চার্জশিটভুক্ত আসামি তবুও চাকরিতে বহাল তবিয়তে!
#বেরোবি চলছে উপাচার্যের ইচ্ছায়
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়া স্বত্ত্বেও দীর্ঘদিন থেকে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তিন কর্মকর্তা। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি মামলার তথ্য গোপন করে পদোন্নতিও নিয়েছেন তারা।
অথচ একই মামলার আসামি হওয়ায় সিনিয়র কর্মকর্তা উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ শাহজাহান আলী মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচিত ওই মামলায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জেল খেটেছেন বেরোবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল মিয়া।
এ বিষয়ে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ জন কর্মকর্তা লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও উপাচার্যকে ম্যানেজ করে পদোন্নতিসহ বহাল তবিয়তেই রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, উপ-রেজিস্ট্রার মোর্শেদুল আলম রনি ও হিসাব শাখার উপ-পরিচালক খন্দকার আশরাফুল আলম। সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়াই উপাচার্য ওই তিনজনকে বহাল রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি দুদকের মামলার নথি এবং ওই তিনজনের মুচলেকা দিয়ে জামিন নেয়ার কাগজপত্র বার্তা২৪.কম এর হাতে এসেছে। এসব নথি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ব্যতিত ৩৩৮ জন কর্মচারীকে নিয়োগ ও শর্ত পূরণ ছাড়াই পারস্পরিক যোগসাজশে উচ্চতর পদে নিয়োগের অভিযোগে দুদকের রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল করিম ২০১৩ সালের অক্টোবরে দন্ডবিধি ধারা: ৪০৯/১০৯, তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন (যার নম্বর-স্পেশাল কেস নম্বর- ৮/২০১৭, কোতয়ালী থানার মামলা নম্বর- ৪০/২০১৩, জি আর কেস নম্বর ১০৯৮/১৩)।
ওই মামলায় বেরোবির উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মন্ডল, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, উপ-রেজিস্ট্রার মোর্শেদুল আলম রনি ও হিসাব শাখার উপ-পরিচালক খন্দকার আশরাফুল আলমসহ তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়াকে মামলায় আসামি করা হয়।
দুদক দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ বিশেষ জজ আদালত রংপুর এর নিকট উক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত একই বছরের ২০ জুলাই চার্জশিট আমলে নিয়ে আদালতে হাজির উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মন্ডল ও সাবেক ভিসি অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়াকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
ওই বিচারিক আদালতে ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, মোর্শেদুল আলম রনি ও খন্দকার আশরাফুল আলমকে অভিযোগ হতে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু দুদক ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল (নম্বর ৩৮৯/২০১৮) দায়ের করলে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে তাদের অব্যাহতি দেয়ার আদেশ বাতিল করে রুল জারি করেন। অভিযুক্ত তিনজনকে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, মোর্শেদুল আলম রনি ও খন্দকার আশরাফুল আলম হাজির হয়ে ২০ হাজার টাকা মুচলেকা প্রদান করে আদালত থেকে জামিনে নেন। এখনো তারা জামিনে আছেন।
বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও জামিনের তথ্য গোপন করে প্রায় দেড় বছর যাবৎ তারা চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। কিন্তু চাকরি বিধি অনুযায়ী, আত্মসমর্পণের পর জামিনে মুক্তি লাভ করলেও সাময়িক বরখাস্ত থাকার কথা। উচ্চ আদালতের নিদের্শনার বিষয়টি দুদকের জেলা অফিস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে লিখিতভাবে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি আমলে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একজন শিক্ষক, চার কর্মকর্তা ও সাত কর্মচারীকে গ্রেফতার বা জামিনে থাকার কারণে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করে রেখেছে।
এ বিষয়ে দুদকের মামলার কারণে বরখাস্ত হয়ে থাকা উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মন্ডল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'অন্যরা কিভাবে চাকরি বহাল রয়েছে, তা আমি জানি না। তাদের থাকা না থাকা নিয়ে আমার জানার বা বলার আগ্রহ নেই। আর আপনাদেরকে (মিডিয়াকে) বলেই বা কি হবে। সবাই তো সবই জানে।'
অন্যদিকে তথ্য গোপন করে চাকরিতে বহাল তবিয়তে থাকা হিসাব শাখার উপ-পরিচালক খন্দকার আশরাফুল আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে বার্তা২৪.কম। তিনি বাহিরে জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকার কথা বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমি চাকরিতে যোগদান করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সমস্যা পেয়েছি। যা আগে থেকেই ছিল। এসব সমস্যার মধ্যে অনেকের পদোন্নতি আটকে ছিল। আমি তাদের পদোন্নতি দিয়েছি। এ নিয়ে অনেকে আবার নাখোশ। এ কারণে অভিযোগ আসছে। তবে ওই তিন কর্মকর্তার পদোন্নতি ও চাকরিতে বহাল থাকার বিষয়টি আমার ইচ্ছাতে হয়নি। এটা নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। তারপরও এখন যেহেতু অভিযোগ উঠেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আমি মনে করি, তারা দোষী সাব্যস্ত হলে চাকরিতে বহাল থাকার সুযোগ থাকবে না।'