‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উচ্ছৃঙ্খল পথে ডাইভার্ট করা সরকারের চক্রান্ত’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান

  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সরকার চেয়েছিল উসকানি দিয়ে একটা শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে উচ্ছৃঙ্খল পথে ডাইভার্ট করে বিরোধী দলের ওপর তার দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে। এটাই ছিল চক্রান্ত, যা তারা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার অপরাধী নির্ধারণের আগেই বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে জেলে পুরে দিয়ে তাদের স্বৈরাচারী চরিত্রেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে।

ফ্রান্সের উদাহরণ টেনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা প্রশ্ন তুলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে একদিনে ৬০০ এর ওপরে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কি সরকার অপরাধী নির্ধারণের আগেই বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে জেলে পুরে দিয়েছিল? প্যারিসের প্রতিবাদী লাখ লাখ মানুষ সবাইকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করেছিল? বিএনপির চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির আজকের যে সংগ্রাম তা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠান সংগ্রাম, ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম নয়।

বার্তা২৪.কম’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. আব্দুল মঈন খান। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

বার্তা২৪.কম: ক্ষমতাসীনরা বলবার চেষ্টা করছে ৫ নভেম্বর (রোববার) ১৮টি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই দায়িত্বটি আসলে কে নেবে? আটক ছাত্রদলের কয়েকজন অগ্নিসংযোগের কথা স্বীকার করেছে...

ড. আব্দুল মঈন খান: প্রশ্নটি আসলে সরকারকে জিজ্ঞেস করলে যুক্তিযুক্ত হবে কেন না দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব সরকারের। সত্যি কথা বলতে কি, আজকে সরকার নিজের জালে নিজেই আটকা পড়েছে। বিগত ১ বছর যাবৎ আমরা প্রথমে বিভাগীয় শহরে সভা করেছি। তারপর জেলা-উপজেলায় সভা করেছি, তারপর বাংলাদেশের প্রায় ৬ হাজার ইউনিয়নে একদিনে পদযাত্রা করেছি, যা এ অঞ্চলের রাজনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি নতুন সংযোজন। লাখ লাখ মানুষ এসব কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হযেছে। একটি উদাহরণ কি সরকার দেখাতে পারবে যেখানে এক সেকেন্ডের জন্য শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে? গত এক বছর যাবৎ সরকার বার বার উসকানি দিয়েছে। তাদের এটাই ছিল চক্রান্ত। তারা চেয়েছিল উসকানি দিয়ে একটা শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে উচ্ছৃঙ্খল পথে ডাইভার্ট করে দেওয়া, তারপরে বিরোধী দলের ওপর তার দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া। অবশেষে সেই পরিস্থিতি সরকার নিজেরাই সৃষ্টি করেছে গত ২৮ অক্টোবরে (২০২৩)।

মজার বিষয় হচ্ছে-যে পরিকল্পনা সরকার করেছিল, ইতিমধ্যেই স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে সেটা উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে। তারা বুঝতে পারেনি, আজ থেকে ৫/১০ বছর আগে সংবাদ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কিভাবে প্রাচারিত হত... আর আজকে কিন্তু টেকনোলজির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সরকার কেবল দেশের ভেতরের মানুষকে নয়, বিশ্বের মানুষকে ভাওতা দেবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে আর সেই আগের ফন্দি কাজ করেনি। তার প্রমাণ হচ্ছে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিভাগের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের বিবৃতি, প্রমাণ হচ্ছে -আমেরিকা-যুক্তরাজ্যসহ গণতন্ত্রকামী উন্নত বিশ্বের প্রায় সবকটি রাষ্ট্রের বিবৃতি। প্রমাণ হচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি। প্রমাণ হচ্ছে -হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি বিশ্বের ৮টি মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি। সরকারের সব জারিজুরি আজ প্রকাশ হয়ে গেছে, বিএনপি'র কিছু বলার দরকার হয়নি। সরকার নিজেরা ওয়াকিটকিতে যেসব কথাবার্তা আদান-প্রদান করেছেন তার টেপ কিন্তু টেকনোলজির শক্তিতে জনসমক্ষে প্রকাশিত। আজকে নিজেরা ষড়যন্ত্র করে গাজীপুর থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসী নিয়ে এসে চিফ জাস্টিসের বাড়ির সামনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সেই সন্ত্রাসে বিএনপির সর্বোচ্চ নেতাদের জড়িত করে মিথ্য-কাল্পনিক-বানোয়াট গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর রহস্য আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয়, সারা বিশ্ববাসীর কাছেই তা উন্মোচিত হয়ে গেছে টেকনোলজির কল্যাণে।

