নিজেকে কথা দিন ‘আপনি ভালো থাকবেন’
![ছবি: বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2021/Jan/01/1609510048682.png)
ছবি: বার্তা২৪.কম
ঘরের শিশু থেকে বয়স্ক ব্যক্তির যত্নআত্তি বা তাদের ভালো রাখার ব্যাপারটির দেখভালের দায়িত্ব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর। তারা কী খাবে, কী পরবে, তাদের কী খেতে ইচ্ছে হয়, কী করতে ইচ্ছে হয় বা কী করলে ভালো হয়, কী করলে তারা ভালো থাকবে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার দায়িত্ব ঘরের নারীদের। আরেকটু উল্লেখ না করলে হচ্ছে না- কী করলে ঘরের শান্তি বজায় থাকবে, সবার মন ফুরফুরে থাকবে, ঘরের পরিবেশ ঠিক থাকবে তারও একটা অলিখিত দায়িত্ব তুলে দেয়া আছে নারীর কাঁধে।
আর এসমস্ত দায়িত্ব পালনে যদি একটু এদিক-ওদিক হয় তাহলে? বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগে গেল- খেয়াল রাখতে পারলে না? মা’র ডায়াবেটিস বেড়ে গেল- ঠিকঠাক যত্ন নিচ্ছ না? তুমি চুপ থাকলেই ঝগড়াটা বাড়তো না বৌমা, মেয়েদের ধৈয্য ধরতে হয়, নয়তো সংসার টেকে না, ননদ-দেবর হঠাৎ চলে গেল কেন, ঝগড়াঝাটি করোনি তো? যে বাড়িতে মেয়ে থাকে সে বাড়ির এই অবস্থা হয়? ইত্যাদি ইত্যাদি।
একটু বলে রাখি- এসব বলার অর্থ এই নয় যে, কেন পরিবারের পুরুষরা এসবের দায়িত্ব নিচ্ছে না বা কেন তাদেরকে দায়ী করা হচ্ছে না। যা বলতে চাই তা হলো- পরিবারের সবার শরীর-মন ও ঘরের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব যদি নারীরই হয় তবে নিজেকে ভালো রাখাটাও যে তার নিজের দায়িত্ব সেটা অধিকাংশ নারীই ভুলে যান।
একটু ভেবে বলতে পারেন- আপনি কর্মজীবী হোন বা হোম মেকার নিজেকে ভালো রাখতে অর্থাৎ নিজের শরীর ও মনকে ভালো রাখতে কতটুকু সময় ব্যয় করেন? নিজেকে কতটুকু সময় দেন? নিজেকে কতবার বলেন যে- ভালো থেকো? সকালে উঠে যেন পরিবারের সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে যার যার কাজে পাঠাতে পারেন এজন্য যেমনে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাতে ঘুমাতে যান তেমনি নিজের শরীর ও মনের পরিচর্যার জন্য দিনে কতটুকু সময় বরাদ্দ রাখেন তা ভেবে দেখেছেন?
এখানে ইংরেজি দুটো শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা হচ্ছে- ফুয়েল বা এনার্জি আরেকটা হচ্ছে ব্রেক যেটাকে বাংলায় দম নেয়া বলতে পারি এক্ষেত্রে। গাড়ি চালানোর আগে দেখে নিতে হয় ঠিকঠাক গ্যাস বা তেল ভরে নেয়া আছে কিনা। তেমনি যদি আপনার মধ্যেই সেই এনার্জিটা না থাকে তাহলে নিজে ভালো থাকবেন কী করে আর অন্যদের রাখবেন কী করে? তাহলে সেই এনার্জিটা কী হতে পারে? তা হচ্ছে নিজের গুরুত্বটা বোঝা ও পরিবারের মানুষগুলোকে বুঝতে দেয়া।
দিনে একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন। ঘরে বা বাইরে আপনি যত ব্যস্তই থাকুন না কেন সে সময়টুকু অবশ্যই রাখবেন। ওই সময়টা কেবল নিজেকে দিন প্রোডাক্টিভ কোনো কাজে, যে কাজে আপনার স্বত্ত্বা জড়িয়ে রয়েছে। হতে পারে তা পেইন্টিং, লেখালেখি, বাগান করা, বুননসহ আরও অনেককিছু। যাতে আপনার হাতও চলবে এবং মস্তিষ্কও পুরোটাই কাজ করবে। সেগুলো হবে একদম নিজের জন্য।
আমি কোন কাজটি ভালো করতে পারি এই প্রশ্নের উত্তর হবে সেগুলো। এগুলো করার সময়ও আশপাশ থেকে ডিস্টারবেন্স আসবে। যেমন- তোমার এসব কাজ সময় নষ্ট ছাড়া কিছু নয়, এসব করে কী লাভ, এটা না করে ওটা করতে পারতে ইত্যাদি। কিন্তু ওসব কথা একেবারেই পাত্তা না দিয়ে নিজেকে প্রতিদিন ওইসময়টুকু অবশ্যই দেবেন। নিজেকে ও আশপাশের সবাইকে বোঝাতে হবে এটা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এবার আসি ব্রেক বা দম নেয়ার কথায়। যে গাড়িতে ব্রেক নেই তার কী অবস্থা হতে পারে তা বলা বাহুল্য। ব্রেকটা কী? ধরুন আপনি রান্না করছেন। শুধুই কি রান্না করছেন? না, মাথায় অনেক কথাই খেলা করছে। এটা করা উচিৎ ছিল, এত চেষ্টা করেও ওটা হলো না ইত্যাদি ইত্যাদি। একদম সবকিছু থেকে ব্রেক নিন, দম নিন। আস্তে আস্তে নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখান যে- অন্য কেউ আপনাকে যা ভাবে বা যেভাবে ব্যাখ্যা করে তা আপনি নন বরং রোজ আপনি যা করছেন সবকিছু নিয়েই আপনি।
তাই ভালো কাজ করুন আর বাকিটা ঝেড়ে ফেলে দিন। নিজেকে বলুন- আপনি নারী, ঈশ্বর বা অতিমানবী নন। তাই সৎ থেকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যেটুকু পারবেন ঠিক ততটুকুই জীবনের জন্য যথেষ্ট। আর নিজেকে কখনোই অবহেলা করবেন না, নিজেকে ভালো রাখবেন খুব বেশি।