২৭ দিনে খাল খনন করে আশকোনার জলাবদ্ধতার নিরসন
রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধতার নিরসন হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে হাজিক্যাম্প, মোল্লারটেক, প্রেমবাগান, আশকোনা, তালতলা, দক্ষিণ খান, আশিয়ান সিটি, কাওলা বাজার, বনরূপা হাউজিং এলাকায় একটু খানি বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যেত। ওইসব এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। ওই এলাকার বৃষ্টির পানি অপসারণে সম্পূর্ণ নতুনভাবে একটি খাল করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
সিভিল এভিয়েশনের জায়গায় নিজেদের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এলাকার মানুষের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে আগে কাজ পরে অর্থায়নের চিন্তা থেকেই এই কাজ করেছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
গত ৩০ মে লা মেরিডিয়ান হোটেলের বিপরীত পাশে সিভিল এভিয়েশনের জায়গায় এই খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র। তখন বলেছিলেন মাত্র ২১ দিনের মধ্যে খাল খনন কাজ শেষ করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা হবে। একদম সমতল জায়গায় নতুনভাবে এই খালটি খনন করা হয়েছে। প্রায় ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার খাল খনন করতে সময় লেগেছে ২৭ দিন। নির্ধারিত সময়ের ৬ দিন বেশি লাগার মাঝে কয়েক দিনের অতি বৃষ্টি বলে জানিয়েছে ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খাল খনন নিয়ে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মেয়রের ইচ্ছা ও দিক নির্দেশনা ছিল বলে সময়ের মধ্যে কাজ করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সহায়তায় আমরা ২৭ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পেরেছি। আমাদের টার্গেট দেওয়া ছিল ২১ দিন কিন্তু মাঝখানে অতি বৃষ্টির কারণে কাজ করতে একটু সমস্যা হয়।’
আশকোনা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এত অল্প সময়ের মধ্যে সমতল ভূমিতে এভাবে নতুন খাল খনন করা আগে দেখি নাই। এই খাল খনন করে ডিএনসিসি একটি উদাহরণ তৈরি করল। উদ্বোধনের পর মনে করেছিলাম সরকারি কাজ এই বছর শুরু করল কত বছরে শেষ হবে তার কোন হিসাব নাই। কিন্তু এবার দেখলাম সত্যি অন্যরকম। এই খাল খননের ফলে আমাদের এলাকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হলো।’
প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি টাকা। তার অর্ধেকের কম টাকার মধ্যেই কাজ শেষ করা হয়েছে। মাটি উত্তোলন কাজে সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে দিতে হয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া ডিএনসিসি’র এক্সাভেটর, পে-লোডার ব্যবহারে জ্বালানি খরচ এবং ডিএনসিসির অন্যান্য খরচ যোগ হবে। তাতেও নির্ধারিত ব্যয়ের কমেই খাল খনন কাজ শেষ হতে যাচ্ছে।
খালটি যেন পুনরায় ভরাট না হয়ে যায় তার জন্য প্রায় ৪ কিলোমিটার সাইকেল লেন করার পরিকল্পনা করছে ডিএনসিসি। শনিবার (২৭ জুন) বেলা ১১টায় খননকৃত খালের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে আশকোনা হাজী ক্যাম্প পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সাইকেল লেন করার প্রস্তাব দেবে ডিএনসিসি। ওই এলাকায় মানুষের যাতায়াত বাড়বে এবং খালের স্রোতধারা বজায় থাকবে। খালপাড় যেন কেউ ভরাট করতে না পারে সেটিও নিশ্চিত হবে।
সিভিল এভিয়েশনের এই খালটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এর গভীরতা ২০ ফুট। ১:১ স্লোপে খালটি খনন করা হয়েছে। এতে সব সময় পানির প্রবাহ থাকবে। খাল খনন করতে প্রায় ২৭ হাজার কিউবিক মিটার মাটি ও অন্যান্য বর্জ্য উত্তোলন করা হয়।