ঘটনাবহুল মারাকানায় ব্রাজিলকে হারাল মেসির আর্জেন্টিনা
২০২১ ফিরল ২০২৩-এ। মারাকানা ফিরল মারাকানাতেই। নিজেদের মাঠে সুপার ক্লাসিকোতে আবারও ব্রাজিলের হার। আবারও সেই ১-০ ব্যবধানেই। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ডি মারিয়ার চিপে শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ব্রাজিলের। এবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তাদের থামাল নিকোলাস ওতামেন্দির দুর্দান্ত হেড।
টানা চার জয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শুরুটা দুর্দান্তই ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার। তবে তাদের সে জয়রথ থামায় উরুগুয়ে। তাদের মাঠে সেই ম্যাচে ২-০ গোলের হেরেছিল লিওনেল স্কালোনির দল। পরের ম্যাচে জয়ের ধারায় ফেরা মোটেও সহজ ছিল না আলবিসেলেস্তাদের। ম্যাচের আগে চোটাক্রান্ত ব্রাজিলকে ভয়ঙ্কর হিসেবেই মেনেছেন কোচ স্কালোনি। শেষে দলীয় দুর্দান্ত পারফর্মে জয়ে ফিরল তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
অন্যদিকে হারের বৃত্তেই রইল ব্রাজিল। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগের আসরে কোনো ম্যাচেই হারের মুখ না দেখা দলটি এবারের আসরের শুরুর ছয় ম্যাচে হারল তিনটিতেই। তবে শুরুটা ছিল বেশ দাপুটে। তবে এর পরেই ছন্দে এলো পতন। গত মাসে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ১-১ গোলের ড্রয়ের পর উরুগুয়ের মাঠ ২-০ গোলের হার। নিজেদের আগের ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে শুরুতেই এগিয়ে থেকে আশা জাগিয়েছিল জয়ে ফেরার। তবে সেখানে লুইস দিয়াসের জোড়া গোলে ফের ধাক্কা খায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এবার চলতি মাসে তাদের দ্বিতীয় ধাক্কা দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুটাই যেন স্বাগতিকদের বিপক্ষে। তখন বাঁজার কথা রেফারির ম্যাচ শুরুর বাঁশি। তবে মাঠের উত্তাপ ছড়াল গ্যালারিতে। সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় দাঙ্গা। এতে, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩০ মিনিট পর শুরু হয় খেলা।
শুরু থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে দুই দল। তবে উভয় দলই নিজের রক্ষণভাগ রাখে বাড়তি সতর্কে। গোলশুন্য ড্রয়ে প্রথমার্ধ ভেসে ছিল ফাউলের বন্যায়। ২২ ফাউলের সেই অর্ধে তিনটি হলুদ কার্ড দেখে স্বাগতিকদের ফুটবলাররা। পঞ্চম মিনিটে গাব্রিয়েল জেসুস, ১৪তম মিনিটে ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া ও ৩৩ মিনিটের মাথায় কার্লোস আউগুস্তো।
তবে প্রথমার্ধের শেষ দিকে এগিয়ে যেতে পারতো স্বাগতিকরা। তবে গোলপোস্টের ফাঁকা সেই অংশে গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির নেওয়া দুর্দান্ত শটটি ঠেকিয়ে দেন ডিফেন্ডার ক্রিস্তিয়ান রোমেরো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণের ধাঁচ বাড়ায় ফের্নান্দো দিনিসের দল। ৫৫তম মিনিটে ডি বক্সের বাঁ প্রান্তে থেকে কোনাকুনি বরবার নেওয়া রাফিনিয়ার শট রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। মিনিট দুয়েক পর আবারও মার্তিনেস ঝলক। দারুণ ড্রিবল করে ডি বক্সে প্রবেশের সময় ডিফেন্ডারদের বাঁধায় পরে যান জেসুস। সেখান থেক বল ছিটকে যায় মার্তিনেল্লির কাছে। সেখানে এই আর্সেনাল ফরোয়ার্ডের জোরালো শট থামায় মার্তিনেস।
ম্যাচে যখন ফেরার আভাস দিচ্ছিল ব্রাজিল ঠিক তখনই তাদের থমকে দিল আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ওতামেন্দি। ৬৩তম মিনিটে জিওভান্নি লো সেলসোর কর্নার কিক থেকে দারুণ হেডে জালের ঠিকানা খুঁজে পান বেনফিকার এই তারকা ডিফেন্ডার।
এ ম্যাচে ঠিক নিজের আসল রুপে দেখা মিলেনি মেসির। উরুর চোটেই হয়তো স্বাভাবিকভাবে খেলতে পারছিলেন না এই তারকা। একাধিকবার দেখা গেছে দলের ফিজিও থেকে উরুতে মাসাজ নিচ্ছেন তিনি। ৭৭তম মিনিটে মাঠ থেকে তাঁকে তুলে নেন স্কালোনি। বদলি হিসেবে নামেন ডি মারিয়া।
এরপর একের পর এক চেষ্টা চালিয়েও সমতা ফেরাতে পারেনি স্বাগতিকরা। উলটো ৮২তম মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় তারা। মাঠে নামার মিনিট দশেকের মাথায় ডি পলকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন জোয়েলিনতন।
এই জয়ে ছয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে নিজেদের জায়গা আরও শক্ত করলেন মেসি-মার্তিনেসরা। অন্যদিকে টানা তিন ম্যাচে হেরে ৭ পয়েন্টে আটকে থেকে তালিকার ছয়ে নেমে গেছে ব্রাজিল।