সাক্ষাৎকারে শামীম আখতার—

“নিজেকে অবগুণ্ঠিত করে পুরুষতন্ত্রকে সহায়তা করছে নারীরা”



ক্যামেলিয়া আলম
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

শামীম আখতারের কর্মজীবনে নানান পেশার সমাবেশ থাকলেও তিনি সাংবাদিকতাকেই তার প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। অনন্যা পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘ সাত বছর। সংবাদের মেয়েদের পাতাকে নতুন মাত্রা দিয়ে নারীর রাজনীতির পাতা হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। নারী অধিকার, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রভৃতি আন্দোলনে সক্রিয় থাকা এবং আজ অবধি ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করেন বলে তিনি নিজেকে এ্যাকটিভিস্ট বলেই দাবি করেন। তবে তাঁর বর্তমান কাজ সিনেমা বানানো এবং পড়ানো। পত্রিকার পরবর্তীকালে হেড অব ডকুমেন্টারিজ হিসেবে কাজ করেছেন ইলেক্ট্রকিনক মিডিয়া যমুনা টিভি ও মাছরাঙা টিভিতে। ৮ মিনিটের ছোট ছবি ‘সে’ দিয়ে শুরু তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিহাস। শামীম আখতারের কাহিনী নিয়ে তারেক মাসুদের সাথে যৌথ উদ্যোগে চলচ্চিত্রটি করেন ১৯৯১ সালে। এরপর পূণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসমূহ করেন ১৯৯৮ তে ‘ইতিহাস কন্যা’, ২০০১ এ ‘শিলালিপি’ এবং ২০১৬ তে ‘রীনা ব্রাউন’। এছাড়াও ২০টির ওপরে প্রামাণ্যচিত্র রয়েছে তাঁর। দুটো বই মৃত্তিকা কন্যা ( অনুবাদ ) ও ‘আমাদের সনাক্ত কর (মৌলিক) রয়েছে। বর্তমানে সিনেমা, মুক্তিযুদ্ধ, নারী বিষয়ক প্রকাশিত লেখাগুলো নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশের কাজ চলছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিভাগীয় সম্পাদক-নারীশক্তি, ক্যামেলিয়া আলম


বার্তা২৪: নারী আর পুরুষের ইকুয়িলিটির অবস্থান কী আপনার চোখে?
শামীম আখতার: নারী আর পুরুষকে দেখাবার দৃষ্টিভঙ্গি পাঁচ বছর আগেও যা ছিল, তার প্রেক্ষাপট এখন আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। নারী পুরুষের ইকুয়িলিটির চিন্তাধারার ফোকাসটাই পাল্টে গেছে। নারীকে উপস্থাপন করা হচ্ছে অনেক চটুলভাবে। ইকুয়িলিটির মূল লক্ষ্য থেকে নারীকে সরানো হয়েছে। দেখানো হচ্ছে জোলো আকারে। গভীরভাবনার বদলে চটকদার বিষয় হিসেবে নারীকে দেখাবার ট্রেন্ড চালু হয়েছে। বর্তমানে নারীর খবর প্রচারিত হয় তার জীবনাদর্শকে উপলব্ধিকরণের জন্য না, বরং কী কী খবর দিলে তা রমরমা হবে, পত্রিকার নিউজটি সাধারণের কাছে কতটা চটকদার হবে সেই বোধ থেকে। ফলে নারী খবর কাগজগুলোর পণ্যে পরিণত।
বার্তা২৪: বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এই প্রতিযোগিতার কালে আমরা সবাই কী পণ্য নই?
শামীম আখতার: হ্যাঁ, মানুষ মাত্রই পণ্য। কিন্তু নারীকে নিয়ে চলছে অসুস্থতা। হুজুগ তৈরি হচ্ছে, ফোকাস করা হচ্ছে নারীর এমন কোনো ইস্যু যা নারীর অবস্থান পরিবর্তন বা তাঁর কাজের মূল উদ্দেশ্যকে তুলে ধরছে না। পোশাকি আবরণ দিয়ে, ভিন্নমাত্রার উপস্থাপন ভঙ্গি দিয়ে তাঁকে উপস্থাপন করাবার প্রয়াস রীতিমতো নারীকে তার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু হবার চিন্তাধারা থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে।

বার্তা২৪: কোন অভিপ্রায় থেকে তা দিচ্ছে?
শামীম আখতার: অবশ্যই প্যাট্রিয়ার্কি টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে। দীর্ঘদিন নারী আন্দোলনের সাথে সক্রিয় থেকেছি। আমাদের উদ্যোগ থাকত অচলায়ন ভাঙা। বাস্তব কাজের মধ্য দিয়ে। স্থির লক্ষ্যকে সামনে রেখে। এখন নারীদের সেই সমস্ত লক্ষ্য তৈরির স্পেস থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা ইস্যুকে একইসাথে দাঁড় করিয়ে। একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যপথে যাবার জন্য লাগে চিন্তাভাবনার পরিসর, কিন্তু এখন নিউজগুলো সব মতামত বেইজড। এর এই মত, তার সেই মত, আর যার মত যত চমকদার করে বহুজনের কাছে পৌঁছানো যায় সেই চেষ্টা হচ্ছে। কোনো বিশ্লেষণ ছাড়া, উৎপত্তির মূল বিষয় চিহ্নিত করা ছাড়া সেই সব মতামত প্রকাশ পাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের মূল উৎস কোথায় এর কোনো গবেষণালব্ধ দৃষ্টিভঙ্গি বা দিকনির্দেশনা গড়ে উঠতে দিচ্ছে না।

বার্তা২৪: পত্রিকাগুলোতে নারীপাতা বা নারীর ওপর ফোকাস করা কিছু বিষয় থাকে, তাহলে তা কী নারী উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখবে না?
শামীম আখতার: ভূমিকা রাখত। কিন্তু বলছি যে সেই পাতাগুলো এখন সেলিব্রেটিং ওরিয়েন্টেড হয়ে যাচ্ছে। সাহিত্যের পাতায় সাহিত্য, আর্টের পাতায় আর্ট, তেমন নারীও এমন এক বিষয়। সেখানে সংবাদপত্রগুলোর উপস্থাপন দিয়ে নারীর ভূমিকা নির্ধারিত হচ্ছে। কোনটা সেলিব্রেট আর কোনটা লড়াই তা স্পেসিফিক হচ্ছে না। কোনো উদ্দেশ্যকে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা হচ্ছে না। ইকুয়িলিটি চাচ্ছি তার মূল লক্ষ্য কী, কী করে সেই লক্ষ্যে একসাথে পৌঁছানো যেতে পারে তা কি নারী পাতাগুলো করতে সক্ষম হচ্ছে? আমরা নিউজ হিসেবে নারীকে দেখাচ্ছি, উপলব্ধিকরণের জায়গা থেকে তাকে উপস্থাপিত হতে দিচ্ছি না।

বার্তা২৪: সমাজের প্রতি সেক্টরে নারীর অবস্থা কি পরিবর্তন হয় নাই? আগের চাইতে অধিক সংখ্যক নারী এখন পাবলিক সেক্টরে কাজ করছে না?
শামীম আখতার: হ্যাঁ, করছে। নারীদের বহুক্ষেত্রে অন্তুর্ভুক্ত করা হচ্ছে, প্রমোট করা হচ্ছে। তবে তাঁরা যথাস্থানে ক্যাপেবল কিনা তা বিবেচনা না করেই। ফলে অযোগ্য আর অদক্ষ বলে সেই সব জায়গায় পুরুষতন্ত্র নানা পন্থায় তাদের কাঠামো টিকিয়ে রাখছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যে নারী আসছে, সে ফিল্মটি কার উদ্দেশ্যে করছে, কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে তা জানছে না, কারণ তাঁর আসাটি কোটায়।