সরকার এই লজ্জা রাখবে কোথায়? আজ সেসব গল্প বলে আর লাভ হবে না, লাভ হচ্ছে না। কারণ ওপরে যে স্টেমেন্টগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকেই হয়েছে। সঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, আমরা কিছুদিন আগে প্যারিসে দেখেছিলাম, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে একদিনে ৬০০ এর ওপরে গাড়িতে আগুন দেওয়া/ভাঙচুর হয়েছিল । সেখানে কি সরকার অপরাধী নির্ধারণের আগেই বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে জেলে পুরে দিয়েছিল? অথবা প্যারিসের প্রতিবাদী লাখ লাখ মানুষ সবাইকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করেছিল? সরকার আজ যেসব কথা বলছে, তা অস্থিরচিত্ত মানুষের কথা, এগুলো বাতুলতা মাত্র। ভাবতে লজ্জা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন পর্যায়ে নিপতিত হয়েছে যে এখানে সরকার নিজের ক্ষমতা রক্ষার প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের একজন বীরউত্তমকে পর্যন্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করেছে, জাতির এই লজ্জা আমরা রাখব কোথায়?

বার্তা২৪.কম: নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অনেক বুদ্ধিজীবীরাও এই প্রশ্নগুলো তুলছেন, তারা বলেন-দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা অন্যান্য নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে বিএনপি ততটা সরব নয়, যত তৎপর তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য…

ড. আব্দুল মঈন খান: এই প্রশ্নের উত্তর আসলে খুব সহজ। সহজ এই কারণে যে, এ সমস্যার কথাগুলো আমরা শুধু মুখে বলিনি, ডকুমেন্টেশনও করেছি। আজকে আমরা যে এক দফা দিয়েছি সেটা যদি আপনারা লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, এটা কিন্তু আসলে ফোর ইন ওয়ান। যদি বিস্তারিত পাঠ করেন তাহলে দেখবেন আপনি দ্রব্যমূল্যসহ যা কিছু উল্লেখ করেছেন তার প্রত্যেকটি বিষয় আমাদের এই এক দফায় রয়েছে। আমি মনে করি এ নিয়ে আর অধিকতর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। আপনারা দেখেছেন বিগত এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শুধু নয়, এই সরকারের চরম দুর্নীতি, মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি, বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার, ব্যাংক লোপাটে তাদের যে কাণ্ডকারখানা ...বিভিন্ন প্রজেক্টে যেখানে ব্যয় হাজার কোটি টাকা সেখানে বৃদ্ধি করে দু’হাজার তিন হাজার কোটি টাকা করার যে প্রচেষ্টা..২শ’ বা ৫শ’ টাকার বালিশ ১০ হাজার টাকা, হাজার টাকার পর্দা ৮৩ হাজার টাকায় কেনার কথা এসব কিছু কিন্তু আমরা বিগত এক বছর ধরে মানুষকে বলেছি। আজকে বাংলাদেশের তথাকথিত কিছু আঁতেলদের কথা নিয়ে আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন, আমি কাউকে অসম্মান করতে চাই না, বরঞ্চ আশ্বস্ত করতে চাই, বিএনপি’র আজকের যে সংগ্রাম তা কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম নয়। বিএনপি স্পষ্ট ভাষায় লিখিতভাবে উল্লেখ করে দিয়েছে এবং বার বার পুনর্ব্যক্ত করেছে যে আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। আমরা সরকারের পদত্যাগ চেয়েছি। এখানে এমন একটি সরকারকে আসতে হবে যারা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে পুনরায় একটি অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন করে এদেশের জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিদের দ্বারা সরকার গঠন করবে। সেটা বিএনপির হলো কি আওয়ামী লীগের হলো কিংবা অন্য কোন বুদ্ধিজীবীদের হলো (তবে যারাই আসলে নির্ধারিত), সেটা বিএনপি'র বিবেচ্য বিষয় নয়। বার বার আমরা এটা আমাদের কথায় স্পষ্ট করে দিয়েছি।

