পুরুষ করলে প্রফেশন, নারীর বেলায় চরিত্র নিয়ে টান!



সানজিদা সামরিন
গ্রাফিক্স: বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক্স: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মাছ খেতে গেলে গলায় অনেক সময় কাঁটা ফোঁটে। একদলা ভাত, কলা বা একটুখানি লেবুর রসে সে কাঁটা নেমে যায়। তবে কখনও কখনও গলায় ফুঁটে থাকা কাঁটা ভোগায় বহুদিন। সমাজে নারীর চিত্রটা এখন কী? উত্তরে গড়গড়িয়ে বেশিরভাগই বলে উঠবেন- হ্যাঁ, এখন তো বলতে গেলে কোনো মেয়েই বসে নেই। গ্রাজুয়েশন শেষ করেই যে যার মতো ক্যারিয়ার শুরু করছে। সংসার আর সন্তান লালন পালনই নয়, সমানে কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নারী। কিন্তু একথাও এখন গৎবাঁধা লাগে। নারী কতটা ঘর থেকে বের হলো সেকথাই বলা হয় কিন্তু ওই কর্মক্ষেত্র সামলে নারী যখন ঘরে ফেরে তখনকার কথা বলতে চাচ্ছি। একেবারেই ঘরের কথা। যেখান থেকেই বন্ধনের শুরু ও শেষ। একটা উদাহরণ দিয়েই বলি-

মোহাম্মদ নাসীর উদ্দীনের (ছদ্মনাম) মেয়ে নিপা পারভীনের (ছদ্মনাম) বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল যে কারণে তা এসময়ে ভাবলে খুবই ঠুনকো লাগে। সময়টা ২০০৯ সাল। ফেসবুক অতটা শোরগোল ফেলেনি। ভার্সিটির এক ছোটভাইকে বাঁচাতে নিপা ও তার কয়েক বন্ধু মিলে রক্ত ও টাকা জোগাড় করছিল। দুঃখজনভাবে নিপাকে কাজটি পরিবারের কাছে লুকিয়েই করতে হচ্ছিল। দারুণ রক্ষণশীল ও কথিত ভদ্র পরিবারের মেয়েরা রাস্তায় রাস্তায় বাক্স নিয়ে টাকা তুলতে যায় না। বরং চুপচাপ ক্লাস করে রিকশায় উঠে বাসায় ফেরত আসাই নিয়ম। যাই হোক, ওসব টাকা তোলা, রক্ত জোগাড় হলো কিনা, ডোনার ম্যানেজ এসব কারণেই সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে হতো নিপাকে। মূল দায়িত্বটা ছিল তূর্যস নামের এক বন্ধুর। ফলে তার সঙ্গে বাকিরা যোগাযোগ রাখতো। নিপার পরিবার তার এ পরোপোকার ধর্মের কথা না জানলেও স্বামী আজীজ নূর বিষয়টা জানতেন এবং ভীষণ রকম অসুন্তষ্ট ছিলেন। নিপার রাতদিন একধিক পরপুরুষের (বন্ধু, ডোনার ইত্যাদি) সঙ্গে কথা বলা ও রাস্তায় ভিক্ষা (একজন মানুষকে বাঁচাতে অর্থ জোগান) করা তার পছন্দ ছিল না। একবার রাগ তুঙ্গে ওঠায় নিপার বাবাকে জানালেন। উল্লেখ্য, নিপা ও আজীজের কাবিন হয়ে ছিল কিন্তু তখনও তুলে নেয়নি। ফলে নিপা বাবার বাড়িতেই থাকত। নিপার বাবা কান থেকে আজীজের ফোন নামিয়েই অকথ্য ভাষায় মেয়েকে গালাগাল করলেন। কেন স্বামীকে ঠকিয়ে পরপুরুষদের সঙ্গে সে ফোনালাপে লিপ্ত সে প্রসঙ্গে অপবাদ দিলেন। নিপার মতো পিতৃভীরু শান্ত মেয়ে কোনোভাবেই সমর্থ্য হলো না তার প্রকৃত কর্মের কথা বাবাকে বোঝাতে। বন্ধুরা মিলে যে একটি ভালো কাজ তারা করার চেষ্টা করছে সেটা তার পক্ষে বোঝানো সম্ভব হলো না। প্রসঙ্গক্রমে আরও অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু এখানে তার উল্লেখের প্রয়োজন নেই। এক পর্যায়ে খুব দ্রুতই তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।

