সাকিবের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আশরাফুল
সঙ্কটের শুরু হয়েছিল পাকিস্তান সফরের আগে থেকেই। সেই সফরে পুরো দল ঢাকায় থেকে পাকিস্তান সফরে যায়। জটিলতা এড়াতে সাকিব কানাডা থেকে দুবাই হয়ে পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেন।
সেই সফর শেষে বাংলাদেশ দল দেশে ফিরে। সাকিব ফেরেননি। তিনি চলে যান ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে। সেখান থেকেই সিরিজ শুরুর একদিন আগে ভারতের চেন্নাইয়ে পৌছান। তারপর কানপুরে সিরিজের শেষ টেস্টে তিনি ঘোষণা দেন বিদেশের মাটিতে এটাই তার শেষ টেস্ট। মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলে তিনি টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান।
তবে তার সেই ইচ্ছেটা অপূর্ণই রয়ে গেল। তার ফেরা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে বাক-বিতন্ডা থেকে শুরু করে স্টেডিয়ামের আশপাশে মিছিল শ্লোগানে ক্রিকেট আনন্দ হারিয়ে গেল। রাজনীতিই মুখ্য হয়ে উঠলো। এমন পরিস্থিতি যে তৈরি হবে সেটা প্রায় অনুমিত ছিল। সেই আভাষ তো অনেক আগেই মিলেছিল। পরিস্থিতির এই সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিসিবির মারফত সাকিবকে না করে দেয়।
বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভুঁইয়া সজীব এই বিষয়ে তার পরিস্কার বার্তায় জানিয়ে বলেন, ❝আমি নিজেও চেয়েছি, সাকিব আল হাসানের মতো একজন ক্রিকেটার দেশের মাটিতে অবসর নিক। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, প্রথম দিকেই বলেছি সাকিব আল হাসানের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে যা স্বাভাবিক। রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করাসহ জনমনের ক্ষোভ নিরসনে তিনি ফেসবুক পোস্ট দিলেও সাম্প্রতিক প্রতিবাদে প্রতীয়মান হয়েছে যে তা যথেষ্ট ছিল না। যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরও তা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। সাউথ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজে কোনপ্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই আপাতত দেশে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে বিসিবিকে পরামর্শ দিতে হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার আশু ব্যবস্থা হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে সকলেরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত বলে মনে করি। কোন অভিযোগ থাকলে আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েই তার সমাধান খোঁজা যেতে পারে।❞
সাকিবের খেলোয়াড়ি জীবনে দীর্ঘদিনের সতীর্থ সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল এই সার্বিক বিষয়ে তার মতামতে বলেন, ‘সাকিব চাইলে কানপুরেই তার টেস্ট ম্যাচ ক্যারিয়ার শেষ করতে পারতেন। বলতে পারতেন এটাই আমার শেষ টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু তিনি দেশের মাটিতে মিরপুরে খেলে টেস্টকে বিদায় জানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। আমরাও ভেবেছিলাম সেটাই হবে। তবে হয়নি। আপনি যদি একদিক দিয়ে বিবেচনা করেন তাহলে আমি মনে করি যে ওর বিদায়ের কারণে আমাদের ক্রিকেটটা যেন বন্ধ না হয় সেই কারণেই আমার মনে হয় বর্তমান সরকার এই ঝুঁকিটা নিতে চায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা চলাকালে যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটলো যার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটাই বন্ধ হয়ে গেল! তখন কি হবে? দেশের ভাবমূর্তি তো তখন আরো বড় সঙ্কটে পড়বে। সেদিক বিবেচনা করে আমি বলতে পারি সাকিব এখানে তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে পারেননি সেটা দুঃখজনক তো অবশ্যই। তারপরও আমি বলবো তাকে ঘিরে, তার রাজনৈতিক পরিচয়কে ঘিরে যা হয়েছে সেটা বর্তমান সময়ের জন্য অনেক বিতর্কিত ইস্যু। আমি মনে করি দেশের ক্রিকেটটাই আসল বিষয়। সেই বিবেচনাবোধকে সামনে রেখে আমি বলতে পারি সরকার এই বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত।’
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ক্রিকেট মহলে এমন একটা পরিস্থিতিতে তাকে ঘিরে বিতর্ক যে তৈরি হতে পারে সেটা কি সাকিব আগে অনুমান করতে পারেননি। অবশ্যই পেরেছিলেন। আর সেই জটিলতা এড়াতে তিনি যেভাবে টরন্টো থেকে পাকিস্তান, পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ড, ইংল্যান্ড থেকে ভারত, ভারত থেকে ফের আমেরিকার বিমান ধরেছিলেন মাঝে একটা দিনও বাংলাদেশে না এসে; সেই তিনিই তো কানপুরে টেস্ট ক্যারিয়ারকে গুডবাই বলে দিলে বর্তমানের এই জটিল পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো। নয়কি?
এই প্রশ্নে সাকিবের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বললেন, ‘মিরপুরে দেখলাম সাকিবের ভক্তরা তার সমর্থনে মাঠের আশেপাশে এসেছেন। তারা দাবি তুলছেন সাকিবের ইচ্ছেটা যেন বিসিবি পুরুণ করে। সাকিব আসলে মাঠের পারফরমেন্সের বিচারে লা-জবাব। আগেই বলেছি সাকিব চাইলেই তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষটা কানপুরেই করতে পারতেন। তাকে ঘিরে দেশে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা তো তিনি আগেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আমার কাছে তো মনে হয় সাকিব এখানেও হয়তো বা এই বিষয়ে একটা গেম খেলেছেন। যেহেতু সে এখন রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের সাতমাসের এমপি ছিলেন তিনি। কানপুরেই সাকিব টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করলে আজ হয়তো আমাদের এই পরিস্থিতি দেখতে হতো না। আমি তো মনে করি সাকিব যদি এখনো ফেইসবুক লাইভে এসে নিজের ভুল শিকার করে একটা বক্তব্য দেন তাহলে মানুষ হয়তো তাকে ক্ষমা করতেও পারে।’