আমি কি প্রশ্ন করতে পারি, আওয়ামী লীগ যদি উন্নয়নের জোয়ারে দেশকে ভাসিয়ে দিয়ে থাকে তাহলে তো বাংলাদেশের কোটি কোটি ভোটার, তারা তো আওয়ামী লীগকেই ভোট দেওয়ার কথা। তাহলে আওয়ামী লীগের বুকে কম্পন কেন? তারা ভয় কেন পাচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে, এই প্রশ্নই আমি উল্টো করতে চাই। সরকার আসলে জানে, তারা মুখে যাই বলুক না কেন তাদের অন্তরে তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে তাদের ১৫ বছরের যে অপশাসনের পাহাড় তা আজ এতো উঁচুতে এসে দাঁড়িয়েছে, ফলে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের নৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। সেজন্যই তারা এবারও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে আসতে ভয় পায়। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যে সংসদটি মাত্র শেষ হলো, এমন ধোঁকাবাজির জনপ্রতিনিধিত্বহীন সংসদ আর দেখতে চাই না। সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত একটি সংসদ এবং তাদের দ্বারা গঠিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করুক, তারা বিএনপি থেকে এসেছে নাকি আওয়মী লীগ থেকে এসেছে সেটা আমাদের কোন বিবেচ্য বিষয় নয়।

বার্তা২৪.কম: ক্ষমতাসীন দলের অভিযোগ, বিএনপি মূলতঃ বিদেশি শক্তির দ্বারা পরিচালিত একটি দল, দলটির জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আপনি বিষয়টি কিভাবে বর্ণনা করবেন…

ড. আব্দুল মঈন খান: এখানে বিষয় হচ্ছে, বিএনপি কেবল বিদেশি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে না,… আমি যদি উল্টো প্রশ্ন করি ২৮ অক্টোবরের (২০২৩) পরেই ঢাকায় নিযুক্ত কুটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সরকারই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় ব্রিফিং করেছে কেন? ৩০ অক্টোবরের এই সভাটি বিএনপি করেছিল নাকি আওয়ামী লীগ করেছিল? আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা হচ্ছে এই যে পৃথিবীর কোন দেশই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। পৃথিবী এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে টেকনোলজিরও অনেক বিষয় রয়েছে। আজকের পৃথিবীর দুর্গম কোন স্থানেও যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। শুধু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে তাই নয়, সংবাদের প্রতিক্রিয়াও কিন্তু ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই আজকে বুঝতে হবে, ২৮ অক্টোবর সরকার যে ন্যক্কারজনক ঘটনা বিএনপির মহাসমাবেশের ওপরে ঘটিয়েছে তা কিন্তু বিশ্বে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরেও যদি কেউ বলে বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয় তবে তা সত্যের অপালাপ হবে।

আরও একটি বিষয় বলার আছে, বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে আজ। এটা শুধু পরিবেশগত বিষয়ে নয়, রাজনৈতিক দিক থেকে, কূটনৈতিক দিক থেকেও…জিওপলিটিক্স আজকের বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। আজকে বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র বিঘ্নিত হয়, সেজন্য বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, তাতে আমেরিকায় ওয়াশিংটনে বসে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার তারাও কিন্তু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। কারণ এর সঙ্গে তাদেরও স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এখানে বিএনপি কোন ফ্যাক্টর নয়। এর সঙ্গে যোগ করতে পারি, বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্র বিঘ্নিত হয়, বাংলাদেশের কোন সরকার যখন বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে কূটনৈতিক কারণে বিশ্বের অন্য কোন দেশের কোন সমস্যাা হতে পারে তখন কিন্তু সেই দেশেরও রাষ্ট্রপ্রধানেরা ও তাদের সরকারও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কোন দেশের নাম করতে চাই না। আরেকটি বাস্তবসম্মত উদাহরণ দিতে চাই-বাংলাদেশ যদি কোন কারণে অস্থিতিশীল হয়ে যায় আজকে যেভাবে রাজনীতি বিগত ২৮ অক্টোবর (২০২৩) থেকে সরকারের গর্হিত আচরণের কারণে যে পথে যাচ্ছে, যে পথে বাংলাদেশের রাজনীতি হাটছে, এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা যদি বিনষ্ট হয়, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প যদি ব্যাহত হয় তাহলে তা আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না। সারাবিশ্বের জন্যই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র-সুশাসন-মানবাধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় তবে সেটা শুধুই বাংলাদেশের ভেতরের মানুষের উদ্বেগের বিষয় থাকে না, সারা বিশ্বের জন্য সার্বজনীন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপি সেই সার্বজনীন আদর্শে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল।

