রূপালি পর্দার আনারকলির মৃত্যুর বেদনা



শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
আনারকলিরূপী মধুবালা

আনারকলিরূপী মধুবালা

  • Font increase
  • Font Decrease

মুঘল হেরেমের রহস্যময়ী নর্তকী আনারকলির মৃত্যু নিয়ে রহস্যের অন্ত নেই। কেউ বলেন, শাহজাদা সেলিমের সঙ্গে প্রেম ও প্রণয়ের জন্য তাকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলেন সম্রাট আকবর। কারো মতে, তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। অনেকের মতে সুড়ঙ্গপথে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল অজানা ঠিকানায়।

চলচ্চিত্রের রূপালি পর্দায় আনারকলি হয়েছিলেন মধুবালা তথা মমতাজ জাহান দেহলভী (১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩ - ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯)। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। সে মৃত্যও বেদনায় বিদীর্ণ। আজ তার মৃত্যুদিনে রূপালি পর্দার আনারকলির বেদনাও স্পর্শ করছে সবাইকে।

যিনি মধুবালা নামেই বেশি পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন অন্যতম ভারতীয় অভিনেত্রী। তিনি অনেক হিন্দি ধ্রুপদী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার সমসাময়িক নার্গিস এবং মীনা কুমারীর বিপরীতে তাকে হিন্দি চলচ্চিত্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বাধিক সুন্দর-আকর্ষণীয় অভিনেত্রী হিসেবেও গণ্য হন। পরিচিত হন 'ভেনাস অব বলিউড' নামে।

৩৬ বছরে জীবনে দীর্ঘ ৯ বছর হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে বিছানা নিয়েছিলেন চলচ্চিত্রের আনারকলি নামে খ্যাত মধুবালা। তবে শুধু চলচ্চিত্রেই নয়, বাস্তবেও সেলিমের বা দিলীপ কুমারের প্রেমে পড়েন মধুবালা। দীর্ঘ সাত বছর চলেছিল তাদের প্রেমপর্ব। এই সম্পর্ক আকস্মিক ভেঙে যায়।

একটি ছবির শ্যুটিং চলছে। বাইরে মধুবালাকে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না তার বাবা। পরিচালক-প্রযোজক অনুরোধ করেন দিলীপ কুমারকে। তিনি যেন এই প্রসঙ্গে মধুবালার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। দিলীপ কুমার এই নিয়ে মধুবালার বাবার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি অভিনেতাকে অপমান করেন। মধুবালাও এ ক্ষেত্রে দিলীপ কুমারের পাশে দাঁড়াতে পারেননি। মধুবালার বক্তব্য ছিল, দিলীপ কুমার নয়, তার বাবা আতাউল্লাহ খান-ই তার প্রেমিকের কাছে অপমানিত হয়েছেন। মধুবালা স্পষ্ট জানান, তিনি তার বাবার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারবেন না। তিনি দিলীপ কুমারকে অনুরোধ জানান, তার বাবার কাছে এই আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে।

দুইজনের মিলন আর হয়নি বাস্তবে। ইতিহাসের সেলিম-আনারকলির প্রেমের মতোই দিলীপ কুমার-মধুবালার দীর্ঘ প্রেম অতৃপ্তির হাহাকারে গুঞ্জরিত হয়। কে. আসিফ পরিচালিন বলিউডের ইতিহাস সৃষ্টিকারী 'মুঘল-ই-আজম' ছবিতে সেসব বিধৃত রয়েছে। 'আনারকলি: মুঘল হেরেমের রহস্যময়ী নারী' শীর্ষক সর্বসাম্প্রতিক গ্রন্থের লেখক ড. মাহফুজ পারভেজ শাহজাদা সেলিম-আনারকলির প্রেমের মতো দিলীপ কুমার-মধুবালার দীর্ঘ প্রেমের তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। এবারের ২০২২ সালের একুশের গ্রন্থমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে ৭০ বছরের প্রাচীন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট ওয়েজ। বইটি রকমারি.কম-এ পাওয়া যাচ্ছে।