বার্তা২৪: এখানে একটা প্রশ্ন করি, বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নারী যে কর্মকর্তাগণ আছেন, তারা কিন্তু দক্ষতার প্রমাণ ইতোমধ্যেই রেখেছেন। ৬৪ জেলার মাঝে মাত্র ৮ বা ৯টি জেলায় নারী, খুবই কম, কিন্তু তাদের জেলাগুলোর আইনশৃংখলা পরিস্থিতির রিপোর্ট কিন্তু বাকি জেলাগুলোর চাইতে ভালো। এমন কি কোনো নারী কর্মকর্তা বলেছেন, রাত্রি ১২টা অবধি কাজ করতে গেলেও তারা নারী হিসেবে অসহযোগিতা পায়নি। এ তি তবে পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোতে সমঝোতা করে চলবার জন্য?
শামীম আখতার: মেয়েদের জন্য দুইটা অপশন সোসাইটিতে রাখা আছে। যা একজন পুরুষের জন্য নাই। তাদের একদল বিয়ে শাদি করে হোম মেকিংয়ে যায়, অন্য আরেক দল—লেখাপড়া করে ক্যারিয়ার গড়ার দিকে। সেই হোম মেকিংয়ের অপশনটাও এদেশে নারীর ওপর চাপানো হয় বহুক্ষেত্রে। তা ভিন্ন ব্যাপার। এখন যারা ক্যারিয়ার গড়ার দিকে যায়। তাঁরা লেখাপড়া করে, নিজেদের যোগ্য করে তোলে কোনো জবের জন্য। ফলে তাঁরা যখন চাকরি বা ক্যারিয়ারিস্ট কোনো অপশনের দিকে যায়, তাঁরা অধিক যোগ্যতাবান বলেই যেতে পারে। কারণ তাকে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে প্রমাণ করতে হয় পুরুষটির পাশে। যেমন সোসাইটাল ভ্যালুজের জন্য একজন মাকে সারাক্ষণই এক মানসিক প্রেশারে থেকে ভালো মা হবার লড়াইয়ে পড়তে হয়। ঠিক তেমনই একজন নারীর কাজের যোগ্যতা, তাঁর সীমানা প্রুভ করতে হয় বিভিন্নভাবে। ফলে নারীদের দেখা যায়, তারা আন্তরিক, একাগ্র হয়ে যে কোনো কাজ করে। এও কিন্তু এক ধরনের রণক্ষেত্র।

বার্তা২৪: এই রণক্ষেত্র কি নারীর জন্য বাড়তি প্রেশারের নয়?
শামীম আখতার: অবশ্যই প্রেশারের। কিন্তু যতদিন নারীর অবস্থানের পরিবর্তন না হবে। তাদের এই বাস্তবতা থেকে সরে দাঁড়াবার অপশন নাই। নারীদের বহু লিমিটেশন মাথায় নিয়ে প্রতিটি কাজ করতে হয়। একজন নারীর ঘরের প্রেশার নিতেই হচ্ছে এখনো, এছাড়াও তাদের শারীরিক পর্যুদস্ত করার মতো বিষয় অহরহ, মর্যাদাহানির মতো ঘটনাগুলো তো আছেই। সমগ্র নারীকে এক পুরুষতান্ত্রিক সিস্টেমকে কন্ট্রোল করে তার অপটিমাম হয়ে বেটার কন্ডিশনে আসতে হয়। এখনো নারীকে এসব পরিস্থিতি সামলাতে হয় হাসিমুখে, অমায়িক হয়ে, ভালোবাসা দিয়ে।

বার্তা২৪: নারীদের এ থেকে মুক্তির পথ তাহলে নাই?
শামীম আখতার: মুক্তির পথ হয়তো সামনে আসবে। কিন্তু লড়াই চালিয়ে যেতে হবে সব নেগেটিভিটি মাথায় রেখে। লোকেট করতে হবে, অরগানাইজড হতে হবে, হোম ওয়ার্ক করে তাঁকে পথ বের করতে হবে। কারণ বুঝতে হবে যে সমাজের বাহ্যিক পরিবর্তন হওয়া মানেই অন্তর্গত পরিবর্তন হয়ে যাওয়া না। মোড অব প্যার্টিয়ার্কি তাকে বুঝতে হবে। নারীদের এতসংখ্যক অবস্থানের পরেও কিন্তু পিতৃতন্ত্রের সাথে তার সংযোগ নষ্ট হয়নি। সমাজ আজও নারীর পোশাক, বাচ্চা কোন স্কুলে যাবে, বাচ্চার অভিভাবকত্ব সবই নিয়ন্ত্রণ করে।

বার্তা২৪: তাহলে বলতে চাইছেন, পিতৃতন্ত্র যে কাঠামো সৃষ্টি করেছে তা নারী ভাঙতে ব্যর্থ?
শামীম আখতার: হ্যাঁ, অন্ততপক্ষে এখনো। কারণ এখনো পুরুষ স্রষ্টা আর নারী তাঁর ক্যারিয়ার। এখানে বারেবারে বলি, পুরুষতন্ত্র মানে কিন্তু একক কোনো পুরুষের দায়ভারের বিষয়টি না। বরং পুরুষের চেয়েও নারীরা ভয়ংকর রকমভাবে পুরুষতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখে। নারী নিজের জন্য কখনো চর্চা করছে না, নিজেকে প্রশ্ন করছে না, ক্রমশ সে অদৃশ্য হবার আবরণে নিজেকে অবগুণ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে পুরুষতন্ত্রকে এক প্রকার সহায়তা করছে। আজ মা হয়ে সন্তানকে কী শেখাচ্ছি? কৈশোরে আমার মন কী চাইত তা না ভেবে সন্তানকে চলমান ভাবাদর্শে অবগুণ্ঠিত করে দিচ্ছি। রোল মডেল হিসেবে এমন নারীদের সামনে আনছে মিডিয়া বা ফোকাস করছে সমাজ যারা মূলত নারীদের পিছিয়ে দিচ্ছে। আজ ওয়াসফিয়ার কথা কেন বারেবারে আলোচনায় আসবে না? এই মেয়েকে কী বারেবারে এভারেস্টে উঠে লাইম লাইটে আসতে হবে? কেন বিভিন্ন আলোচনায় সে নানাভাবে আসবে না। চোখের সামনে এনলাইটেনমেন্টের উদাহরণগুলো না আসলে উদ্বুদ্ধকরণের কাজটি কী করে আসবে?

বার্তা২৪: এক্ষেত্রে মিডিয়াগুলোর ভূমিকা তো অনেক থাকার কথা। তারা কতটা করছে কাজটি?
শামীম আখতার: এ তো শুরুতেই বললাম। সংবাদপত্রগুলো বা মিডিয়াই নারীদের ভূমিকায়নে সবচেয়ে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তারা মানুষের ইমোশন তৈরি করে এমন বিষয়নির্ভর যা নারীকে স্বাবলম্বী হবার পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। কনজিউমার পলিটিক্সে সবাই ঝাপিয়ে পড়ছে। বস্তুনিষ্ঠতার চাইতে মুনাফার প্রতি ঝুঁকে পড়ার এই সংস্কৃতি ভয়াবহ। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল আগামীর কথা ভেবে। সমন্বিত একটা চিন্তাচেতনা সেখানে ছিল। কিন্তু নারীদের এই লড়াইয়ে সমন্বিত চিন্তাচেতনা নাই। মিনি স্কার্ট পরা মেয়েটাকে আমরা ফোকাস করছি, কিন্তু তাঁর আসল মানসিক অবস্থানকে সমন্বিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এর দায়ভার অবশ্যই মিডিয়ার।

