দুঃখ রয়ে গেলো, তাই রইলো শঙ্কাও

  • আহমেদ আল আমীন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপের দলে কে থাকবে? ‘আমি খেলব না’ বা অমুককে চাই; এভাবে আলোচনা এক সময়ে ছিল না। তখন বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়াটাই ছিল মূল ভাবনা। ১৯৯৬ সালে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বকাপ। টেস্ট খেলুড়ে ৯ দেশের বাইরে সহযোগীদের মধ্যে তিন দল খেলবে বিশ্বকাপ। তার জন্য যে আয়োজন সে আইসিসি ট্রফি অনুষ্ঠিত হলো ১৯৯৪ সালে, কেনিয়ায়। ফারুক আহমেদ তখন বাংলাদেশের অধিনায়ক। পাশের দেশে বিশ্বকাপ। সেরা তিন অবস্থানে থাকলেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ। উত্তেজনা ছিল সেরা আসরে খেলা নিয়ে। যাই হোক, ওই আসরে স্বপ্নপূরণ হয়নি। কেননা, বাংলাদেশের চেয়ে গোছানো আর পরিকল্পনা নিয়ে খেলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় আরব আমিরাত, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস। ওই তিন দলের মধ্যে বিশ্বকাপে নজর কাড়ে মরিস ওদুম্বের কেনিয়া।

১৯৯৪ টেনে আনলাম একটা কারণে। সেটা হচ্ছে ওই আসরে বিদায়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেট হাল ছেড়ে দেয়নি। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি ছিল দেখার মত। এখনো বেশ মনে পড়ে। গ্রিনিজের মত কোচ আনা হয়। মালয়েশিয়াতে অ্যাস্ট্রো টার্ফ পিচে খেলা হবে, সেটা জেনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সে ধরণের পিচ স্থাপন করা হয়। যেখানে ঘরোয়া লিগও খেলা হয়। আকরাম-বুলবুল-নান্নু-আতাহার-নাইমুর সবাই কেবল দলে না রীতিমত পরিবারে পরিণত হয়েছিলেন। যাদের ছিল লড়াইয়ের সাহস, জয়ের তীব্র ইচ্ছা। এবার জিততেই হবে সেই পণ নিয়ে দলটি দেশ ছেড়েছিল বেশ অনাড়ম্বরভাবে। এখনকার মত এত হৈ চৈ, এত মিডিয়া, এত সাক্ষাৎকার ছিল না। আকরাম খানের এই দলটিই প্রাণপন লড়াই করেছে। নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড, কেনিয়ার মত বাধা পেরিয়েছে। ভেজা মাঠ যেন তাড়াতাড়ি শুকায় সেজন্য নিজেরা মাঠও পরিষ্কার করেছে। একটাই ইচ্ছা- বিশ্বকাপ খেলতে চাই। এত প্রগাঢ় ইচ্ছায় প্রকৃতিও মাথা নত করে। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট না শুধু খেলার ইতিহাসই বদলে দেয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিও বাংলাদেশের বেশ ভালো ছিল। প্রথমবার কিছু করার চেষ্টা ছিল। বিশেষ করে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম জয় একটা টার্গেট ছিল। মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর দারুণ নৈপুণ্যে সেই জয়ও আসে। তবে জয়ের নেশা পেয়ে যাওয়া দলটি শেষ ম্যাচে হারিয়ে দেয় সেবার ফাইনাল খেলা পাকিস্তানকেও। ওই আসরের সবচেয়ে বড় আপসেট ছিল সেই ম্যাচ।

পরের আসর ২০০৩ সালে আফ্রিকায়। সেবার ছিল এলোমেলো বাংলাদেশ। কী করতে চায়, লক্ষ্য কী কিছুই বোঝা যায়নি আসলে। ওই আসরেই অখ্যাত কানাডার সাথে হেরে লজ্জায় পড়তে হয় খালেদ মাসুদের দলকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার চামিন্ডা ভাস করেন হ্যাট্রিক।

সেই শিক্ষা নিয়েই কিনা ২০০৭ সালের প্রস্তুতি ছিল দারুণ। দলে পরিবর্তন এলো। মুশফিক-তামিম-সাকিবরা এলেন। তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে হাবিবুল বাশার রীতিমত টার্গেট নিয়ে এগিয়েছেন। আসরের আগেই ভারত নিয়ে মাশরাফির সেই ‘ধরে দিবানে’র মন্তব্য তো রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল। বিশ্বকাপ জয় করতে আসা ভারতকে বিদায়ই করে দেয় তরুণদের বাংলাদেশ। সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এত ইতিহাস টেনে নিয়ে এলাম। ইতিহাস না জানলে নাকি সামনে এগোনো যায় না। ছয়টি বিশ্বকাপ খেলা হয়ে গেল। সেমিফাইনালে এখনো খেলা হলো না। ২০০৩ সালে কেনিয়াও খেলেছে সেমিফাইনাল। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। শিক্ষাসফরও যথেষ্ট হয়েছে। এবার সময় হয়েছে কিছু পাওয়ার। সেই টার্গেট বা লক্ষ্যটা এবার চোখে পড়লো না। কোচ, অধিনায়কের মুখ থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপে লক্ষ্য নিয়ে কিছু শুনলাম না। যা হলো তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের লড়াই। দু:খটা এই জায়গায় দুইজনের মুখ থেকেও ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী বা কী হওয়া উচিত তা জানা গেল না। বরং তিতা কথাবার্তা তরুণ বা প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ক্রিকেটারদের উপর প্রভাব ফেলে কিনা সে শঙ্কা থেকেই গেল। দুঃখটা রয়ে গেল। আর তাই আশঙ্কাটাও। ভয় নিয়েই বিশ্বকাপ দেখতে বসব।

লেখক: ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক