শেষ মুঘল সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ও সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল।

সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ও সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল।

  • Font increase
  • Font Decrease

মুঘল বাদশাহ জাফরের বয়স পঁয়ষট্টি আর মেয়েটির সতেরো। বাদশাহর অন্য বেগমের ছেলেরাই কেউ কেউ মেয়েটির থেকে বয়সে বড়। মেয়েটি লাল কেল্লায় নামল পালকি থেকে নববধূর বেশে। দেখছিল লালকেল্লার লাল পাথর, মুঘল ঐতিহ্য। তার নবযৌবনা চোখে স্বপ্ন। মুঘল হেরেমে এই নতুন সম্রাজ্ঞীর আনুষ্ঠানিক নাম হলো বেগম জীনাত মহল। অস্তগামী মুঘল উত্তরাধিকারে নারীশক্তি রূপে অচিরেই যে তাকে পালন করতে হবে ঐতিহাসিক দায়িত্ব, সে কথা নবাগত তরুণ রানি মোটেও অনুমান করতে পারেননি।

বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর শাসন ও রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে কবিতা চর্চা বেশি ভালোবাসতেন। রীতিমতো কবি ছিলেন তিনি। ছিলেন উচ্চমানের গীতিকার। উর্দু ও ফারসি ভাষায় ভাল দখল ছিল। গ্রন্থাগার ছিল নিজস্ব। তার আলফাজ বা কথামালা দিল্লির কবিতা-প্রেমীদের প্রিয় ছিল। বাদশাহ গান শুনতে এবং মঞ্চাভিনয় দেখতেও ভালোবাসতেন।

সমকালের অন্যতম প্রধান ও শ্রেষ্ঠ কবি মির্জা গালিব তখন দিল্লি-আগ্রার জনপথে নৈঃশব্দ্য খোঁজেন গভীর রাতে, নেশার ঘোরে মাঝে মাঝে গেয়ে ওঠেন স্বরচিত গজল। বাদশাহর তাকে সভায় আগলে রেখে দিলেন মুঘল দরবারে। ভূষিত করলেন একের পর এক উপাধিতে, দবির-উল-মুলক, নজম-উদ-দৌলা, মির্জা নোশা। সেই সময়ে নবাব, বাদশাহর বংশের না হলে কেউ নামের আগে 'মির্জা' বসাত না। আসাদুল্লাহ খান গালিবকে দেয়া হয় 'মিজা' ব্যবহারের সম্মান ও মর্যাদা।

গান, বাজনা, কবিতার প্রবাহের বাইরে দেশ তখন ক্রমে ক্রমে শত্রু কবলিত হচ্ছে। ১০০ বছর আগে পূর্বের বাংলা অঞ্চলে ইংরেজ কোম্পানি ব্যবসা করার সুযোগে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল। মাদ্রাজ, বোম্বাই, সুরাট প্রভৃতি দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার সমুদ্রতটে কোম্পানির শক্তি আগে থেকেই বেশি। সমুদ্র পেরিয়ে আসা ইংরেজ কোম্পানী পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল দখল করে উত্তর ও পশ্চিম দিকে এগিয়ে আসছে। ভারতের কেন্দ্রে সমাসীন সম্রাটকেও চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ইংরেজ বেনিয়ার দল।

নামমাত্র সম্রাট রেখে বাহাদুর শাহকে ইংরেজ কোম্পানি পেনশনে দিয়ে জীবন কাটানোর ব্যবস্থা করেছে। কোম্পানির সিভিল সার্জেন্টরা ঠিক করে দেয় প্রশাসনিক কর্তব্য। বাহাদুর শাহ শীলমোহর দেন, না দিলেও চলে। তিন বছর বাদশাহী জীবন কাটিয়ে ক্লান্ত বাহাদুর শাহ আবার নিকাহ করেন আর তখন জিনাতের আগমন ঘটে মুঘল হেরেমে।

