয়।
এদিকে যুক্তফন্টের ১৫০ আসন চাওয়াকে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা ভালোভাবে নেয়নি। সম্প্রতি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এক আলোচনা সভায় জোটের শরিক নেতাদের বক্তব্যে তারই প্রতিচ্ছবি উঠে আসে। আলোচনায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যন মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বীর প্রতীক ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, আমরা যারা দীর্ঘ ৯-১০ বছর জোটের সঙ্গে আছি, হামলা মামলার শিকার হচ্ছি তার কি মূল্যায়ন?
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, কোথা থেকে ব্যাঙের ছাতার মতো কেউ গজিয়ে উঠে বলবে এটা চাই, ওটা চাই। এমনটা হলে জোটের শরিকদের কিভাবে মূল্যায়ন করবে?
জোট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সময়মতো জাতীয় ঐক্য হবে। আমরা আপাতত নেত্রীর মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করব। আসন বন্টন ও মূল্যায়ন নিয়ে কথা বলার সময় এখনও আসেনি।
বামপন্থী ছোট দলগুলোকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আনতে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও জামায়াতে ইসলামী নিয়ে এলার্জি আছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য গঠনে জামায়াতে ইসলামীও বাধ সাধতে পারে বলেও মনে করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।