বার্তা২৪: নতুন এই প্রজন্ম বর্তমান অচলাবস্থাকে ঠেকাতে পারবে কি? কী ধরনের কর্ম উদ্যোগ নিতে পারে তারা?
শামীম আখতার: নতুন প্রজন্মকে আগে একনলেজড হতে হবে যে তারা বিপর্যস্ত কাঠামোর মাঝে আছে। প্রাথমিক কাজই হবে তাদের পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণার বিপরীতে অবস্থান নেওয়া। একটা সময় দেখেছি যে নানা দাওয়াতী ডাক এসেছে। এক্ষেত্রে রক্ষণশীলেরা যেমন ছিল, কিছু এনজিও ভূমিকা রেখেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক সময় শাহরিয়ার কবিরের প্রয়াসে ১০১ জন ইন্টেলেকচুয়েল একসাথে হয়ে প্রতিহত করার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু তা আর টিকে থাকেনি পরবর্তীতে। বর্তমানে এই ভয়াবহতা তো আরো অনেক বেশি বেড়েছে। ইরানের কন্ডিশনিং হবার আগেই এদেশের মেয়েদের সুস্পষ্ট কয়েকটি কাজ সংঘবদ্ধ হয়েই করতে হবেই। একা বা গুটিকয়েক করলে হবে না।
পর্দার ভাবাদর্শ পরিবর্তন, শিক্ষানীতিতে পাঠ্যপুস্তকের ভাষা ব্যবহারে সাংস্কৃতিক চর্চা জরুরি—হিন্দু শব্দ, মুসলিম শব্দ এই কালচার ভাঙা, মুক্তচর্চার পথ অবশ্যই খুলতে হবে, তবে মুক্তচর্চার নামে অপচর্চার সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণ করবে মিডিয়া, গণতন্ত্র মানেই কেবল ভোটের অধিকার নয়, নারীর তা বুঝতে শেখা, ক্রিয়েটিভ লিটারেচারে তাদের নিজেদের কথা নিজেদের বারবার বলা, যৌক্তিকভাবে নিজের মতো উপস্থাপন করা, রণকৌশলে কৌশলী হওয়া, মা হিসেবে এমপাওয়ারড করা, স্কুল বাচ্চার সাথে কী আচরণ করছে, কী শেখাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা, ধর্ষণের আগ্রাসনকে চিন্তা দিয়ে, কথা বলার মাধ্যমে, ভালোবাসা দিয়ে বা চড়ের মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা, সমাজ আর পরিবারে নারী কতটা প্রয়োজনীয় সেই উপলব্ধিকরণের চেষ্টা। আর এই সব কাজগুলোর জন্য দরকার সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। ব্যক্তিক লড়াই দিয়ে তা সম্ভব না, সমন্বিত উদ্যোগই পারে এই বিষয়গুলো তুলে ধরতে।

বার্তা২৪: সবশেষে কী বলবেন?
শামীম আখতার: নারীদের প্রতি আহবান থাকল সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে, একযোগে একই সাথে কাজ করবার প্লাটফর্ম গুরুত্বের সাথে গড়ে তুলতে।

   

নারীরাই সমাজের স্থপতি



ফাহমিদা নবী
নারীরাই সমাজের স্থপতি

নারীরাই সমাজের স্থপতি

  • Font increase
  • Font Decrease

নারীর জাগরণে অনেক পিছিয়ে আছি বললে ভুল হবে। যদি বলি, তবে প্রযুক্তির যুগে এসে সে কথা বলার কোন মানে হয় না। নারীও তাঁর অধিকারে এগিয়ে যাচ্ছে সাহস এবং শক্তিশালী মানসিকতার বদৌলতে। কেন পিছিয়ে থাকবে?

১৯০৮ সালের শ্রম আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি। বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া আমাদের নারীদের জাগরণের জন্য যখন পথ দেখালেন তখন থেকে অদ্যাবধি অবস্থানকে শক্ত এবং শক্তিশালী করবার দুর্নিবার পথ চলা কিন্তু থেমে নেই। তবুও আমরা আজো পিছিয়ে কেন? যে জাতি নারীদের সম্মান করতে পারে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

নারীরাই সমাজের প্রকৃত স্থপতি। নারীকে চিন্তা চেতনার শর্তে জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। আমাদের দেশে আত্মসচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই নারীদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; সবসময় এবং বারংবার। নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। এ শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজসেবার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে। আর তা করতে হলে সমাজ সম্পর্কে তাঁর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন।

নারী দিবস মানেই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া সৃষ্টিতে-কৃষ্টিতে সমতায় সেরা নারী যেন কোনভাবেই ভেঙে না পড়ে।

আমার তো মনে হয় নারী ফিনিক্স পাখি! সে যেভাবে বারবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাড়ায়। নিজের কিশোরবেলা থেকে শুরু করে সংসার, বিয়ে, সন্তান থেকে পরিবার পুরো সমাজ সংসারে তার চলাচল ভীষণ ইতিবাচক। তাঁর তো সময় নেই নেতিবাচকতায় চোখ রাখবার! থাকুক যতই বাধা তার ধৈর্যের কমতি নাই। হাসিমুখে সব কিছুতে তাঁর অংশগ্রহণ এক বিস্ময়।

সত্যি বলতে কী নারী মানেই “মা”। তাই নারী সব কিছুরই উদাহরণ। মাকে কখনো কঠিন হতে হয়, কখনো কোমল, কখনো বা সংসার কৌশলী, বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী।

নারীদের বলতে চাই জীবনে সংগ্রাম থাকবেই কিন্তু পিছিয়ে পড়া যাবে না। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কথা বলতে, না বলতে, সাহসে পথ চলতে শিখতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে।

আমাদের দেশে নারীদের অংশগ্রহণ এখন সর্বত্র। শুধু সাহস আর মানবিকতা পথটাকে আরেকটু চিনে চলতে হবে। কারণ অমানবিকতা আনাচেকানাচে চিরকালই দেখি।

আরেকটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতেই হবে যা মানবিক আচরণ। কিছু সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যদি সবাই এক সমতায় তবে এখনো পিতার সম্পত্তি বণ্টনে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কেন? বিশাল সমস্যা এখানেই রয়ে গ্যাছে। এই সমঅধিকারের প্রতিকার যতদিন না হবে বৈষম্যের ফাঁকটা রয়েই যাবে। এবং মেয়েদের উপর অত্যাচার কখনোই কমবে না।

পৃথিবীর কোন দেশে এই বৈষম্যতা নেই বলেই নারীরা অনেক সাহসে এবং সমতার অংশগ্রহণের নিশ্চিত থাকতে পারে।

আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। সমবণ্টন নিশ্চিত হোক। নারীর এগিয়ে যাওয়া আর রুদ্ধ হবে না।

আমি সব সময় মুগ্ধ হই আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। কী প্রাণবন্ত হয়ে নারীদের অগ্রগতিতে তিনি কতটা ভূমিকা রাখছেন! প্রতি মুহূর্তে তিনি চান মেয়েরা এগিয়ে আসুক সাহসী হোক। তিনি এ ব্যাপারেও কাজ করছেন শুনেছি। আশা করি অবশ্যই পিতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমঅধিকার হবে। কাজেকর্মে, শিক্ষায় সমাজ সংসার জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখুক সমতায়। সেজন্য সুযোগ সুবিধায় নারীদের সম্মানকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

সকল নারীদের জন্য শুভ কামনা; আত্মবিশ্বাসে পথ চলা সফল হোক।

ফাহমিদা নবী: সংগীত শিল্পী

;

‘নারীবাদী’ শব্দের উৎপত্তি এবং এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক



নারীশক্তি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

‘নারীবাদী কিনা?’ প্রশ্নে পুরুষ কিংবা নারী- অনেককেই অপ্রস্তুত হতে দেখা যায়। কারো উত্তরে থাকে দ্বিধা। হাস্যকর হলেও সত্য, কেউ কেউ উত্তর দেয়,‘আমি নারীবাদী নই, তবে আমি সমতায় বিশ্বাসী।’ সমাজে অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘নারীবাদী’ শব্দটার অর্থ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। বর্তমান সমাজে মানুষ নারীদের সমান অধিকারের দাবীর কথা শুনে হাসে। কিছু মানুষের মতে, নারীরা বরং বেশিই পাচ্ছে। বর্তমান সমাজচিত্র দেখে অনেকে মনে করেন, নারীবাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বরফখণ্ড ভাসতে দেখে, পানির নিচে তার আকার বোঝা যায় না। নারীবাদী  শব্দের সূচনা যখন হয়েছিল, তখন সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন ছিল।