জিনাত অল্পবয়সী মেয়ে। তবে চঞ্চল ও লাজুক নয়। মেয়েলি তেহজীবের আড়ষ্টতা নেই কথাবার্তায়। বৃদ্ধ বাদশাহের ভালো লেগে গেল ব্যতিক্রমী চরিত্রের 'অ-মেয়েলি' মেয়েটিকে। অতি সাধারণ পরিবারের মেয়েটি হল বাদশাহর চতুর্থ বেগম। বিগত যৌবনা অন্যান্য বেগমরা বিরক্তি নিয়ে দেখলেন, একটা ষোলো-সতেরো বছরের মেয়ে পালকি থেকে নেমে বাদশাহের সঙ্গে মহলে প্রবেশ করছে। তার নয়া বেগম হয়ে আসা মেয়েটিই বেগম জীনাত মহল।

অল্প সময়ের মধ্যেই অন্দরমহলের অন্যান্য সহচরীদের এবং প্রজাদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন জীনাত মহল। বৃদ্ধ বাদশাহের যুবতী ভার্যা, তাই বাদশাহর ওপরেও প্রভাব ছিল যথেষ্ট। উনি যা আবদার করতেন, বৃদ্ধ তাই-ই মেনে নিতেন। উনি বাপের বাড়ি বা অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য পালকি নিয়ে রাজপথে এলে, যে পথ দিয়ে যেতেন সেই পথে ডঙ্কা বাজত। লোকমুখে নাম হয়ে গেছিল 'ডঙ্কা বেগম'। লাল কুঁয়াতে তার প্রাসাদোপম মহলের নামও হয়ে গেল জীনাত মহল। ১৮৪৬ সালে বাদশাহী খাজানার অনেকটাই খরচ করে নির্মাণ করা হয় প্রাসাদ জীনাত মহল। লাল কুঁয়ার সেই জিনাত মহল অযত্নে পড়ে আছে। যেমন অযত্নে পড়ে রয়েছে দিল্লির অনেক কিছুই।

অস্তগামী দিল্লির শাসনের মধ্যেও জিনাত মহল নিজের অবস্থান বাড়াতে থাকেন। সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বাইশ জন সন্তানের মধ্যে নিজের সন্তানকে উত্তরাধিকারের প্রতিযোগিতায় সামনে নিয়ে আসেন জিনাত। মুঘল অভিজাতদের পাশাপাশি ইংরেজ প্রশাসকদেরকেও হাতে রাখেন তিনি। কিন্তু আচমকাই তখন এসে পড়ে সিপাহী বিদ্রোহ।

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ একেবারে মোড় ঘুরিয়ে দিল সবার ভাগ্যের। কোম্পানির সাহেবরা জানতেন, অসুস্থ বৃদ্ধ বাহাদুর শাহ জাফর যা-ই ভাবুন বা করুন, বেগম জীনাত মহল ইংরেজদের বিপক্ষেই থাকবেন। হলও তাই, উনি লাল কেল্লার দরজা খুলে দিলেন মীরাটের বিদ্রোহী সিপাইদের জন্য। বাদশাহর যুবক শাহজাদারাও এক এক করে ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলে নেমে পড়ল বিদ্রোহের লড়াইয়ে। কিন্তু বেগম সুকৌশলে নিজের ছেলেকে সরিয়ে রাখলেন বিদ্রোহের আগুন থেকে, ওঁর তখনও স্বপ্ন, এইসব মিটে গেলে জওয়াঁ বখতকেই তখতে বসাতে হবে। নিজে সবরকম ভাবে বিদ্রোহে সক্রিয় হয়ে উঠলেন, ছেলেকে রেখে দিলেন আড়ালে। গায়ে আঁচ আসতে দিলেন না।

১২ই মে বৃদ্ধ বাহাদুর শাহ হঠাৎই দরবার ডাকলেন অনেক দিন পর। জিনাতের কথা মতোই মুঘল অভিজাত ও সিপাইদের প্রতিনিধিরা সম্রাটকে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার আর্জি জানাল। অথর্ব বৃদ্ধ, নেতৃত্ব দিতে অক্ষম, চিকের আড়ালে বসে থাকা বেগম জিনাতের দিকে তাকালেন ইশারায়। বেগম অপেক্ষা করার ইঙ্গিত দিলেন। সম্রাটও সবাইকে সবুর করতে বললেন।