ইতিহাসের ভাষ্যানুযায়ী, আনারকলি ছিলেন একজন পৌরাণিক দাসী কন্যা। জন্মসুত্রে তার নাম নাদিরা বেগম অথবা শার্ফ-উন-নিসা। ধারণা করা হয় যে, আনারকলি কোনও এক বণিক বহরের সাথে ইরান থেকে মুঘল ভারতে অভিবাসিত হয়েছিলেন। তারপর স্থান লাভ করেন মুঘলদের রাজকীয় হেরেমে। সেখানে শাহজাদা সেলিমের সঙ্গে তার বিয়োগান্তক প্রেমের করুণ আখ্যান সর্বজনবিদিত। একইভাবে তার জন্ম, পরিচিতি ও মৃত্যু সম্পর্কেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন করুণ বিবরণ।

ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, বলিউডের ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র কে. আসিফের 'মুঘল-ই-আজম'- আনারকলির জীবনালেখ্য। শাহজাদা সেলিমের সাথে (যিনি পরবর্তিতে সম্রাট জাহাঙ্গীর হয়েছিলেন) প্রেম ও প্রণয়ের সম্পর্ক স্থাপনের অপরাধে মুঘল সম্রাট আকবরের নির্দেশে দুটি ইটের দালানের মধ্যখানে জীবন্ত কবরস্থ করার মর্মন্তুদ ঘটনা চিত্রিত হয়েছে চরম নাটকীয়তায় ও রোমাঞ্চে। আনারকলি চরিত্রে 'ভেনাস অব বলিউড' নামে খ্যাত মধুবালা এবং শাহজাদা সেলিম চরিত্রে 'ট্র্যাজিডি কিং' দিলীপ কুমারের স্মরণীয় অভিনয় এবং প্রেমের ঘটনাও অম্লান হয়ে আছে।

আশ্চর্যজনকভাবে, কোনও বিশেষ প্রমাণ বা তথ্যসূত্র না থাকায় আনারকলি সম্পর্কিত ঘটনা অধিকাংশের নিকট মিথ্যা ও অনৈতিহাসিক বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া আনারকলি উপাখ্যান মুঘল ইতিহাস গ্রন্থ 'আকবরনামা' অথবা 'তুজক-ই-জাহাঙ্গীর'-এর কোথাও উল্লেখিত হয়নি। কিন্তু আনারকলির সম্বন্ধে প্রথম জানা যায় ইংরেজ পর্যটক ও বণিক উইলিয়াম ফেঞ্চের সাময়িকী থেকে, যিনি তৎকালে শাহজাদা সেলিম বা সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকালে আগস্ট ২৪, ১৬০৮ সালে মুঘল ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের উর্দু ভাষী বিশাল অঞ্চলে, বিশেষত লখনৌ, আগ্রা, দিল্লি, লাহোরের জনশ্রুতিতে আনারকলি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মব্যাপী পরিচিত একটি নাম হয়ে এখনও বিদ্যমান। তাকে ঘিরে রচিত হয়েছে বহু নাটক, সিনেমা ও গ্রন্থ। লাহোরে রয়েছে আনারকলির মাকবারা বা সমাধিসৌধ। রয়েছে প্রাচীন আনারকলি বাজার। শাড়ি, ব্লাউজে আনারকলি ডিজাইন এখনও মশহুর। এখনও চলচ্চিত্রের আনারকলি মধুবালার করুণ জীবনালেখ্যও মানুষকে আলোড়িত করে।

মধুবালা এখনও অবধি উপমহাদেশের সিনেমার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী। নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত যখন বলিউডে প্রথম এলেন, তখন অনেকেই তার সৌন্দর্যের সঙ্গে মধুবালার তুলনা করেছিলেন। কিন্তু মধুবালার সৌন্দর্য কালজয়ী। মধুবালার সৌন্দর্য ছিল তাঁর অনুরাগীদের নখদর্পণে। তার বোন মধুর ভূষণ এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এসব ঘটনার সাক্ষ্য বহন করেছেন।

যখন মধুবালা রীতিমত নামী নায়িকা, তখনা একদিন বোনদের নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিল্ম দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সুপারস্টার মধুবালা সাধারণ ভাবে যেতে পারতেন না। কারণ জানাজানি হয়ে গেলে ‘মবড’ হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। ফলে বোরখা পরে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে নির্দিষ্ট আসনে বসেছিলেন মধুবালা।

ইন্টারমিশনের সময় স্ন‍্যাক্স বিক্রি হচ্ছিল প্রেক্ষাগৃহের মধ্যেই। মধুবালা ও তার বোনেরা কিছু স্ন‍্যাক্স কিনলেও তাদের কাছে কোনো বিক্রেতা দাম নিতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত মধুবালার বোনরা এক বিক্রেতাকে চেপে ধরে জানতে চান, কেন তারা দাম নিচ্ছেন না। সেই বিক্রেতা খোলসা করলেন প্রকৃত ঘটনা।