এবার আসি মোহাম্মদ নাসীর উদ্দীনের ছোট মেয়ে ও নিপারই ছোট বোন দীপার (ছদ্মনাম) কথায়। দীপার স্বামী দীপন পেশায় একজন অভিনেতা। পাশাপাশি তিনি ব্যবসা করেন। দীপাও কর্মজীবী, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। দুজনেই ভীষণ রকম অসাম্প্রদায়িক ও শিল্পপ্রেমী বলে সংসারে সাধারণ গোঁড়ামি নেই বলে বলা যায় তারা সুখী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দীপন অভিনয় করে। সেহেতু খুব স্বাভাবিকভাবেই তাকে অন্যান্য নারী মডেল বা অভিনেত্রীদের সঙ্গে হরহামেশাই সময় কাটাতে হয়, যোগাযোগ রাখতে হয়। বিয়ের পর একসঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে কিছু অলিখিত নিয়মকানুন যেন এমনিতেই বর্তে যায়। যেমন- কর্মজীবী হলেও দুজনকেই একটা নির্দিষ্ট সময় বাড়ি ফেরা, খাওয়া-ঘুমানোর একটা নির্দিষ্ট রুটিন, দুজন দুজনকে সময় দেয়া, যে যেমন পেশাতেই থাকুক না কেন বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষায় একটা নির্দিষ্ট বাউন্ডারি তৈরি করা ইত্যাদি।

বিয়ের পর যেহেতু একসঙ্গে থাকছে সেহেতু দীপনের ছোটখাট অনেক ঘটনাই চোখে পড়ছে দীপার। যা আশপাশের সবাই ও দীপার পরিবারের কাছে সমর্থনযোগ্য হলেও কখনও দীপার পক্ষে গ্রহণ করা ঢেঁকি গেলার মতো কঠিন হয়ে পড়ছে বৈকি। যেমন- গভীর রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীপনের ফোনে কথা বলা। মাঝে মাঝে মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে দীপা দীপনকে বিছানায় পায় না। তখন পাশের ঘরে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকে সে, দীপা প্রবেশ মাত্রই ফোন কেটে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অভিনেত্রীকে করা নানান মেসেজ, কমেন্ট দেখে দীপা ভেঙে পড়ে বা মুশড়ে পড়ে না তা নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে দীপন বিরক্ত হয়, কখনও জবাব দেয় না বা অনেক সময়ই অশান্তি হয়। দীপনের পরিবারের কাছে দীপনের অসময়ে ফোনে কথা বলা বা অভিনিত্রেীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রফেশনের অংশ, দীপার পরিবারও তাই মনে করে। অপরদিকে দীপনের এসব কর্মকাণ্ডে দীপার অসম্মতিতে আপত্তি প্রকাশ করে দীপার পরিবার ও আশপাশের মানুষজনও। এবার প্রশ্ন হলো, বাবা মোহাম্মদ নাসীর উদ্দীনের বক্তব্য কী এ বিষয়ে? তার বক্তব্য- দীপন অভিনেতা। রাত করে বাড়ি ফিরতেই পারে। একাধিক সেলিব্রেটি ও নারীর সঙ্গে দীপনের সখ্য, সময় কাটনো ও ফোনালাপ থাকতেই পারে। এটা তার প্রয়োজন। কঠিন করে দেখার কিছু নেই। দীপা তো বিয়ের আগেই জানতো দীপন পেশায় একজন অভিনেতা। তাহলে কেন তার সঙ্গে অন্য অভিনেত্রীদের নিয়ে বিরক্ত দীপা? এটা দীপার সংকীর্ণতা নয় কী! দীপা এসব পাগলামী করলে সংসারে অশান্তি বৈ কিছু আসবে না।

এবার আসামি দীপার প্রসঙ্গে বলি- দীপা একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। কর্মক্ষেত্রে সে প্রশংসিত ও গুরুত্বপূর্ণ। অফিসের পরও সহকর্মীদের ফোন তাকেও তুলতে হয়। সেরে নিতে হয় প্রয়োজনীয় কথা। কিন্তু তা রাত ৩-৪টা বাজে নয়! কারণ দীপা আদতেই প্রফেশনাল। ফলে ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবন সে আলাদা করতে পারে। যার কারণে তার অ্যাসাইনমেন্ট টাইম কখনোই রাত ১২টার পর বা মধ্যরাতে হতে পারে না।

এখন দীপন ও দীপার বিষয়টা একটু উল্টে-পালে্ট বলি, দীপার বাবা মোহাম্মদ নাসীর উদ্দীন বা স্বামী দীপন কি কখনো মেনে নেবে আজ দীপা যদি অফিস আওয়ারের পর কোনো পুরুষ সহকর্মীকে নিয়ে একা ডিনারে যায়, তার প্রস্তাবে বাইকে চড়ে লং ড্রাইভে যায়, মধ্যরাতে দীপনকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে পাশের ঘরে বসে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে  ফিসফিস করে ফোনালাপ করে।

তখন কি বাবা নাসীর উদ্দিন ও উদারনৈতিক স্বামী অভিনেতা দীপন কি বলবে- দীপনের ন্যায় দীপাও তার প্রফেশনে ব্যস্ত! তার এসব বিষয় নিয়ে অসম্মতি প্রকাশ করা যাবে না। এসব কাজ তার প্রফেশনের অন্তর্ভুক্ত! তখন কি নিপার মতোই তার গায়ে লেপে দেয়া হবে না চরিত্রহীনার ট্যাগ? আদর্শ স্ত্রী হতে না পারার লেবেল? যদি তাই হয় তাহলে কেন প্রফেশনের আঁচল দিয়ে পুরুষের অনৈতিক আচরণকে ঢেকে রাখতে যায়, পুষে রাখতে চায় আমাদের পরিবার, সমাজ, সকলে? এখনও স্বাভাবিক নিয়মে সম্মান বজায় রেখে কাজ করতে নারীকে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘরে না ফিরতে পারলে নিজের পরিবারই নারীকে নানান কটুক্তি করে। যে কাজ করলে রাতে বাড়ি ফিরতে হয় সে কাজ ছেড়ে দাও এমন কথা আজও কোনো নারী শোনে না নিজের পরিবার বা স্বামীর কাছ থেকে তা কিন্তু নয়।

সুতরাং কোন কাজটি প্রফেশনের অন্তর্গত ও কোনটি নয় তা নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবারই বোধগম্য হওয়া উচিৎ। নারীর একার সংযম, বৈধতাজ্ঞান ও সম্মানে সমাজ টিকবে কি?

   

নারীরাই সমাজের স্থপতি



ফাহমিদা নবী
নারীরাই সমাজের স্থপতি

নারীরাই সমাজের স্থপতি

  • Font increase
  • Font Decrease

নারীর জাগরণে অনেক পিছিয়ে আছি বললে ভুল হবে। যদি বলি, তবে প্রযুক্তির যুগে এসে সে কথা বলার কোন মানে হয় না। নারীও তাঁর অধিকারে এগিয়ে যাচ্ছে সাহস এবং শক্তিশালী মানসিকতার বদৌলতে। কেন পিছিয়ে থাকবে?

১৯০৮ সালের শ্রম আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি। বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া আমাদের নারীদের জাগরণের জন্য যখন পথ দেখালেন তখন থেকে অদ্যাবধি অবস্থানকে শক্ত এবং শক্তিশালী করবার দুর্নিবার পথ চলা কিন্তু থেমে নেই। তবুও আমরা আজো পিছিয়ে কেন? যে জাতি নারীদের সম্মান করতে পারে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

নারীরাই সমাজের প্রকৃত স্থপতি। নারীকে চিন্তা চেতনার শর্তে জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। আমাদের দেশে আত্মসচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই নারীদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; সবসময় এবং বারংবার। নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। এ শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজসেবার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে। আর তা করতে হলে সমাজ সম্পর্কে তাঁর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন।

নারী দিবস মানেই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া সৃষ্টিতে-কৃষ্টিতে সমতায় সেরা নারী যেন কোনভাবেই ভেঙে না পড়ে।

আমার তো মনে হয় নারী ফিনিক্স পাখি! সে যেভাবে বারবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাড়ায়। নিজের কিশোরবেলা থেকে শুরু করে সংসার, বিয়ে, সন্তান থেকে পরিবার পুরো সমাজ সংসারে তার চলাচল ভীষণ ইতিবাচক। তাঁর তো সময় নেই নেতিবাচকতায় চোখ রাখবার! থাকুক যতই বাধা তার ধৈর্যের কমতি নাই। হাসিমুখে সব কিছুতে তাঁর অংশগ্রহণ এক বিস্ময়।

সত্যি বলতে কী নারী মানেই “মা”। তাই নারী সব কিছুরই উদাহরণ। মাকে কখনো কঠিন হতে হয়, কখনো কোমল, কখনো বা সংসার কৌশলী, বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী।

নারীদের বলতে চাই জীবনে সংগ্রাম থাকবেই কিন্তু পিছিয়ে পড়া যাবে না। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কথা বলতে, না বলতে, সাহসে পথ চলতে শিখতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে।

আমাদের দেশে নারীদের অংশগ্রহণ এখন সর্বত্র। শুধু সাহস আর মানবিকতা পথটাকে আরেকটু চিনে চলতে হবে। কারণ অমানবিকতা আনাচেকানাচে চিরকালই দেখি।

আরেকটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতেই হবে যা মানবিক আচরণ। কিছু সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যদি সবাই এক সমতায় তবে এখনো পিতার সম্পত্তি বণ্টনে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কেন? বিশাল সমস্যা এখানেই রয়ে গ্যাছে। এই সমঅধিকারের প্রতিকার যতদিন না হবে বৈষম্যের ফাঁকটা রয়েই যাবে। এবং মেয়েদের উপর অত্যাচার কখনোই কমবে না।

পৃথিবীর কোন দেশে এই বৈষম্যতা নেই বলেই নারীরা অনেক সাহসে এবং সমতার অংশগ্রহণের নিশ্চিত থাকতে পারে।

আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। সমবণ্টন নিশ্চিত হোক। নারীর এগিয়ে যাওয়া আর রুদ্ধ হবে না।

আমি সব সময় মুগ্ধ হই আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। কী প্রাণবন্ত হয়ে নারীদের অগ্রগতিতে তিনি কতটা ভূমিকা রাখছেন! প্রতি মুহূর্তে তিনি চান মেয়েরা এগিয়ে আসুক সাহসী হোক। তিনি এ ব্যাপারেও কাজ করছেন শুনেছি। আশা করি অবশ্যই পিতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমঅধিকার হবে। কাজেকর্মে, শিক্ষায় সমাজ সংসার জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখুক সমতায়। সেজন্য সুযোগ সুবিধায় নারীদের সম্মানকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

সকল নারীদের জন্য শুভ কামনা; আত্মবিশ্বাসে পথ চলা সফল হোক।

ফাহমিদা নবী: সংগীত শিল্পী

;

‘নারীবাদী’ শব্দের উৎপত্তি এবং এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক



নারীশক্তি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

‘নারীবাদী কিনা?’ প্রশ্নে পুরুষ কিংবা নারী- অনেককেই অপ্রস্তুত হতে দেখা যায়। কারো উত্তরে থাকে দ্বিধা। হাস্যকর হলেও সত্য, কেউ কেউ উত্তর দেয়,‘আমি নারীবাদী নই, তবে আমি সমতায় বিশ্বাসী।’ সমাজে অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘নারীবাদী’ শব্দটার অর্থ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। বর্তমান সমাজে মানুষ নারীদের সমান অধিকারের দাবীর কথা শুনে হাসে। কিছু মানুষের মতে, নারীরা বরং বেশিই পাচ্ছে। বর্তমান সমাজচিত্র দেখে অনেকে মনে করেন, নারীবাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বরফখণ্ড ভাসতে দেখে, পানির নিচে তার আকার বোঝা যায় না। নারীবাদী  শব্দের সূচনা যখন হয়েছিল, তখন সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন ছিল।

নারীবাদ মানেই পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের মানসিকতা। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে-মানুষ হিসেবে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার প্রাপ্য, সেই নারীবাদী। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ের অনেক নারীবাদীদের মধ্যে পুরুষ বিদ্বেষী ভাব ফুটে ওটে। এই আচরণ কোনোভাবেই নারীবাদী হওয়ার প্রমাণ নয়!    

উনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবার ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিক চার্লস ফুরিয়ে ১৮৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। এরপর ১৮৭২ সালে  ফ্রান্স এবং ১৮৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে ফেমিনিজম এবং ফেমিনিস্ট শব্দ দু’টির ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা ভোটের অধিকার আদায়ে এবং নারী-পুরুষ সমান ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু করে। এই  আন্দোলন হয়েছিল কারণ, কর্মক্ষেত্রে সম্মান এবং আয়ের দিকে নারীরা ছিল পুরুষদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।  সমান অধিকার ছিল না বলেই, তা ছিনিয়ে নিতে বার বার আন্দোলনে নামতে হয়েছে নারীদের ।

স্রষ্টা পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ-কে পাঠিয়েছেন। অথচ বিবেক-বুদ্ধিবান মানব সমাজেই একপক্ষকে অপর পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। ব্যাপারটা কেমন বেখাপ্পা নয় কি?

একটা সময় নারীদের নিজ ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারও ছিল না। শিক্ষাগ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় স্বামীর মৃত্যু হলে, জীবিত নারীদের তাদের সাথে পুড়িয়ে মারা হতো। নারীর ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের সকলে মিলে তাকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করতো। সম্রাট আকবর তার রাজত্বকালে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চালু হয়ে বিধবা বিবাহ আইন। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ছেলেকে এক বিধবা কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে।

তৎৎকালীন এই অসমতার চিত্র, ইউরোপের অনেক লেখকের কলমে ফুটে উঠেছিল প্রাচ্যের বর্বরতা হিসেবে। তারা নারীদের প্রতি আচরণের কারণে, প্রাচ্যকে অনুন্নত বিবেচনা করতো। অথচ পশ্চিমের আচরণ যে নারীদের প্রতি খুব সম্মানজনক ছিল, নাও কিন্তু নয়!

ইংল্যান্ডের বাজারে একসময় বউ বিক্রি হতো। নারীদের লাল লিপস্টিক দিয়ে সাজ ছিল নিষিদ্ধ। কেবল দেহ ব্যবসায়ী নারীরাই লাল লিপস্টিকের ব্যবহার স্বাধীনভাবে করতে পারতেন। ১৮০০ সালের দিকে ঝগড়া করার অপরাধে এক ইউরোপীয়ান তার স্ত্রীর মুখে বেড়ি পড়িয়ে রাস্তায় হাঁটিয়েছিলেন। এমনকি নারী আন্দোলন এবং জাগরণের শুরুই হয়েছিল খোদ পশ্চিমের দেশগুলোতেই।  

সব মানুষেই নিজের জীবন স্বাধীনভাবে কাটাতে চায়। কেউই  পরাধীন থাকতে চায়না বিধায়, কালের বিবর্তনে বিশ্বজুড়ে বার বার বিদ্রোহ এবং আন্দোলন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েও লড়ে গেছে স্বাধীনতার জন্য। বর্তমান সমাজ নারীর প্রতি যথেষ্ট নমনীয় হলেও, শুরু থেকে এমনটা ছিল না। সেই কারণেই নারীরা আন্দোলন করে অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।    

;

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;