এদিকে ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিল। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল বিপ্লব আর বিদ্রোহের আগুন। ১৬ই মে সিপাহীরা প্রায় পঞ্চাশজন ইংরেজকে একদিনে হত্যা করল। দিল্লির ইংরেজ আধিকারিক থেকে ইংরেজ বন্দি, যাকে পেল, তাকেই। হত্যা করা হল সিভিলিয়ান ইংরেজ পরিবারের মানুষজনকেও। শুরু হল লুঠ। লুঠ এবং অরাজকতায় অসহায় ছিলেন দিল্লির বৃদ্ধ বাদশাহ। কয়েক মাস দিশাহীন খণ্ড-যুদ্ধের পর, দিল্লিকে দ্রুত ঘিরে ফেলল কোম্পানির লাল ফৌজ। উপযুক্ত সেনাপতি এবং যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার মত ব্যক্তির অভাব ছিল। অভিজ্ঞতা ছিল না শাহজাদাদের। বাবরের বংশধররা ভারতীয় প্রজাদের নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধ করতেই ভুলে গিয়েছিলেন চারশো বছর পর।

পরাস্ত হল অসম ক্ষমতার বিদ্রোহ, অন্য কোথাও থেকে সামরিক সাহায্যও এল না। বৃদ্ধ বাহাদুর শাহ জাফরের বয়স তখন বিরাশি। অসুস্থ শরীর নিয়ে আত্মগোপন করলেন সম্রাট হুমায়ূনের সমাধিসৌধে। বাদশাহর প্রধান উপদেষ্টা এবং উজির হাকিম আহসানউল্লাহ খাঁ পরামর্শ দিলেন, 'আত্মসমর্পণ করুন।’ সেই পরামর্শ মতো বৃদ্ধ আত্মসমর্পণ করলেন, তাতে যদি পরিবার বাঁচে। কিন্তু তা হল না। বিশ্বাসঘাতকতা করলেন আহসানউল্লাহ, ইংরেজদের পক্ষে চলে গিয়ে তাদের হাতে প্রমাণ তুলে দিলেন। জানালেন, বাদশাহ সপরিবার কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্র করেছেন। ইংরেজ অপেক্ষায় ছিল মুঘল উত্তরাধিকারদের নিধনের জন্য।

সুযোগ পেয়েই শাহজাদা মির্জা মুঘল এবং মির্জা খিজির সুলতানকে দিল্লি গেটের সামনে গুলি করে হত্যা করল ইংরেজ মেজর উইলিয়াম হডসন। হত্যা করা হল বাদশাহর পৌত্র আবু বখতকেও। তারপর হুমায়ূনের সমাধিসৌধ থেকে বাদশাহকে বার করে নিয়ে যাওয়া হল লাল কুয়াঁর জিনাত মহলে। বন্দী হলেন বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর এবং জিনাত মহল। যথেষ্ট অপমান এবং বিদ্রূপের শিকার হলেন অসুস্থ এবং অথর্ব বৃদ্ধ বাদশাহ। ইংরেজ ঘোষণা করল, দিল্লির বিদ্রোহ দমন করা গেছে, দিল্লি আমাদের দখলে। ওদিকে তখন লাল কেল্লার সামনে কামনের মুখে বেঁধে তোপ দেগে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক বন্দি বিদ্রোহী-সিপাইকে। সপরিবারে দিল্লি-আগ্রা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে সিঁদুরে মেঘ দেখা প্রজারা। মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদের আশ্রয়ে রাখতে ব্যর্থ প্রাচীন নগরী দিল্লি পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে।

সাজানো আয়োজনের মাধ্যমে ৪১ দিন ধরে একাধিক অপরাধের ধারায় বিচার চলল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর এবং জিনাত মহলের। ২১ জন সাক্ষী, ১৯টি শুনানি। তারপর সাজা ঘোষণা হল। যাকে এতদিন বলা হত 'অথর্ব বৃদ্ধ, নেতৃত্ব দিতে অক্ষম', তিনিই হয়ে গেলেন দিল্লি বিদ্রোহের প্রধান অভিযুক্ত। দণ্ডিত হলেন ভারতের শেষ মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর। পরিসমাপ্তি হলো মুঘল শাসনের। ভারত পুরোপুরি অধীনস্থ হলো ব্রিটিশের।

