বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের শুল্ক কমানোর সুযোগে আড়াই বছর পর আবারও বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শুরু হয়েছে চাল আমদানি।
রোববার (১৭ নভেম্বর) রাতে প্রথম চালানে ১০৫ মেট্রিক টন চাল প্রবেশ করেছে বন্দরে। আমদানি বাড়লে বাজারে দাম কমবে বলছেন আমদানিকারকেরা।
আমদানিকারক যশোরের মাহাবুবুল আলম ফুড প্রোডাক্ট ভারত থেকে ১০৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেন। চালের রফতানিকারক পশ্চিমবঙ্গের সুধর্মআয়াত নির্যাত প্রাইভেট লিমিটেড। বেনাপোল বন্দর থেকে চাল খালাসের দায়িত্বে রয়েছে হোসেন অ্যান্ড সন্স নামের একটি সিএন্ডএফ এজেন্ট।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি, রফতানি সমিতির সাধারন সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি, দেশের আপামর জনগণের ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে চাল আমদানির ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ, বিদ্যমান রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ মোট করভার ৬২.৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে গত ২০ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল এনবিআর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আমদারিকৃত ১০৫ টন চালের আমদানি করা দাম ৪৫ হাজার ১৫০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৪ লাখ ১৮ হাজার। আমদানি প্রতিকেজি চালের দাম পড়েছে প্রায় ৫১ টাকা। এরপর পরিবহন, বন্দরের ভাড়া, ব্যাংক খরচসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিকেজি ৫৩ টাকা পড়বে। বাজারে এই চাল ৫৪ টাকায় বিক্রী হতে পারে ।
জানা যায়, সংকট দেখিয়ে ২০২২ সালে দেশের বাইরে চাল রফতানি বন্ধ করে ভারত সরকারের বানিজ্য মন্ত্রনালয়। পরে চাল রফতানির অনুমতি দিলেও কঠিন শর্তের কারনে রফতানি করেনি ব্যবসায়ীরা। অবশেষে বাংলাদেশে চালের বাজার সাম্প্রতি বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকার আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে গত সপ্তাহে দেশের অনান্য বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হলেও রোববার বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হয়। ভারতও চাল রপ্তানিতে মূল্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আমদানি বাড়বে এবং দেশের বাজারে দাম দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তারা আশা করছেন আমদানিক্রকেরা।
চাল ব্যবসায়ী রহমত জানান, গত ১১ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশে ২৪টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেন। এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেন।আমদানিকারকের মধ্যে যশোর এলাকার ১২ জন আমদানিকারক ৭৩ হাজার সিদ্ধ ও ১৯ হাজার আতপ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল আমদানি করে বাজারজাত করতে হবে। তবে অনান্য বারের মত এবারও সবাই চাল আমদানি করতে পারবে কিনা সন্দেহ ব্যবসায়ীদের। কারণ আমদানিতে অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত না করে আত্মীয় করনে বরাদ্ধ দেওয়া হয়ে থাকে।
বেনাপোল চেকপোস্ট উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী হেমন্ত কুমার সরকার জানান, তাদের কাছ থেকে শুধু মাত্র একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান (মাহাবুবুল আলম ফুড প্রোডাক্ট) প্রথম চালানে ১০৫ মেট্রিক টন চালের আইপি সার্টিফিকেট নিয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানের আরও ১০০ মেট্রিক টন চাল বিকালের দিকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের কথা রয়েছে।
২০২৩ সালের ২০ জুলাই দেশের বাইরে সিদ্ধ ও আতপ চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। তার আগে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ ছিল। তবে বন্দর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিলে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শর্তে বলা হয় বরাদ্দপ্রাপ্ত আমদানিকারকদের আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ, গুদামজাত ও বাজারজাতকরণের তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে অবহিত করতে হবে, বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি ইস্যু করা যাবে না, আমদানিকৃত চাল অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে পুনরায় প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানি করা চাল বস্তায় বিক্রি করতে হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, সকালে বেনাপোল বন্দরে ১০৫ মেট্রিক টনের (৩ ট্রাক) একটি চালান প্রবেশ করেছে। কাস্টমস থেকে শুল্কায়নের পর কাগজপত্র দেখে দ্রুত ছাড় দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, চলতি বছরে ২১ মার্চ ও ১৬ এপ্রিল দুই ধাপে দেশের ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। চাল রপ্তানিতে ভারত সরকারের শুল্ককর আরোপ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে অনুমতি থাকলেও এতদিন চাল আমদানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা।