বিএনপিকে যারা থামাতে গিয়েছে, তারাই ধ্বংস হয়েছে: আমীর খসরু

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিগত দিনগুলোতে আমরা রাজপথে রক্ত দিয়েছি, জেলে গিয়েছি, অনেক নেতাকর্মী হারিয়েছি, অনেক কিছুই হারিয়েছি জীবনে। কিন্তু একটা জায়গায় ভালো কাজ করেছি, বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। এজন্য বিএনপিকে ভাঙতে পারে নাই। বিএনপি আজ অনেক শক্তিশালী। বিএনপিকে যারা যখনই থামাতে গিয়েছে, তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। বিএনপি কোথায় আর যারা বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল তারা আজ কোথায়?

শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর ষোলশহরস্থ বিপ্লব উদ্যানে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় যুবদলের দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ ও বিপ্লব উদ্যান থেকে কালুরঘাট অভিমূখী যুব পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়নের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।

সমাবেশের আগে বিপ্লব উদ্যানে রং তুলিতে আঁকা স্বাধীনতার ঘোষণা চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

আমীর খসরু বলেন, আবারো বলছি, বিএনপিকে থামানোর চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের সরকার, তাদের সংসদ দেখতে চাই। এটা বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি এর জন্য বিগত দিনে অনেক ত্যাগ শিকার করেছে, প্রয়োজনে আবার ত্যাগ শিকার করতে আমরা রাজি আছি।

দেশের রাজনীতি কেমন হবে তার সিদ্ধান্ত জনগণ দিবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কেউ বলে দিতে পারে না আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে! এ সিদ্ধান্ত দিবে বাংলাদেশের জনগণ। এ সিদ্ধান্ত অন্য কেউ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জনগণের সিদ্ধান্ত অন্য কেউ দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের সিদ্ধান্ত অনেকে অনেকবার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবও চেষ্টা করেছিলেন, তিনি কি সফল হয়েছেন? এরপর এরশাদ চেষ্টা করেছিল, শেখ হাসিনা চেয়েছিল, তারা কি পেরেছে? তাই সেদিকে না গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্ত তাদের দিতে দেন।

বিপ্লব উদ্যানের কথা তুলে ধরে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ঐক্যের টান হচ্ছে বিপ্লব উদ্যান। এখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রিভোল্ড করেছিল। পাকিস্তানিদের মুখের ওপর বলেছিল, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘোষণা করেছি। সেই ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানিদের তৎকালীন অফিসারদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। সেই বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হয়েছে। সেখান থেকে এ ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশি সৈন্যদের নিয়ে তিনি বের হয়েছিলেন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।

এরপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম। কিন্তু তিনি প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেননি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বলেছেন। স্বাধীনতার এ কথাগুলো কেউ বলতে সাহস পায় না, লজ্জা পাই। স্বাধীনতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এ দুটি কাজের মাধ্যমে। একটি হচ্ছে, এখানে (বিপ্লব উদ্যান) বিদ্রোহ করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। সেই স্বাধীনতার ঘোষণার পরে যাদের মধ্যে সন্দেহ ছিল, যারা পথ নির্দেশনা পাচ্ছিল না এবং শেখ মুজিবুর রহমান তো পাকিস্তানে চলে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষ পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষকে পথ নির্দেশনা পরিষ্কারভাবে জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। এরপর পুরো জাতি যুদ্ধে নেমে গেছে, সারা বাংলাদেশ ব্যাপী যুদ্ধ শুরু হয়েছিল- যোগ করেন তিনি।

দেশের স্বাধীনতায় অনেকের অবদান রয়েছে জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের অবদান আছে এবং অনেকের অবদান আছে। জাতির জনক বলতে যা বুঝায়, এগুলো কোনো এক ব্যক্তির কথা নয়, এগুলোর পেছনে অনেক নেতাদের ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে, জীবন যুদ্ধে নামতে হয়েছে, অনেকে সম্মুখ যুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। সবাইকে স্বীকৃতি দিতে হবে। অনেকের অবদান আছে, যাদের অবদান আছে আজ পর্যন্ত সবাইকে স্বীকৃতি দিয়ে স্মরণ করতে হবে। শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়।

শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘সিম্বল’ হিসেবে ব্যবহার করে খারাপ কাজ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ওই যে একজন ব্যক্তিকে (শেখ মুজিবুর) সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করে, বাংলাদেশে যে গুম, খুন, হত্যা, মামলা, নিপীড়ন, নির্যাতন, লুটপাট, এদেশের মানুষের মানব অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার, আইনের শাসন কেড়ে নেওয়া, বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করা করেছে। ওই সেই ব্যক্তির নাম দিয়ে এবং সেই ব্যক্তির মূর্তি স্থাপন করেছে বাংলাদেশে, এই খারাপ কাজগুলো করেছে তারা। তারা এ খারাপ কাজগুলো করেছে, তাদের সাথে সাথে সেই ব্যক্তিও হঠাৎ করে চলে যায়। একটা সিম্বল ব্যবহার করে খারাপের পর খারাপ কাজ করতে থাকেন, এরপর আপনার যখন পতন হয়, তখন ওই সিম্বলেরও পতন হয়। এটা দুর্ভাগ্য। তারা যদি সকলকে স্বীকৃতি দিত, দেশের গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতো, দেশের মানুষের অধিকারগুলো দিয়ে দিত, ভোটাধিকার দিত, জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার থাকতো, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতো। তাহলে এই দুর্ভাগ্য হতো না।

কোনো ব্যক্তিকে মূলধন বানিয়ে খারাপ কাযে টিকে থাকা যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা বা কোনো ব্যক্তিকে মূলধন বানিয়ে কোনো খারাপ কাজ করে টিকে থাকতে পারে না। এটা বাংলাদেশে প্রমাণ হয়েছে। সেই শহীদ জিয়াউর রহমান, যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল করেছিলেন। এটার মূল ভিত্তি ছিল, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, অর্থনৈতিক মুক্তি, একটি স্বাধীন সার্বভ্রৌম দেশ, এখানে জনগণ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এজন্য শহীদ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আজকেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ দলকে ধ্বংস করার জন্য এমন কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। আমাদের নেতাকর্মীরা চাকরি হারিয়েছে, বাড়িতে থাকতে পারেনি, পালিয়ে থাকতে হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর মিথ্যা মামলায় জেল কেটেছে। 

এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম, শফিকুর রহমান স্বপন, মো. শাহ আলম, সদস্য আবুল হাসেম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম লিটন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ মুন্না, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজিম সুমন, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান, সাবেক উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুর রহমান শপথ, আমিনুল ইসলাম তৌহিদ, সোহেল, লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান জসিম ও সাধারণ সম্পাদক এস এ মুরাদ চৌধুরী প্রমুখ।