বার্তা২৪.কম: পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের মানবাধিকার বা গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও বস্তুতপক্ষে তারা আসলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার কারণেই এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নিবন্ধে এমন মূল্যায়ন উঠে এসেছে । আপনি কিভাবে দেখছেন-

ড. আব্দুল মঈন খান: এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক বিশ্বের মূল্যায়ন কি না জানি না, তবে কোন কোন দেশের তো বটেই। বাস্তবতা হচ্ছে এই, বিশ্বের প্রতিটি দেশই নিজদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে। এটাকে অযৌক্তিক বলার কোন সুযোগ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইন্দো-প্যাসিফিকে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় সেটা তারা করবে। ইতিপূর্বে আমি বলেছি, আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র যদি তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, সেটা তারা বিগত দিনগুলিতে করছে ১৫ বছর ধরে। আমাদের আরও একটু দূরের বন্ধু চৈনিকরা যদি বিআরআই নিয়ে তাদের স্বার্থ এদেশে সংরক্ষণ করতে চায় নিশ্চয়ই তারা করবে, কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে, তিনটি স্বার্থের দ্বন্দ্বে যদি বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার বিঘ্নিত হয় তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদের সকলেরই কথা বলার অধিকার আছে। তিনটি দেশের স্বার্থরক্ষার কথা বলেছি, এতে যে কম্পারেটিভ আলোচনা সেটা না করলে আমি উত্তর দিতে অন্যায় করব। যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থরক্ষায় যে যুক্তিটি উপস্থাপন করেছে সেটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনকে উঁচুতে তুলে ধরার জন্য। পাশাপাশি আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন এবং মানবাধিকারকে কোন বিবেচনায় আনেনি, প্রমাণ হচ্ছে, আজ থেকে বছর দশেক আগে পূর্ববর্তী নির্বাচনে যেভাবে তাদের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় এসে এক সপ্তাহ অবস্থান করে নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিল, এটা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না, আমি বললে হয়তো আপনারা আবার দোষারোপ করবেন .. কিন্তু কাজটি তারা প্রকাশ্যেই করেছে। অপর বন্ধুরাষ্ট্র চীন তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য তারা যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে বলি করেছে সেটি নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প। এতে যদি সারা বিশ্বের কল্যাণ হয় তবে নিশ্চয়ই তারা সেদিকে তাদের দৃষ্টি দেবে। প্রশ্ন সেখানে নয়, প্রশ্ন হচ্ছে-সবাই তাদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের স্বার্থরক্ষা করছে কি না?

আরও পড়ুন- ড্রেস রিহার্সেলে আওয়ামী লীগের স্বরূপ উন্মোচিত: ড. মঈন খান

   

আওয়ামী লীগের ‘গোপন শাস্তি’তে নির্বিকার নেতারা



রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে চলছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। চার ধাপের এই নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন মঙ্গলবার (২১ মে)। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভোটার টানতে বাদ দিয়েছে নিজেদের প্রতীক নৌকা। মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ওপরও আসে নিষেধাজ্ঞা, নির্দেশ না মানলে দেওয়া হয় শাস্তির হুমকি! তবে সব কিছুকে উপেক্ষা করে নির্বাচন থেকে সরেননি মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা।

দলীয় প্রধান ও কেন্দ্রের কড়া নির্দেশনা উপেক্ষার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, নেতাদের প্রকাশ্য শাস্তি না দেওয়া, লঘু শাস্তি এবং শাস্তি দিয়ে সেটা আবার ক্ষমা করে দেওয়ার মতো ঘটনা কাজ করছে নির্দেশ অমান্যের পিছনে।

অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনায় দেয়া হউক, যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসা যায় তাহলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না। আবার যেসব নেতাদের জনপ্রিয়তা আছে, জনভিত্তি আছে তারা মনে করছেন, শাস্তি দিলেও সেটা টিকবে না বেশি দিন। লঘু কোন শাস্তি দিলেও দল তার নিজের প্রয়োজনেই ক্ষমা করে সুযোগ করে দিবে আবার।

এদিকে প্রকাশ্যে শাস্তির কথা বললেও সেটার বাস্তবায়ন দেখতে না পাওয়ায় উৎসাহিত করছে দলের নির্দেশ অমান্যের বিষয়ে।