সেই বিক্রেতা বলেছিলেন, তাদের সঙ্গে স্বয়ং মধুবালা আছেন। ফলে খাবারের দাম নেওয়া যাবে না। মধুর বলেন, মধুবালা কোথায়, ওই ব্যক্তির নিশ্চয়ই কোনো ভুল হচ্ছে। বিক্রেতা বলেন, তাদের কোনও ভুল হচ্ছে না। কারণ তারা বোরখা পরিহিত মহিলার পায়ের পাতা দেখে চিনতে পেরেছেন, তিনিই মধুবালা। কারণ অত সুন্দর পা আর কারও হতে পারে না। মধুবালা চমকে ছিলেন কিনা জানা যায়নি, তবে তার বোনরা রীতিমত চমকে গিয়েছিলেন।

নায়িকা হতে চাননি মধুবালা। তার বাবা জোর করে অর্থ রোজগারের জন্য অত্যন্ত শিশু বয়সেই মধুবালাকে অভিনয় জগতে আসতে বাধ্য করেন। পারিবারিক কারণে দিলীপ কুমারের জীবন থেকে সরে গিয়েছিলেন মধুবালা। তবুও অত্যন্ত প্রফেশনাল হয়ে শেষ করেছিলেন ‘মুঘল-ই-আজম’ ফিল্মের শুটিং। আজও আইকনিক হয়ে রয়ে গেছে তা। আনারকলিরূপী মধুবালা গেঁথে রয়েছেন সকলের মনে।

   

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনি’র মৃত্যুর ঘটনায় উপযুক্ত বিচার এবং দেশটিতে চলমান নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা।

রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। একই সাথে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ ওই দেশে বিভিন্ন শহর ও বিশ্বব্যাপী চলমান আন্দোলনের সাথে তারা একাত্মতা পোষণ করেন।

ইরানে আন্দোলনরত নারী সমাজ ও জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘সঠিক উপায়ে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনীকে সম্প্রতি গ্রেফতার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পুরো ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে অজুহাতে ইরানে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা এরকম নৃশংস জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, শত শত নারী কারাগারে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। ইরানের নারীরা ইরানের জনগণ এই জুলুম নির্যাতনের অবসান চায়। বাংলাদেশেও একটি গোষ্ঠী ধর্মের নামে মেয়েদের ওপর বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই বিষয়গুলোকে এভাবেই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’

মানববন্ধনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক দিলরুবা খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ পারভীন এলিস, সদস্য আফরোজা সরকারসহ নারী সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা পোশাকের জন্য নারীর ওপর খবরদাবি নারীর মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানববন্ধন থেকে নারী ওপর এ ধরনের খবরদারি ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধসহ মাসা আমিনী হত্যা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়।

;

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

  • Font increase
  • Font Decrease

"প্রথম বা আগের পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না মুসলমান পুরুষরা।"

বুধবার (১২ অক্টোবর) এ রায় জানিয়ে দিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। যুগান্তকারী রায়ের প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানেরও উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট।

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে জানায়, "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ।" এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ কেশরওয়ানি এবং রাজেন্দ্র কুমার তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, “যদি কোনও মুসলমান পুরুষ বুঝতে পারেন যে, তিনি আগের পক্ষের স্ত্রী সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম, তবে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ করার ভাবনা থেকে সরে আসা উচিত।"

অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মীয় দিক থেকে উত্তেজক এই রায়ের প্রসঙ্গে আদালতের সাফ পর্যবেক্ষণ হলো, "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।"

কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ নিবাসী আজিজুর রহমান প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে প্রদত্ত রায়ে আদালত জানায়, "প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অজান্তেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাই ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে কিংবা প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করতে পারেন না।"

ভারতের বিচারালয় আগেও তিন তালাক, খোরপোশ ও হিজাব সম্পর্কে বিভিন্ন রায় দিয়েছে, যা নিয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতণ্ডা ও বাদানুবাদ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে দেওয়া আদালতের রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়ের এক অংশে "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না" মর্মে উল্লেখ করায় তা কেবল মাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেওয়া হয়েছে বলা যায় না। তদুপরি, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ" উল্লেখ করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। সবকিছু মিলিয়ে নারীর অধিকার ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় রায়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে নারীর ক্ষমতায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।

;