নারীবাদ মানেই পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের মানসিকতা। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে-মানুষ হিসেবে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার প্রাপ্য, সেই নারীবাদী। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ের অনেক নারীবাদীদের মধ্যে পুরুষ বিদ্বেষী ভাব ফুটে ওটে। এই আচরণ কোনোভাবেই নারীবাদী হওয়ার প্রমাণ নয়!    

উনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবার ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিক চার্লস ফুরিয়ে ১৮৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। এরপর ১৮৭২ সালে  ফ্রান্স এবং ১৮৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে ফেমিনিজম এবং ফেমিনিস্ট শব্দ দু’টির ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা ভোটের অধিকার আদায়ে এবং নারী-পুরুষ সমান ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু করে। এই  আন্দোলন হয়েছিল কারণ, কর্মক্ষেত্রে সম্মান এবং আয়ের দিকে নারীরা ছিল পুরুষদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।  সমান অধিকার ছিল না বলেই, তা ছিনিয়ে নিতে বার বার আন্দোলনে নামতে হয়েছে নারীদের ।

স্রষ্টা পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ-কে পাঠিয়েছেন। অথচ বিবেক-বুদ্ধিবান মানব সমাজেই একপক্ষকে অপর পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। ব্যাপারটা কেমন বেখাপ্পা নয় কি?

একটা সময় নারীদের নিজ ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারও ছিল না। শিক্ষাগ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় স্বামীর মৃত্যু হলে, জীবিত নারীদের তাদের সাথে পুড়িয়ে মারা হতো। নারীর ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের সকলে মিলে তাকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করতো। সম্রাট আকবর তার রাজত্বকালে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চালু হয়ে বিধবা বিবাহ আইন। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ছেলেকে এক বিধবা কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে।

তৎৎকালীন এই অসমতার চিত্র, ইউরোপের অনেক লেখকের কলমে ফুটে উঠেছিল প্রাচ্যের বর্বরতা হিসেবে। তারা নারীদের প্রতি আচরণের কারণে, প্রাচ্যকে অনুন্নত বিবেচনা করতো। অথচ পশ্চিমের আচরণ যে নারীদের প্রতি খুব সম্মানজনক ছিল, নাও কিন্তু নয়!

ইংল্যান্ডের বাজারে একসময় বউ বিক্রি হতো। নারীদের লাল লিপস্টিক দিয়ে সাজ ছিল নিষিদ্ধ। কেবল দেহ ব্যবসায়ী নারীরাই লাল লিপস্টিকের ব্যবহার স্বাধীনভাবে করতে পারতেন। ১৮০০ সালের দিকে ঝগড়া করার অপরাধে এক ইউরোপীয়ান তার স্ত্রীর মুখে বেড়ি পড়িয়ে রাস্তায় হাঁটিয়েছিলেন। এমনকি নারী আন্দোলন এবং জাগরণের শুরুই হয়েছিল খোদ পশ্চিমের দেশগুলোতেই।  

সব মানুষেই নিজের জীবন স্বাধীনভাবে কাটাতে চায়। কেউই  পরাধীন থাকতে চায়না বিধায়, কালের বিবর্তনে বিশ্বজুড়ে বার বার বিদ্রোহ এবং আন্দোলন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েও লড়ে গেছে স্বাধীনতার জন্য। বর্তমান সমাজ নারীর প্রতি যথেষ্ট নমনীয় হলেও, শুরু থেকে এমনটা ছিল না। সেই কারণেই নারীরা আন্দোলন করে অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।    

;

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;