‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উচ্ছৃঙ্খল পথে ডাইভার্ট করা সরকারের চক্রান্ত’

  • আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সরকার চেয়েছিল উসকানি দিয়ে একটা শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে উচ্ছৃঙ্খল পথে ডাইভার্ট করে বিরোধী দলের ওপর তার দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে। এটাই ছিল চক্রান্ত, যা তারা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার অপরাধী নির্ধারণের আগেই বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে জেলে পুরে দিয়ে তাদের স্বৈরাচারী চরিত্রেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে।

ফ্রান্সের উদাহরণ টেনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা প্রশ্ন তুলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে একদিনে ৬০০ এর ওপরে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কি সরকার অপরাধী নির্ধারণের আগেই বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে জেলে পুরে দিয়েছিল? প্যারিসের প্রতিবাদী লাখ লাখ মানুষ সবাইকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করেছিল? বিএনপির চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির আজকের যে সংগ্রাম তা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠান সংগ্রাম, ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম নয়।

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কম’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. আব্দুল মঈন খান। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

বার্তা২৪.কম: ক্ষমতাসীনরা বলবার চেষ্টা করছে ৫ নভেম্বর (রোববার) ১৮টি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই দায়িত্বটি আসলে কে নেবে? আটক ছাত্রদলের কয়েকজন অগ্নিসংযোগের কথা স্বীকার করেছে...

বিজ্ঞাপন

ড. আব্দুল মঈন খান: প্রশ্নটি আসলে সরকারকে জিজ্ঞেস করলে যুক্তিযুক্ত হবে কেন না দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব সরকারের। সত্যি কথা বলতে কি, আজকে সরকার নিজের জালে নিজেই আটকা পড়েছে। বিগত ১ বছর যাবৎ আমরা প্রথমে বিভাগীয় শহরে সভা করেছি। তারপর জেলা-উপজেলায় সভা করেছি, তারপর বাংলাদেশের প্রায় ৬ হাজার ইউনিয়নে একদিনে পদযাত্রা করেছি, যা এ অঞ্চলের রাজনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি নতুন সংযোজন। লাখ লাখ মানুষ এসব কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হযেছে। একটি উদাহরণ কি সরকার দেখাতে পারবে যেখানে এক সেকেন্ডের জন্য শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে? গত এক বছর যাবৎ সরকার বার বার উসকানি দিয়েছে। তাদের এটাই ছিল চক্রান্ত। তারা চেয়েছিল উসকানি দিয়ে একটা শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে উচ্ছৃঙ্খল পথে ডাইভার্ট করে দেওয়া, তারপরে বিরোধী দলের ওপর তার দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া। অবশেষে সেই পরিস্থিতি সরকার নিজেরাই সৃষ্টি করেছে গত ২৮ অক্টোবরে (২০২৩)।

মজার বিষয় হচ্ছে-যে পরিকল্পনা সরকার করেছিল, ইতিমধ্যেই স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে সেটা উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে। তারা বুঝতে পারেনি, আজ থেকে ৫/১০ বছর আগে সংবাদ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কিভাবে প্রাচারিত হত... আর আজকে কিন্তু টেকনোলজির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সরকার কেবল দেশের ভেতরের মানুষকে নয়, বিশ্বের মানুষকে ভাওতা দেবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে আর সেই আগের ফন্দি কাজ করেনি। তার প্রমাণ হচ্ছে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিভাগের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের বিবৃতি, প্রমাণ হচ্ছে -আমেরিকা-যুক্তরাজ্যসহ গণতন্ত্রকামী উন্নত বিশ্বের প্রায় সবকটি রাষ্ট্রের বিবৃতি। প্রমাণ হচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি। প্রমাণ হচ্ছে -হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি বিশ্বের ৮টি মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি। সরকারের সব জারিজুরি আজ প্রকাশ হয়ে গেছে, বিএনপি'র কিছু বলার দরকার হয়নি। সরকার নিজেরা ওয়াকিটকিতে যেসব কথাবার্তা আদান-প্রদান করেছেন তার টেপ কিন্তু টেকনোলজির শক্তিতে জনসমক্ষে প্রকাশিত। আজকে নিজেরা ষড়যন্ত্র করে গাজীপুর থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসী নিয়ে এসে চিফ জাস্টিসের বাড়ির সামনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সেই সন্ত্রাসে বিএনপির সর্বোচ্চ নেতাদের জড়িত করে মিথ্য-কাল্পনিক-বানোয়াট গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর রহস্য আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয়, সারা বিশ্ববাসীর কাছেই তা উন্মোচিত হয়ে গেছে টেকনোলজির কল্যাণে।

সরকার এই লজ্জা রাখবে কোথায়? আজ সেসব গল্প বলে আর লাভ হবে না, লাভ হচ্ছে না। কারণ ওপরে যে স্টেমেন্টগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকেই হয়েছে। সঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, আমরা কিছুদিন আগে প্যারিসে দেখেছিলাম, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে একদিনে ৬০০ এর ওপরে গাড়িতে আগুন দেওয়া/ভাঙচুর হয়েছিল । সেখানে কি সরকার অপরাধী নির্ধারণের আগেই বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে জেলে পুরে দিয়েছিল? অথবা প্যারিসের প্রতিবাদী লাখ লাখ মানুষ সবাইকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করেছিল? সরকার আজ যেসব কথা বলছে, তা অস্থিরচিত্ত মানুষের কথা, এগুলো বাতুলতা মাত্র। ভাবতে লজ্জা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন পর্যায়ে নিপতিত হয়েছে যে এখানে সরকার নিজের ক্ষমতা রক্ষার প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের একজন বীরউত্তমকে পর্যন্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করেছে, জাতির এই লজ্জা আমরা রাখব কোথায়?

বার্তা২৪.কম: নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অনেক বুদ্ধিজীবীরাও এই প্রশ্নগুলো তুলছেন, তারা বলেন-দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা অন্যান্য নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে বিএনপি ততটা সরব নয়, যত তৎপর তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য…

ড. আব্দুল মঈন খান: এই প্রশ্নের উত্তর আসলে খুব সহজ। সহজ এই কারণে যে, এ সমস্যার কথাগুলো আমরা শুধু মুখে বলিনি, ডকুমেন্টেশনও করেছি। আজকে আমরা যে এক দফা দিয়েছি সেটা যদি আপনারা লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, এটা কিন্তু আসলে ফোর ইন ওয়ান। যদি বিস্তারিত পাঠ করেন তাহলে দেখবেন আপনি দ্রব্যমূল্যসহ যা কিছু উল্লেখ করেছেন তার প্রত্যেকটি বিষয় আমাদের এই এক দফায় রয়েছে। আমি মনে করি এ নিয়ে আর অধিকতর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। আপনারা দেখেছেন বিগত এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শুধু নয়, এই সরকারের চরম দুর্নীতি, মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি, বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার, ব্যাংক লোপাটে তাদের যে কাণ্ডকারখানা ...বিভিন্ন প্রজেক্টে যেখানে ব্যয় হাজার কোটি টাকা সেখানে বৃদ্ধি করে দু’হাজার তিন হাজার কোটি টাকা করার যে প্রচেষ্টা..২শ’ বা ৫শ’ টাকার বালিশ ১০ হাজার টাকা, হাজার টাকার পর্দা ৮৩ হাজার টাকায় কেনার কথা এসব কিছু কিন্তু আমরা বিগত এক বছর ধরে মানুষকে বলেছি। আজকে বাংলাদেশের তথাকথিত কিছু আঁতেলদের কথা নিয়ে আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন, আমি কাউকে অসম্মান করতে চাই না, বরঞ্চ আশ্বস্ত করতে চাই, বিএনপি’র আজকের যে সংগ্রাম তা কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম নয়। বিএনপি স্পষ্ট ভাষায় লিখিতভাবে উল্লেখ করে দিয়েছে এবং বার বার পুনর্ব্যক্ত করেছে যে আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। আমরা সরকারের পদত্যাগ চেয়েছি। এখানে এমন একটি সরকারকে আসতে হবে যারা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে পুনরায় একটি অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন করে এদেশের জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিদের দ্বারা সরকার গঠন করবে। সেটা বিএনপির হলো কি আওয়ামী লীগের হলো কিংবা অন্য কোন বুদ্ধিজীবীদের হলো (তবে যারাই আসলে নির্ধারিত), সেটা বিএনপি'র বিবেচ্য বিষয় নয়। বার বার আমরা এটা আমাদের কথায় স্পষ্ট করে দিয়েছি।

