দিল্লি শুধু লাড্ডুর না, এখন ধুলোরও শহর!
দিল্লি (ভারত) থেকে: ইনডিগো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট থেকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে পা রাখতেই মনে পড়ল আমার সেই সহকর্মীর কথা। যিনি কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর কাভার করে গেলেন। বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই বার্তার সহকর্মী শাহজাহান মোল্লার কথাটা আবার কানে আসল, 'ভাই মাস্ক নিয়ে যাবেন কিন্তু, দিল্লিতে যা ধুলো!'
টেক্সিতে পাহাড়গঞ্জের পথ ধরার পথে চালক বিহারের রাম মোহনও ফের সতর্ক করে দিলেন, 'আর বলবেন না, দিল্লির বাতাসে ধুলার সঙ্গে ছাই উড়ছে! এই সময়টাতে এমনই হয়। টিকে থাকা মুশকিল।'
সত্যিই তাই, বায়দূষণ দিল্লির বড় এক আতঙ্কের নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ঐতিহাসিক ভারত সফর কাভার করতে এসে সেটি প্রথম দিনেই বুঝতে পারলাম। অবশ্য গত কিছুদিন ধরেই চর্চা চলছে, বিতর্ক হচ্ছে, কথার খই ফোটাচ্ছেন বিশ্লেষকরা- এমনই যখন বায়ুদূষণ তাহলে দিল্লিতেই কেন ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করতে হবে?
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিজুড়ে ভেন্যুর কী কমতি ছিল?
না, তেমনটা নয়, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছে ভারতে, সফরটা তো জমকালো করা চাই। গোটা ভারতের বৈচিত্র প্রতিবেশী দেশটিকে না দেখালে কি হয়? বাংলাদেশ দলের সফরসূচি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে রাজধানীতে প্রথম পা রাখছে দল, তারপর কলকাতা মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা ফিরে আসবেন ফের বদ্বীপে। পূর্ব প্রান্তের শহর ছাড়ার আগে পশ্চিমে নাগপুর, রাজকোট, ইন্দোরেও পা পড়বে টাইগারদের।
কিন্তু ওই যে প্রথমেই ধুলোয় ধুসর হতে হচ্ছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে এর আগে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে মুখে ‘মাস্ক’ পরতে বাধ্য হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও কী তেমন কিছু করবে? ৩ নভেম্বর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি। তার আগে বায়ুদূষণ নিয়ে ভাবছে টাইগার ম্যানেজম্যান্টও।
গত দুইদিনই মাস্ক পড়ে অনুশীলনে দেখা গেল ক্রিকেটারদের। হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তো বলেই ফেললেন, 'এই কন্ডিশনে খেলা যায় না। কেউ খেলতেও চাইবে না! চোখ জ্বালা করছে, গলায় সমস্যা হচ্ছে! '
অনুশীলনেই মাস্ক পড়ে অনুশীলনে দেখা গেছে লিটন দাস-সৌম্য সরকারসহ অন্য ক্রিকেটারদের। এছাড়া উপায়ইবা কি? দীপাবলির রঙের উৎসবের পর রাজধানীর বাতাস তো আরও কুয়াশাময়। মাঘের শীতের সকাল যেন! এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স জানাচ্ছে দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা এখন ৩০১-৪০০। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে শারীরিক অসুস্থতাতেও পড়তে হচ্ছে!
সত্যিই তাই, দিল্লিতে পা দিয়েই বুঝতে পারছি এখানে আর যাই হোক ঠিক মতো শ্বাস নেওয়ার উপায় নেই। বাতাসে ধোয়ার মতো উড়ছে ধুলো! যে মাঠে ৩ নভেম্বর নামবে বাংলাদেশ-ভারত সেই অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের পরিবেশটাও এমন! দূষিত ধুলোয় উড়াউড়িতে কাছের জিনিসও মনে হচ্ছে ঝাপসা!
ভেন্যু নিয়ে সবার এমন আপত্তির কথা লেখা হচ্ছে দিল্লির পত্রিকাতেও। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বড় করেই খবরটা চোখে পড়ল। যেখানে দেখা যাচ্ছে এক ছবিতে মাস্ক পড়েই অনুশীলন করছেন আল আমিম-সৌম্য সরকাররা। প্রশ্ন উঠল এমন পরিবেশে ক্রিকেট কেন?
সবার এমন আপত্তির কথা কানে এসেছে সৌরভ গাঙ্গুলির। বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি অবশ্য বললেন, 'অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন আর করার কিছু নেই।
তবে ক্রিকেট ম্যাচে যে তার প্রভাব পড়বে না তা গলা উঁচু করেই বলে দিচ্ছে দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। কারণ ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটের চাহিদা তুঙ্গে! অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের গ্যালারি পূর্ণ থাকার গ্যারান্টিও মিলেছে!
কিন্তু চাঁদের কলঙ্কের মতো দিল্লির ম্যাচটাতে বারবারই ফিরে আসছে বায়ুদূষণ প্রসঙ্গ! অথচ দিল্লি তো লালকেল্লার শহর, মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী! ইন্ডিয়া গেট, কুতুব মিনার, জামে মসজিদ,পার্লামেন্ট ভবন, দেখার আছে কতো কী!
আর ওই যে দিল্লি কা লাড্ডু? যা খেলেও পস্তাতে আবার না খেলেও! কিন্তু না, আপাতত এই একবিংশ শতাব্দিতে দাঁড়িয়ে এসব কিছু ভুলে যান। ঢাকার কাঠাল বাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিট থেকে কেনা মাস্ক নাকে-মুখে পড়ে নিয়েছি। আপাতত দিল্লিতে এটাই আমার পরম বন্ধু। দিল্লি শুধু লাড্ডুর না, এখন ধুলোরও শহর!