১৭ বছর বয়সে বেগম হয়ে লাল কেল্লায় পালকি থেকে নামা চঞ্চল মেয়েটি, ৩৪ বছর বয়সে তার বৃদ্ধ অসুস্থ বাদশাহের সঙ্গে নির্বাসনে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। বয়স এবং অসুস্থতার কারণে 'প্রধান অভিযুক্ত'র জেল বা মৃত্যুদণ্ড হল না, কিন্তু নির্বাসন হল একেবারে দেশের বাইরে রেঙ্গুনে। বাহাদুর শাহ জাফরের অমূল্য গ্রন্থাগারের সব পুঁথি বাজেয়াপ্ত করল কোম্পানি সরকার। বাজেয়াপ্ত করল অনেক বাদশাহী সম্পত্তি, অর্থ; পেনাল্টি অফ রিবেলিয়ন।  তারপর বেশ কয়েকটি গোরুর গাড়িতে করে পরিবার এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে পূর্বপুরুষের দিল্লিকে চিরবিদায় জানিয়ে ভোর চারটের সময়ে শেষ রাতের অন্ধকারেই নির্বাসনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন প্রাক্তন-বাদশাহ, সঙ্গে রানি। তাদের ব্রিটিশ 9th Lancers প্রহরা দিয়ে চললো। দিনটি ছিল ১৭ই অক্টোবর, ১৮৫৮। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, পরিবারের কেউ রেঙ্গুন যেতে চাইলেন না বাদশাহর সঙ্গে। সঙ্গে গেলেন শুধু বেগম জিনাত মহল আর দুই শাহজাদা - জওয়াঁ বখত এবং শাহ আব্বাস।

জওয়াঁ বখতকে বাদশাহ দেখার খোয়াব অপূর্ণ রয়ে গেল জিনাতের। বাদশাহীও থাকল না। বিদ্রূপের জীবন আর ভূলুন্ঠিত সম্মান নিয়ে দিল্লিতেও থাকতে চাইলেন না ডঙ্কা বেগম। বরং, শত অভিযোগ থাকলেও সেই অসহায় অসুস্থ বৃদ্ধের নির্ভরযোগ্য সঙ্গিনী হয়ে চলে গেলেন রেঙ্গুন।

ভারতের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রামে দেশের দুই প্রান্তে দুই ভূপতির বীরোচিত ভূমিকা ইতিহাসের অংশ। একজন লখনৌর ওয়াজিদ আলি শাহ এবং আরেকজন দিল্লওির বাহাদুর শাহ। দুজনেই কবি, সংস্কৃতিবান মানুষ, শাসক হিসাবে দুজনেই নির্বাসিত। একজন কলকাতার মেটিয়াবুরুজে আর অন্যজন বার্মার রেঙ্গুনে। দুজনেই তাজ হারালেন। দুজনেরই বেগম বিদ্রোহে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

পরাজয়, সাম্রাজ্য আর অপমানের স্মৃতি নিয়ে আরো চার বছর বেঁচে ছিলেন বাহাদুর শাহ জাফর। অন্তিম সময়ে খুব মানসিক কষ্ট পেয়েছিলেন, নিজের দেশের মাটি পেলেন না বলে। বাদশাহর ইন্তেকালের পর 'মুঘল বাদশাহ' উপাধি বরখাস্ত করল ইংরেজ সরকার।  তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শেষ, ভারতে ব্রিটিশ সরকারের শাসননজারি হয়েছে আর সম্রাটের জায়গায় বড়লাটের আসন কায়েম হয়েছে। বেগম জিনাত মহল জীবিত ছিলেন আরো চব্বিশ বছর। রেঙ্গুনেই থাকতেন, দেশে ফেরার ইচ্ছাও প্রকাশ করেননি। তার শেষ বয়সের একটি আলোকচিত্রে তার চোখে বেদনার মেঘ জমে আছে। তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ১৮৮৬ সালে। বাদশাহর পাশেই সমাধিস্থ হলেন তিনি রেঙ্গুনে।

   

নারীরাই সমাজের স্থপতি



ফাহমিদা নবী
নারীরাই সমাজের স্থপতি

নারীরাই সমাজের স্থপতি

  • Font increase
  • Font Decrease

নারীর জাগরণে অনেক পিছিয়ে আছি বললে ভুল হবে। যদি বলি, তবে প্রযুক্তির যুগে এসে সে কথা বলার কোন মানে হয় না। নারীও তাঁর অধিকারে এগিয়ে যাচ্ছে সাহস এবং শক্তিশালী মানসিকতার বদৌলতে। কেন পিছিয়ে থাকবে?