বার বার শাস্তি দেওয়া ও ক্ষমা করার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রথমবারের মতো দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার হন তিনি। প্রায় এক বছর পর ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ক্ষমা করে দলটি।

তবে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ থেমে থাকেননি গাজীপুরের প্রভাবশালী এ নেতা। গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আজমত উল্লাহ খান। সে নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে, আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থিতা জমা দেন নিজের ও মা জায়েদা খাতুনের। এর জেরে আবারও দল থেকে বহিষ্কার করা হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। তবে সে বহিষ্কারাদেরশও টেকেনি বেশিদিন। বরং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের বিশাল কর্মী বাহিনী কাজে লাগানোর জন্য মাত্র পাঁচ মাস পর প্রত্যাহার করে নেয় বহিষ্কারাদেশও।

দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও আদর্শিক স্থান ধরে রাখার স্বার্থে গঠনতন্ত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও তা পালনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বরাবরই ঢিলেঢালা নীতি অনুসরণ করতে দেখা যায়। কখনো ব্যবস্থা নিলে সেটাও প্রত্যাহার করা হয় দ্রুতগতিতে। এর মধ্যে আছেন, চার জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ অনেকেই।

যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কাউকে কখনো ছাড় দেওয়া হয় না। অনেক সময় কৌশলগত কারণে প্রকাশ্য শাস্তি না দিলেও পরে বড় ধরনের শাস্তিতে পড়তে হয় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের।

এনিয়ে দলটির ভাষ্য, দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেন দলীয় প্রধান। প্রকাশ্যে কোন শাস্তি দিতে দেখা না গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেওয়া হয় অপ্রকাশ্য শাস্তি। যা প্রকাশ্য শাস্তির চেয়েও বড় হয়। বাদ দেওয়া হয় দলীয় পদ-পদবি থেকেও। দেয়া হয় না মনোনয়ন। বাদ পড়তে হয় মন্ত্রিসভা থেকেও।

গত ১৭ মে বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যারা ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করবে অবশ্যই তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শেখ হাসিনার শাস্তি দেওয়ার কায়দা একটু ভিন্ন রকম। যারা বুঝেছেন, পেয়েছেন তারা ঠিকই বুঝেন। আর যারা পাননি তাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘তার (দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা) নির্দেশনার বাইরে কেউ যেন আমরা কোনো অপকর্ম না করি। অপকর্ম যারা করেন শুদ্ধ হয়ে যান। মনে করছেন চুপচাপ আছে? কেউ শাস্তি পাচ্ছে না কেন? পাবে! শাস্তি পাবে। গত নির্বাচনে ৭৫ জন এমপি নমিনেশন পায়নি। এটিও শাস্তি। কাজেই এখানেই সব শেষ নয়। শাস্তি দেওয়ার অনেক সময় আছে। সময়মতো হিসাব হবে। কেউ রেহাই পাবে না।’

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, প্রকাশ্য শাস্তি যেহেতু দেখা যায়, তাই তার প্রতিক্রিয়াটাও হয় সরাসরি। সেক্ষেত্রে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গে নেতাকর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় নানা উপকারভোগী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। ফলে সবসময় চাইলেই সাথে সাথে শাস্তি দেওয়া যায় না। আবার অনেক সময় দলের প্রয়োজনে দ্রুত সময়ে ক্ষমাও করে দিতে হয়। প্রকাশ্যে শাস্তি না পেলেও দলীয় প্রধান কাউকে ছেড়ে দেন না। তিনি সময় মতো ঠিকই ব্যবস্থা নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতারা বলেন, অপ্রকাশ্য শাস্তি দেওয়া হয়, সেটার প্রতিক্রয়া তৃণমূলে পৌঁছায় না। যার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। দল থেকে বার বার কড়া নির্দেশনার পরও তৃণমূলে গিয়ে ঠিক সেভাবে পালন হয়নি। এমপি-মন্ত্রীর স্বজনেরা সরে দাঁড়ায়নি নির্বাচন থেকে। তবে রাজনীতি করতে গেলে সকল বাস্তবতা মেনেই করতে হবে। আমরা সে লক্ষেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। যতটা পারা যায় যেনো দলীয় শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখা যায়।

