নারীর ক্ষমতায়নে ‘শিক্ষা’ অপরিহার্য

  • নাছরিন আক্তার উর্মি, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’ এমন প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবারে পালিত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। করোনায় বিধ্বস্ত গোটা বিশ্ব। নারী নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলা করেছে অনেক দেশ। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। করোনাকালীন সময়েও নারীরা বিভিন্ন সংকট কাটিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কম’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে নারী শিক্ষা, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী নির্যাতন, নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে কথা বলেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

বিজ্ঞাপন

নারী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে আপনার মন্ত্রণালয় কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে?

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা: স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথমেই সবাইকে শুভেচ্ছা। ৮ মার্চ আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নারীদের অভিনন্দন। গত ৮ মার্চ ২০২০ আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে আমি ঘোষণা করেছিলাম যে, মুজিববর্ষে ‘তথ্য আপা প্রকল্পে’র মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫০ লাখ নারীকে ক্ষমতায়ন করা হবে। আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, তথ্য আপা প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ লাখ নারীর ক্ষমতায়নের যে লক্ষ্য ছিলো তা ছাড়িয়ে ৫৪ লাখ নারীকে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৫ তম অধিবেশনে ঘোষণা করেছিলেন নারীদের কর্মসংস্থানের উন্নতি করবেন। তিনি এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও নারীদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তৃণমূল এবং মহানগর পর্যায়ে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য প্রায় ৫৪ লাখ ৫০ হাজার নারীদের তথ্য আপা প্রকেল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জয়িতা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা সৃষ্টি করে তাদের উৎপাদিত পণ্য ব্রান্ডিং করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আগামি মাসে জয়িতা ফাউন্ডেশনের ১২ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন।

ই-কমার্সের মাধ্যমে নারীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য ক্রয়- বিক্রয় করছে। বর্তমানে শতকরা ৮০ ভাগ নারী অনলাইন এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে বিজনেস করছে। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০ তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে।

১০টি জেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রর্দশনী কেন্দ্র, বিক্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল নারীদের স্বীকৃতি ও তাদের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণার জন্য ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা পদক’ চালু করা হয়েছে।

বার্তা২৪.কম’র সাথে সাক্ষাৎকারে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

নারীরা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে এখনো পিছিয়ে কেন?

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা: নারীরা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকার একমাত্র কারণ শিক্ষা। একটা মেয়ে কখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, ওই মেয়েটা যদি শিক্ষিত হয়। শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়নের মূল চাবিকাঠি। শিক্ষা ছাড়া কোনো নারীর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দেশে নারী শিক্ষার হার খুবই কম ছিলো। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীর হার ছেলে শিক্ষার্থীর হারের চেয়ে অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি লেভেলে। নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পিস ট্রি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

আমাদের সরকার নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর বাইরেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যে সমস্ত ইন্টারমেনশন দরকার সেগুলোও আমরা দিচ্ছি। এক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, টিভি চ্যানেলগুলো সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম ভালোভাবে করতে পারে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে এমন এক সময় আসবে যে নারীরা শতভাগ উন্নয়নে পৌঁছাবে।

বর্তমান সময়ে নারী শিশু নির্যাতন বেড়েছে, নারী শিশু নির্যাতন বন্ধে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা: করোনার সময় শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বে নারীরা নির্যাতিত হয়েছে। আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ রোধ এবং যৌতুক নিরোধের জন্য বিভাগীয়, জেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে। তারা নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করছেন।

তাছাড়া ক্রাইসিস সেন্টার, ক্রাইসিস সেল, ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার, ডিএনএ ল্যাবরেটরি প্রোভাইড এবং চব্বিশ ঘণ্টা টোল ফ্রি হেল্প লাইন ১০৯ চলমান আছে। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০২০’ সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীর ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

নির্যাতনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হলেও পরবর্তীতে সেটার ফলোআপ হয় না কেন?

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা: ফলোআপ হয়না সেটা সত্য না। ডিভিশনাল লেভেলে এবং অনেক জেলা লেভেলে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমাদের শেল্টার হাউজ রয়েছে। সেখানে অসহায় এবং নির্যাতিত নারীদের থাকা, খাওয়া সহ আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় বিশ্বের কোনো সরকার একাই সবকিছু করতে পারেনা। সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমঅধিকার এবং সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগে মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।