পাকিস্তান সফরের জন্য শর্তও সাজাচ্ছে বিসিবি
-পাকিস্তান সফরে তাহলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল?
বিসিবি থেকে উত্তর মিলল-‘সম্ভাবনা বেশি। তবে এখনো সরকারের কাছ থেকে এই ব্যাপারে আমরা সুনির্দিষ্ট সবুজ সঙ্কেত পাইনি। ওটা পেলেই বাদবাকি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
বিসিবির বাদবাকি এই সিদ্ধান্তের মধ্যে বেশকিছু শর্তও আছে। এই সফরে যদি যেতেই হয় তবে পাকিস্তানের কাছে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে বিসিবি।
সার্বিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রাক প্রস্তুতি দেখে এটা স্পষ্ঠ যে এই সিরিজ খেলার জন্য মানসিকভাবে তৈরি তারা। সরকারের উর্ধ্বতন মহল থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললেই দল গঠন থেকে বাকি প্রস্তুতিতেও নেমে পড়বে বিসিবি।
তবে এই সিরিজে খেলতে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের জন্য বিসিবি বেশকিছু শর্তও তৈরি করছে। বিসিবি শুধু টি-টোয়েন্টি সিরিজ পাকিস্তানে খেলতে চায়। দুই টেস্টের সিরিজটা সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলতে আগ্রহী বিসিবি। তাছাড়া পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজের পুরোটা সময় ক্রিকেটারদের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তানের কাছে প্রতিশ্রুতিও চাওয়া হবে। তিনটি টি- টোয়েন্টি ম্যাচ যেন এক ভেন্যুতেই আয়োজন করা হয় সেই দাবিও তুলবে বিসিবি।
পাকিস্তান এসব শর্তপূরণে রাজি হবে কিনা- সেটাও দেখার বিষয়।
নতুন বছরে জানুয়ারির মাঝামাঝি শেষ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। টুর্নামেন্ট শেষই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের সূচি রয়েছে। অবশ্য এর আগেও অনেকবার পাকিস্তান সফরের এমনসব ক্রিকেট সূচি ছিল। কিন্তু সেই সফরে বাংলাদেশ যায়নি। কারণ একটাই-পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রিকেটের অনুকূলে ছিল না।
সেই ২০০৯ সাল থেকেই পাকিস্তানের মাটিতে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় রুদ্ধ প্রায়। মাঝে জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনেক বলে কয়ে বিশাল সব উপঢৌকন দিয়ে পাকিস্তান তাদের মাটিতে খেলাতে নিয়ে গেছে। আর এই মূহুর্তে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট সিরিজ খেলার জন্য শ্রীলঙ্কা দল পাকিস্তান সফরে রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তান তাদের হোম সিরিজের ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলেছে। নয়তো প্রতিপক্ষের দেশে গিয়ে খেলে এসেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড বা বাংলাদেশ এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে যায়নি। যথাযথ নিরাপত্তার কারণে এসব দেশের পাকিস্তানে সফর না করাটা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের জন্য পাকিস্তান নিরাপদ নয় জেনে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) পেছনের ১০ বছরে সেখানে কোন ক্রিকেট আয়োজন করেনি। এমনকি ২০১১ সালের বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক থেকে পাকিস্তানের নাম কেটে দেয় আইসিসি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান তাদের মাটিতে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। সফরকারি দলগুলোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে। সফরের আগে সংশ্লিষ্ঠ দেশের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরাও পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বচক্ষে পরিদর্শন করে আসছেন।
নিরাপত্তার নানাবিদ শর্ত পূরণ করায় পাকিস্তানে এখন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে আইসিসি তাদের এলিট প্যানেলের আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারিকে দায়িত্ব পালন করতে পাঠাচ্ছে। এই যেমন বর্তমানে পাকিস্তান তাদের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের যে সিরিজ খেলছে সেখানে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারিও আছেন।
পাকিস্তানও জানিয়ে দিয়েছে-সামনের মৌসুম থেকে পাকিস্তান ক্রিকেট লিগ (পিসিএল) আয়োজন আর অন্য দেশের মাটিতে হবে না। সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তানের মাটিতেই। এমনকি হোম সিরিজের টেস্ট ম্যাচগুলোও তারা আর অন্যত্র কোথায় খেলবে না। হোম ম্যাচগুলোও নিজ মাটিতেই আয়োজন করবে পাকিস্তান।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রাওয়ারপিন্ডি ও করাচিতে চলতি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে পাকিস্তান সেই পথেই যাত্রা শুরু করল। এই চ্যাম্পিয়নশিপের পরের সূচিই তাদের বাংলাদেশের বিপক্ষে। এই সিরিজে তিনটি টি- টোয়েন্টি এবং দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের মাটিতে মাত্র একবারই টেস্ট সিরিজ খেলেছে, ২০০৩ সালে।