আমি কি প্রশ্ন করতে পারি, আওয়ামী লীগ যদি উন্নয়নের জোয়ারে দেশকে ভাসিয়ে দিয়ে থাকে তাহলে তো বাংলাদেশের কোটি কোটি ভোটার, তারা তো আওয়ামী লীগকেই ভোট দেওয়ার কথা। তাহলে আওয়ামী লীগের বুকে কম্পন কেন? তারা ভয় কেন পাচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে, এই প্রশ্নই আমি উল্টো করতে চাই। সরকার আসলে জানে, তারা মুখে যাই বলুক না কেন তাদের অন্তরে তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে তাদের ১৫ বছরের যে অপশাসনের পাহাড় তা আজ এতো উঁচুতে এসে দাঁড়িয়েছে, ফলে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের নৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। সেজন্যই তারা এবারও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে আসতে ভয় পায়। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যে সংসদটি মাত্র শেষ হলো, এমন ধোঁকাবাজির জনপ্রতিনিধিত্বহীন সংসদ আর দেখতে চাই না। সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত একটি সংসদ এবং তাদের দ্বারা গঠিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করুক, তারা বিএনপি থেকে এসেছে নাকি আওয়মী লীগ থেকে এসেছে সেটা আমাদের কোন বিবেচ্য বিষয় নয়।

বার্তা২৪.কম: ক্ষমতাসীন দলের অভিযোগ, বিএনপি মূলতঃ বিদেশি শক্তির দ্বারা পরিচালিত একটি দল, দলটির জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আপনি বিষয়টি কিভাবে বর্ণনা করবেন…

ড. আব্দুল মঈন খান: এখানে বিষয় হচ্ছে, বিএনপি কেবল বিদেশি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে না,… আমি যদি উল্টো প্রশ্ন করি ২৮ অক্টোবরের (২০২৩) পরেই ঢাকায় নিযুক্ত কুটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সরকারই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় ব্রিফিং করেছে কেন? ৩০ অক্টোবরের এই সভাটি বিএনপি করেছিল নাকি আওয়ামী লীগ করেছিল? আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা হচ্ছে এই যে পৃথিবীর কোন দেশই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। পৃথিবী এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে টেকনোলজিরও অনেক বিষয় রয়েছে। আজকের পৃথিবীর দুর্গম কোন স্থানেও যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। শুধু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে তাই নয়, সংবাদের প্রতিক্রিয়াও কিন্তু ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই আজকে বুঝতে হবে, ২৮ অক্টোবর সরকার যে ন্যক্কারজনক ঘটনা বিএনপির মহাসমাবেশের ওপরে ঘটিয়েছে তা কিন্তু বিশ্বে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরেও যদি কেউ বলে বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয় তবে তা সত্যের অপালাপ হবে।