প্রার্থীদের প্রকাশ্য শাস্তি না দেওয়ায় কেন্দ্রের নির্দেশ মানার ব্যাপারে প্রার্থীদের অনীহা আসছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা চাচ্ছি নির্বাচনটা যেনো প্রভাবমুক্ত থাকে। আমরা সে লক্ষেই কাজ করছি। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। তাই আমরা মনে করি এতে কোন সমস্যা হবে না।

;

নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বহিষ্কার বিএনপির ৩ নেতা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বহিষ্কার বিএনপির ৩ নেতা

নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বহিষ্কার বিএনপির ৩ নেতা

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দলের নির্দেশনা না মেনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এসএম রাশেদুল আলমের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করার অভিযোগে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোমবার (২০ মে) হাটহাজারী পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান দৌলতের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

দল থেকে বহিষ্কৃতরা হলেন- তালুকদার হাটহাজারী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও একই ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য সচিব ফখরুল ইসলাম এবং সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শরিফ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপি চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোটাধিকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে। হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আপনারা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মোটরসাইকেল প্রতীক প্রার্থী এসএম রাশেদুল আলমের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। যার ছবিসহ তথ্য প্রমাণ দফতরে সংরক্ষিত আছে।

এবিষয়ে হাটহাজারী পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান দৌলত জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

;

রাইসি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন: জিএম কাদের



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

সোমবার (২০ মে) এক শোকবার্তায় প্রয়াতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

শোকবার্তায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্টসহ প্রয়াত শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুতে শোক এবং শোকার্ত পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানান। ইরান সরকার ও সেদেশের জনসাধারণের প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতি প্রকাশ করেছেন তিনি।

শোকবার্তায় বলেন, ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যু সংবাদে আমরা স্তম্ভিত ও শোকাভিভূত। এমন হৃদয়বিদারক সংবাদ মেনে নেওয়া সহজ নয়। ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন। ইব্রাহিম রাইসি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসাম্যান্য অবদান রেখেছেন।

তার কর্মের মাঝেই অমর হয়ে থাকবেন ইব্রাহিম রাইসি। শুধু ইরান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় ইব্রাহিম রাইসি অক্ষয় হয়ে থাকবেন। ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা সহসাই পূরণ হবার নয়।

বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করে বলেন, ইরান সরকার ও সেদেশের জনগণ অবশ্যই এই শোক কাটিয়ে ইরানকে আরও এগিয়ে নেবেন।

;

দামি ঘড়ি পরা লোকরা রিকশা চালকদের করুণ কাহিনী জানবে কীভাবে: রিজভী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

যাদের ঘড়ি এবং সানগ্লাসের দাম লক্ষ লক্ষ টাকা তারা কি করে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকদের করুন কাহিনি জানবে- বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার (২০ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক চা দিবস ও 'মুল্লুক চলো' আন্দোলন উপলক্ষে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, 'হঠাৎ করে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধ করে দিলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। তিনি নিজেই বলেছেন তার হাতের যে ঘড়ি এই ঘড়ির দাম অনেক টাকা। অনেক মানুষ বলে ৫০ লাখ টাকা। তিনি যে সানগ্লাস পড়েন সেটারও অনেক দাম লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যার সানগ্লাসের দাম এত, ঘড়ির দাম ৫০ লাখ টাকার উপরে তিনি এই ব্যাটারি চালিত রিকশাওয়ালাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি কীভাবে তাদের মর্ম বুঝবেন। উনি কি জানেন এরা একবেলা খায় নাকি দুই বেলা খায়? ওবায়দুল কাদের কি জানেন তারা যে পরিশ্রম করে রিকশা চালায় সেই টাকা দিয়ে সেই উপার্জন দিয়ে তার সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতে পারে কিনা?'

রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্তানরা তো বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। কেউ বলে দুবাইয়ে, কেউ বলে কানাডায় আবার কেউ বলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এবং বিভিন্ন ধরনের বাড়ি তারা সেখানে নির্মাণ করেছেন। তারা তো এদের বিষয়ে জানেনা। এ অসহায় মানুষগুলো এক বেলা চাল কিনতে পারছে না। যে দেশে আলুর দাম এই সিজনেও ৫০ টাকা এটা কি ওবায়দুল কাদের সাহেব জানেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব জানেন না উনার নেত্রী শেখ হাসিনাও জানেন না। কারণ ওনাদের প্রত্যেকটি নেতা এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন বিদ্যুৎ খাত থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গেছে। বিভিন্ন উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। শুধু টাকা পাচারের এই আরব্য উপন্যাসের কাহিনী প্রতিদিন আমরা সংবাদপত্রের পাতায় পড়ছি। সুতরাং তারা কি করে ওই ব্যাটারি চালিত রিকশাওয়ালাদের করুণ কাহিনী জানবে।'

