ভারতীয় দূতাবাসে দেওয়া স্মারকলিপিতে যা বলেছে বিএনপি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতীয় দূতাবাসে দেওয়া স্মারকলিপিতে যা বলেছে বিএনপি

ভারতীয় দূতাবাসে দেওয়া স্মারকলিপিতে যা বলেছে বিএনপি

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন।

রোববার (৮ নভেম্বর) দুপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬ জন প্রতিনিধি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিনিধি দলে ছিলেন, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির।

স্মারকলিপিটি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে দেওয়া হবে। স্মারকলিপিতে সাম্প্রতিক অবন্ধুসুলভ ঘটনাবলী নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই মর্মে গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করছি যে, দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। অতঃপর আপনার দেশের অতি উগ্রবাদী নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের এই গণশত্রু হাসিনা ওয়াজেদকে পুনরায় পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করবার নিমিত্তে একের পর এক অজ্ঞ-অর্বাচীনের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। যাতে স্পষ্টত প্রতিয়মান হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিলো হাসিনার সাথে,বাংলাদেশের জনগণের সাথে নয়।

আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে উঠেছে। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দলমতের মানুষদের ঘরবাড়ি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদেরকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। ভারতের নিরাপদে
আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না।

গত ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। নৈতিক পদস্খলনের কারণে ইসকন থেকে বহিষ্কৃত সাবেক ইসকন নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাজার হাজার মানুষ যখন রাষ্ট্রীয় মদদ ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করছিল তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে আপনার দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এতে আরও বলা হয়েছে, এতে প্রমাণিত পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের প্রাঙ্গণে আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে, তারা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। দুঃখজনকভাবে, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় না থাকতে দেখা গেছে। এটি কূটনৈতিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমন ন্যাক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনাসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও আপনার সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ। আমরা পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সার্বভৌম কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সামিল। ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞা স্বরূপ বলে আমরা চাই ভারত সরকার ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটগুলোকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার আদর্শ প্রচার করতে পরামর্শ দিবে।

তারা প্রত্যাশা করে বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অপতথ্য বন্ধ করতে ভারতীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দেশগুলোর মধ্যে একটি স্থিতিশীল, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জাতিসংঘের সনদের নীতির ওপর ভিত্তি করে ‘সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতার’ ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। বাড্ডা অভিমুখী রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ায় দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে পদযাত্রা থেমে যায়। রামপুরা ব্রিজের কাছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দেন।

আজ সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসতে থাকেন। তারা ভারতকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। পদযাত্রায় অংশ নিতে দলের প্রধান কার্যালয়ের কাছে তারা অবস্থান নেন। পরে ১১টা ৩৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিক পদযাত্রা শুরু হয়।