আরও একটি বিষয় বলার আছে, বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে আজ। এটা শুধু পরিবেশগত বিষয়ে নয়, রাজনৈতিক দিক থেকে, কূটনৈতিক দিক থেকেও…জিওপলিটিক্স আজকের বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। আজকে বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র বিঘ্নিত হয়, সেজন্য বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, তাতে আমেরিকায় ওয়াশিংটনে বসে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার তারাও কিন্তু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। কারণ এর সঙ্গে তাদেরও স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এখানে বিএনপি কোন ফ্যাক্টর নয়। এর সঙ্গে যোগ করতে পারি, বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্র বিঘ্নিত হয়, বাংলাদেশের কোন সরকার যখন বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে কূটনৈতিক কারণে বিশ্বের অন্য কোন দেশের কোন সমস্যাা হতে পারে তখন কিন্তু সেই দেশেরও রাষ্ট্রপ্রধানেরা ও তাদের সরকারও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কোন দেশের নাম করতে চাই না। আরেকটি বাস্তবসম্মত উদাহরণ দিতে চাই-বাংলাদেশ যদি কোন কারণে অস্থিতিশীল হয়ে যায় আজকে যেভাবে রাজনীতি বিগত ২৮ অক্টোবর (২০২৩) থেকে সরকারের গর্হিত আচরণের কারণে যে পথে যাচ্ছে, যে পথে বাংলাদেশের রাজনীতি হাটছে, এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা যদি বিনষ্ট হয়, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প যদি ব্যাহত হয় তাহলে তা আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না। সারাবিশ্বের জন্যই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র-সুশাসন-মানবাধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় তবে সেটা শুধুই বাংলাদেশের ভেতরের মানুষের উদ্বেগের বিষয় থাকে না, সারা বিশ্বের জন্য সার্বজনীন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপি সেই সার্বজনীন আদর্শে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল।

বার্তা২৪.কম: পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের মানবাধিকার বা গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও বস্তুতপক্ষে তারা আসলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার কারণেই এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নিবন্ধে এমন মূল্যায়ন উঠে এসেছে । আপনি কিভাবে দেখছেন-

ড. আব্দুল মঈন খান: এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক বিশ্বের মূল্যায়ন কি না জানি না, তবে কোন কোন দেশের তো বটেই। বাস্তবতা হচ্ছে এই, বিশ্বের প্রতিটি দেশই নিজদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে। এটাকে অযৌক্তিক বলার কোন সুযোগ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইন্দো-প্যাসিফিকে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় সেটা তারা করবে। ইতিপূর্বে আমি বলেছি, আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র যদি তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, সেটা তারা বিগত দিনগুলিতে করছে ১৫ বছর ধরে। আমাদের আরও একটু দূরের বন্ধু চৈনিকরা যদি বিআরআই নিয়ে তাদের স্বার্থ এদেশে সংরক্ষণ করতে চায় নিশ্চয়ই তারা করবে, কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে, তিনটি স্বার্থের দ্বন্দ্বে যদি বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার বিঘ্নিত হয় তাহলে কিন্তু সেখানে আমাদের সকলেরই কথা বলার অধিকার আছে। তিনটি দেশের স্বার্থরক্ষার কথা বলেছি, এতে যে কম্পারেটিভ আলোচনা সেটা না করলে আমি উত্তর দিতে অন্যায় করব। যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থরক্ষায় যে যুক্তিটি উপস্থাপন করেছে সেটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনকে উঁচুতে তুলে ধরার জন্য। পাশাপাশি আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন এবং মানবাধিকারকে কোন বিবেচনায় আনেনি, প্রমাণ হচ্ছে, আজ থেকে বছর দশেক আগে পূর্ববর্তী নির্বাচনে যেভাবে তাদের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় এসে এক সপ্তাহ অবস্থান করে নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিল, এটা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না, আমি বললে হয়তো আপনারা আবার দোষারোপ করবেন .. কিন্তু কাজটি তারা প্রকাশ্যেই করেছে। অপর বন্ধুরাষ্ট্র চীন তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য তারা যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে বলি করেছে সেটি নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প। এতে যদি সারা বিশ্বের কল্যাণ হয় তবে নিশ্চয়ই তারা সেদিকে তাদের দৃষ্টি দেবে। প্রশ্ন সেখানে নয়, প্রশ্ন হচ্ছে-সবাই তাদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের স্বার্থরক্ষা করছে কি না?

আরও পড়ুন- ড্রেস রিহার্সেলে আওয়ামী লীগের স্বরূপ উন্মোচিত: ড. মঈন খান