১৯০৮ সালের শ্রম আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি। বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া আমাদের নারীদের জাগরণের জন্য যখন পথ দেখালেন তখন থেকে অদ্যাবধি অবস্থানকে শক্ত এবং শক্তিশালী করবার দুর্নিবার পথ চলা কিন্তু থেমে নেই। তবুও আমরা আজো পিছিয়ে কেন? যে জাতি নারীদের সম্মান করতে পারে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

নারীরাই সমাজের প্রকৃত স্থপতি। নারীকে চিন্তা চেতনার শর্তে জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। আমাদের দেশে আত্মসচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই নারীদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; সবসময় এবং বারংবার। নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। এ শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজসেবার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে। আর তা করতে হলে সমাজ সম্পর্কে তাঁর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন।

নারী দিবস মানেই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া সৃষ্টিতে-কৃষ্টিতে সমতায় সেরা নারী যেন কোনভাবেই ভেঙে না পড়ে।

আমার তো মনে হয় নারী ফিনিক্স পাখি! সে যেভাবে বারবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাড়ায়। নিজের কিশোরবেলা থেকে শুরু করে সংসার, বিয়ে, সন্তান থেকে পরিবার পুরো সমাজ সংসারে তার চলাচল ভীষণ ইতিবাচক। তাঁর তো সময় নেই নেতিবাচকতায় চোখ রাখবার! থাকুক যতই বাধা তার ধৈর্যের কমতি নাই। হাসিমুখে সব কিছুতে তাঁর অংশগ্রহণ এক বিস্ময়।

সত্যি বলতে কী নারী মানেই “মা”। তাই নারী সব কিছুরই উদাহরণ। মাকে কখনো কঠিন হতে হয়, কখনো কোমল, কখনো বা সংসার কৌশলী, বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী।

নারীদের বলতে চাই জীবনে সংগ্রাম থাকবেই কিন্তু পিছিয়ে পড়া যাবে না। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কথা বলতে, না বলতে, সাহসে পথ চলতে শিখতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে।

আমাদের দেশে নারীদের অংশগ্রহণ এখন সর্বত্র। শুধু সাহস আর মানবিকতা পথটাকে আরেকটু চিনে চলতে হবে। কারণ অমানবিকতা আনাচেকানাচে চিরকালই দেখি।

আরেকটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতেই হবে যা মানবিক আচরণ। কিছু সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যদি সবাই এক সমতায় তবে এখনো পিতার সম্পত্তি বণ্টনে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কেন? বিশাল সমস্যা এখানেই রয়ে গ্যাছে। এই সমঅধিকারের প্রতিকার যতদিন না হবে বৈষম্যের ফাঁকটা রয়েই যাবে। এবং মেয়েদের উপর অত্যাচার কখনোই কমবে না।

পৃথিবীর কোন দেশে এই বৈষম্যতা নেই বলেই নারীরা অনেক সাহসে এবং সমতার অংশগ্রহণের নিশ্চিত থাকতে পারে।

আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। সমবণ্টন নিশ্চিত হোক। নারীর এগিয়ে যাওয়া আর রুদ্ধ হবে না।

আমি সব সময় মুগ্ধ হই আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। কী প্রাণবন্ত হয়ে নারীদের অগ্রগতিতে তিনি কতটা ভূমিকা রাখছেন! প্রতি মুহূর্তে তিনি চান মেয়েরা এগিয়ে আসুক সাহসী হোক। তিনি এ ব্যাপারেও কাজ করছেন শুনেছি। আশা করি অবশ্যই পিতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমঅধিকার হবে। কাজেকর্মে, শিক্ষায় সমাজ সংসার জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখুক সমতায়। সেজন্য সুযোগ সুবিধায় নারীদের সম্মানকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

সকল নারীদের জন্য শুভ কামনা; আত্মবিশ্বাসে পথ চলা সফল হোক।

ফাহমিদা নবী: সংগীত শিল্পী

;

‘নারীবাদী’ শব্দের উৎপত্তি এবং এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক



নারীশক্তি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

‘নারীবাদী কিনা?’ প্রশ্নে পুরুষ কিংবা নারী- অনেককেই অপ্রস্তুত হতে দেখা যায়। কারো উত্তরে থাকে দ্বিধা। হাস্যকর হলেও সত্য, কেউ কেউ উত্তর দেয়,‘আমি নারীবাদী নই, তবে আমি সমতায় বিশ্বাসী।’ সমাজে অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘নারীবাদী’ শব্দটার অর্থ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। বর্তমান সমাজে মানুষ নারীদের সমান অধিকারের দাবীর কথা শুনে হাসে। কিছু মানুষের মতে, নারীরা বরং বেশিই পাচ্ছে। বর্তমান সমাজচিত্র দেখে অনেকে মনে করেন, নারীবাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বরফখণ্ড ভাসতে দেখে, পানির নিচে তার আকার বোঝা যায় না। নারীবাদী  শব্দের সূচনা যখন হয়েছিল, তখন সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন ছিল।

নারীবাদ মানেই পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের মানসিকতা। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে-মানুষ হিসেবে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার প্রাপ্য, সেই নারীবাদী। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ের অনেক নারীবাদীদের মধ্যে পুরুষ বিদ্বেষী ভাব ফুটে ওটে। এই আচরণ কোনোভাবেই নারীবাদী হওয়ার প্রমাণ নয়!    

উনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবার ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিক চার্লস ফুরিয়ে ১৮৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। এরপর ১৮৭২ সালে  ফ্রান্স এবং ১৮৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে ফেমিনিজম এবং ফেমিনিস্ট শব্দ দু’টির ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা ভোটের অধিকার আদায়ে এবং নারী-পুরুষ সমান ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু করে। এই  আন্দোলন হয়েছিল কারণ, কর্মক্ষেত্রে সম্মান এবং আয়ের দিকে নারীরা ছিল পুরুষদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।  সমান অধিকার ছিল না বলেই, তা ছিনিয়ে নিতে বার বার আন্দোলনে নামতে হয়েছে নারীদের ।

স্রষ্টা পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ-কে পাঠিয়েছেন। অথচ বিবেক-বুদ্ধিবান মানব সমাজেই একপক্ষকে অপর পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। ব্যাপারটা কেমন বেখাপ্পা নয় কি?

একটা সময় নারীদের নিজ ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারও ছিল না। শিক্ষাগ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় স্বামীর মৃত্যু হলে, জীবিত নারীদের তাদের সাথে পুড়িয়ে মারা হতো। নারীর ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের সকলে মিলে তাকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করতো। সম্রাট আকবর তার রাজত্বকালে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চালু হয়ে বিধবা বিবাহ আইন। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ছেলেকে এক বিধবা কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে।

তৎৎকালীন এই অসমতার চিত্র, ইউরোপের অনেক লেখকের কলমে ফুটে উঠেছিল প্রাচ্যের বর্বরতা হিসেবে। তারা নারীদের প্রতি আচরণের কারণে, প্রাচ্যকে অনুন্নত বিবেচনা করতো। অথচ পশ্চিমের আচরণ যে নারীদের প্রতি খুব সম্মানজনক ছিল, নাও কিন্তু নয়!

ইংল্যান্ডের বাজারে একসময় বউ বিক্রি হতো। নারীদের লাল লিপস্টিক দিয়ে সাজ ছিল নিষিদ্ধ। কেবল দেহ ব্যবসায়ী নারীরাই লাল লিপস্টিকের ব্যবহার স্বাধীনভাবে করতে পারতেন। ১৮০০ সালের দিকে ঝগড়া করার অপরাধে এক ইউরোপীয়ান তার স্ত্রীর মুখে বেড়ি পড়িয়ে রাস্তায় হাঁটিয়েছিলেন। এমনকি নারী আন্দোলন এবং জাগরণের শুরুই হয়েছিল খোদ পশ্চিমের দেশগুলোতেই।  

সব মানুষেই নিজের জীবন স্বাধীনভাবে কাটাতে চায়। কেউই  পরাধীন থাকতে চায়না বিধায়, কালের বিবর্তনে বিশ্বজুড়ে বার বার বিদ্রোহ এবং আন্দোলন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েও লড়ে গেছে স্বাধীনতার জন্য। বর্তমান সমাজ নারীর প্রতি যথেষ্ট নমনীয় হলেও, শুরু থেকে এমনটা ছিল না। সেই কারণেই নারীরা আন্দোলন করে অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।    

;

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;