‘জানুয়ারিতে নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়লেও গোপন রাখে সরকার’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি করোনার নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়লেও তা গোপন রাখা হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সরকার তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপন করে এবং সংক্রমণের বাস্তব চিত্র গোপন করে। সরকার জনস্বার্থ উপেক্ষা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমগ্র প্রশাসনকে ব্যস্ত করে রাখে। এতে করে করোনা সংক্রমণ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বিলম্বের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতা আজ পুরো দেশকে এক বিপদ সঙ্কুল পথে নিয়ে চলেছে।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সরকারের সমন্বয়হীনতা ও কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুরু থেকেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারের অসহায়ত্ব ও চরম সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। জাতীয় পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না। পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। সরকারী সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না। লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। পোশাক শিল্পের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় অবগত নয়। কোভিড-নন কোভিড হাসপাতাল নির্ধারণ, চিকিৎসকগণ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম ছিল চরম হতাশাব্যঞ্জক।

হাসপাতালের প্রস্তুতি না থাকা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতাল গুলোকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করা হয়নি। তাছাড়া হাসপাতালকে কোভিড-নন কোভিড চিহ্নিত করে আলাদা না করায় দেশে স্বাস্থ্য সেবায় চরম নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। করোনা রোগীরা যেমন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি, তেমনি সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।

তিনি বলেন, দেশের অন্তত: ৪৬টি জেলায় যথাযথ চিকিৎসার সুবিধা সম্বলিত ওট, হাইফ্লো অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা এক বছরেও গড়ে তোলা হয়নি। দেশের ৭৯টি সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতায় ৫০% অগ্রগতিও হয়নি এক বছরে।

করোনার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত কর্মহীন মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রেরিত ত্রাণ সামগ্রী সরকারি দলের স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, নেতারা ব্যাপকভাবে লুট করেছে। চাল-ডাল-তেল চুরির শত শত ঘটনা প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সরকারের নিষেধাজ্ঞা, লকডাউন পলিসি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দোকান কর্মচারী ও পরিবহন শ্রমিকদের খাবার, আর্থিক সহায়তা না দিয়ে বন্ধের ঘোষণা চরম অমানবিকতার পরিচয় বহন করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের করোনা মহামারী দমনে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার বিকল্প নাই। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে একটি উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে আবদ্ধ না থেকে GAVI- এর সহায়তায় অন্য কোম্পানীর টিকা যেমন জনসন, মর্ডানা, ফাইজার ইত্যাদি সংগ্রহের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, জাতির এই চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমরা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত আরএমজি সেক্টরে কয়েক হাজার গামেন্টস বন্ধ হয়েছে। ৪০ লক্ষ শ্রমিকের জীবন জীবিকা আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই দশ লক্ষ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে।অর্থের অভাবে ঢাকা ছাড়ছে শত শত পরিবার। তাই সরকারের প্রতি আমাদের আবারও আহ্বান আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগী হই।