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, 'এই ব্যাটারি চালিত রিকশা নিশ্চয়ই কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই আমদানি করার লাইসেন্স কে দিল? ঢাকাসহ প্রতিটি শহরেই আমি দেখেছি এই ব্যাটারি চালিত যান চলাচল তাদেরকে এই রোড পারমিশন কারা দিল? আপনার সরকারই দিয়েছে। এগুলো যারা ইমপোর্ট করেছে তারা তো আওয়ামী লীগের লোক। তারা তো আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী। আর যারা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছে তাদেরই দোষ হয়ে গেল?আপনাদের পেট ভরে বদ হজম হবে তারপরও আপনাদের টাকা দরকার। তারপরও এরা কিন্তু এমনি এমনি চালাতে পারে না। আপনার প্রশাসনের লোকদেরকে টাকা দিতে হয়, স্থানীয় যুবলীগ ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে হয়। এত ঘাটে ঘাটে টাকা দেওয়ার পরও যতটুকু তাদের উপার্জন হয় সেটা দিয়ে কোনোরকমে তারা দিন যাপন করে। আর এদের উপরেই আপনারা চালাচ্ছেন স্টিম রোলার। এদের উপরই আওয়ামী লীগের তরবারি মাথার উপর ঝুলছে।ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি গরিবের আহার কেড়ে নিয়ে, ভাত কেড়ে নিয়ে আপনি রাজত্ব করবেন। আপনারা স্বর্গে বসবাস করবেন, ওই স্বর্গ থেকে আপনাদের বিদায় নিতেই হবে। ওই স্বর্গে আপনারা আর বেশি দিন বসবাস করতে পারবেন না।'

শেয়ার বাজারেও নতুন করে ধস নেমেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'তরুণ শিক্ষিত যুবকেরা, অল্প আয়ের মানুষেরা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে, সেই শেয়ার মার্কেটেও আবার নতুন করে এমন পতন হচ্ছে। ওই পতন থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না শেয়ার মার্কেট। এতে বেকার হচ্ছে তরুণরা-যুবকেরা। তারা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে ফতুর হয়ে গেছেন।'

তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা অনেক কথা বলেন, আমি এই করেছি সেই করেছি, এত উন্নয়ন করেছি। এগুলোতো উনার হচ্ছে গলাবাজি আর উনার নেতা মন্ত্রীদের চাপাবাজির কথা। দিন দিন কত মানুষকে যে ওনারা গরীব বানিয়েছেন, গরিব থেকে চরম গরিব বানাচ্ছেন সেইটা তারা কোনদিনও বলেন না। তারা বলবেন কি করে! এবারও বাজেটে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত থেকে সব খাতে। কারণ ভর্তুকি না দিলে বিদ্যুৎখাতের যে দেনা সেই দেনা তারা পরিশোধ করতে পারবে না। আইএমএফ থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদেরকে শর্ত দিচ্ছে। শর্ত দেওয়ার পরেও তারা ভর্তুকি বাড়াচ্ছে। এই ভর্তুকি কে দেয়? এটা কি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার টাকা দিয়ে চলে? এই গরিব মানুষ এই শ্রমজীবী মানুষদের ঘরের টাকায় এই ভর্তুকি দেয়া হয়।'

রিজভী আরও বলেন, 'আজকের এই দিনে ঘুমন্ত চা শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় ইংরেজ শাসকদের এ দেশীয় তাবেদার পুলিশ বাহিনী। তাদের এই আক্রমণের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায়ের যে তীব্র আকুতি যে আকাঙ্ক্ষা আজও বাংলার আকাশে বাতাসে, বাংলার নদী নালায় যে দাবি প্রবাহিত হয় সেখান থেকে এখনো তাদের আওয়াজ মুছে যায়নি। আজও এদেশের নিপীড়িত মানুষকে এক বেলা খাবারের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সেদিনের সেই মুল্লুক চলো আন্দোলন যে শিক্ষা দিয়েছে সেই শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিপীড়িত নির্যাতিত শ্রমজীবী মানুষ লড়াই করছে।'

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপি'র চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খানসহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

;