সাক্ষাৎকারে নাসিমা খান—

“নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দেশে নারীর সংখ্যা খুবই কম”



ক্যামেলিয়া আলম, বিভাগীয় সম্পাদক, নারীশক্তি
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ছয় বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট হওয়াতে খুব মনোযোগ পাননি পরিবারে। তবে লেখাপড়া করতে হবে এটা জানতেন। বাড়িতে পত্রিকা পড়ার একটা চল ছিল। আর সাংবাদিকদের আসা-যাওয়াও ছিল বেশ।

উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর স্নাতক করার সময় থেকেই আগ্রহ জন্মাতে থাকে সাংবাদিকতার প্রতি। উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিস-এ স্নাতকোত্তর করার সময় নারী সাংবাদিকদের অবস্থান নিয়ে কাজ করে এই পেশায় আসার আগ্রহ। এরপর কাজের মাঝে ফিল্ম এন্ড মিডিয়ায় দ্বিতীয় মাস্টার্স করেন সাংবাদিকতার পাশাপাশি। সে সময় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘বক্স ক্যামেরা’ নিয়ে তৈরি করেন একটি ডকুমেন্টারি। পরে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যোগযোগ হয় হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাথে। তাদের নিয়ে তৈরি করেন প্রামান্য চিত্র ‘দূরের মানুষ’।

সাংবাদিকতা বিষয়ে নানা কর্মশালা ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের আয়োজনে নারী সাংবাদিকদের লিডারশিপ ট্রেনিংয়ে অংশ নেন ওকলাহোমাতে। এছাড়া দেশেও কয়েকটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল উইমেন মিডিয়া ফোরাম (আইডাব্লিউএমএফ) আয়োজিত একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০১১ সালে। সেখানেও আলোচনা হয় বিভিন্ন দেশে নারী সংবাদকর্মীদের অবস্থান, কাজের প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি বিষয়ে। যা আমাদের সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। টেলিভিশন সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ থেকে কিছুদিন কাজ করেছেন এটিএন নিউজ চ্যানেলে। আবার ফিরেছেন প্রিন্ট মিডিয়ায়।

মূলধারার সাংবাদিকতায় নারীরা আরো বেশি করে যুক্ত হবে এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আরো বেশি নারী উন্নীত হবে এই আশা ছড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন বিরামহীন। দৈনিক আমাদের নতুন সময়-এর প্রধান সম্পাদক এবং দৈনিক আমাদের অর্থনীতি-র সম্পাদক নাসিমা খানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, বিভাগীয় সম্পাদক-নারীশক্তি, ক্যামেলিয়া আলম


বার্তা২৪: নারীর শক্তি মূলত ক্ষমতায়নের ওপর নির্ভরশীল। আপনি আজ সম্পাদক হিসেবে সেই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছেন। আমার প্রথম প্রশ্ন সাংবাদিকতাকে কেন আপনি বেছে নিলেন?
নাসিমা খান: আমাদের বাড়িতে সবসময় সাংবাদিকদের আসা-যওয়া ছিল। আবার আমি যখন স্নাতক পড়ছি তখন নাঈমুল ইসলাম খান বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম এন্ড কমিউনিকেশন (বিসিডিজেসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। সেই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল সাংবাদিকদের বিভিন্ন কর্মশালা, ট্রেনিং পরিচালনা, সাংবাদিকতা বিষয়ে গবেষণা ইত্যাদি। সেখানে ছাত্রাবস্থায় আমি খণ্ডকালীন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতাম। এসব মিলিয়েই আমার আগ্রহটা তৈরি। বিসিডিজেসি থেকে সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বই বের হতো। সেগুলো পড়তাম। আমি কিছু কিছু প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায়ও অংশগ্রহণ করেছিলাম। এছাড়া আমি মাস্টার্স করেছি উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিষয়ে। আমার মাস্টার্সের ডিসারটেশনের বিষয় ছিল সংবাদপত্রে নারীর অবস্থান। ছয়টা বড় পত্রিকা নিয়ে আমি কাজটি করি, কাজটি করতে গিয়েই দেখলাম যে সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ প্রায় না থাকার মতোই। কোনো প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুইজন নারী কাজ করত। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো নারী সাংবাদিক ছিলও না। আবার যারা ছিল তারা সংবাদ মাধ্যমে কাজ করলেও মূলধারার সাংবাকিতা করত না, আর শীর্ষ পদে তখন একজন নারীও ছিল না। এই সব মিলেই আমার আগ্রহ বাড়তে লাগল।
এরপরে মাস্টার্স করার পরপরই আমি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালং সিপিডিতে যোগ দেই। ডায়ালগ এন্ড কমিউনিকেশন সেকশন ওখানেও সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ থাকত। সেখানে দেড় বছর কাজ করার পর বিশেষ পারিপারিক প্রয়োজনে কাজটি ছাড়তে হয়। এরপর বিসিডিজেসি; ও পাশাপাশি দৈনিক আমাদের সময়-এর কাজেও হাত দিলাম। তখন থেকেই পুরোপুরি সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি।

বার্তা২৪: যে কোনো পাবলিক সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে নারীর জন্য স্বতন্ত্র কিছু প্রতিবন্ধকতা কাজ করে, বিষয়টি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী রকম?
নাসিমা খান: যেহেতু আমি মিডিয়ায় কাজ করি তাই বলি, সাংবাদিক হিসেবে একজন নারী যখন কাজ করতে যায়, তার প্রথম বাধাই থাকে তার পরিবার। আমি সেই বাধা পাইনি, আমি ভাগ্যবান। আমি যখন সাংবাদিকতা করতে যাব বলে মনস্থির করেছি তখন প্রশ্ন আসে নাইট শিফট করার বা বাইরে কাজ করা। আমার চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডেই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল যে এই কাজে ছেলে মেয়ের পার্থক্য যেহেতু থাকে না সেক্ষেত্রে আমি নাইট শিফট করতে পারব কিনা? চাকরির ধারা অনুযায়ী নাইট শিফটের কাজ করব। তখন আমার ছোট মেয়ে ছিল সাড়ে আট মাস বয়সের। ব্রেস্ট ফিড করাতে হতো, দেখা যেত রাত সাড়ে ১১টায় তাকে খাইয়ে পরদিন সাতটা পর্যন্ত অফিস করে ফিরে এসে তাকে আবার খাওয়াতে হতো। সেই সময় নাঈমুল ইসলাম খান আমায় সহযোগিতা করেছে, ইন্সপায়ারও করেছে এই বলে যে, একটা নাইট শিফটে কী ধরনের কাজ আছে তা না করলে তো শেখা সম্পূর্ণ হবে না! সেখানে সিইও ছিলেন মঞ্জুরুল ইসলাম এবং হেড অব নিউজে ছিলেন মুন্নী সাহা, তাদের সহযোগতিা সেখানে কাজ করা সব নারীই পেয়েছি। বহু কর্মস্থলে সেই সহযোগতিাটুকু থাকে না। একে আমি মনে করি মেয়ের কাজে অবস্থান তৈরিতে একটি বাধা। কারণ এই সহযোগিতা চাইতে গিয়ে যখন বললাম, পারব না বা নাইট শিফট না করে হয় কিনা। তখন একজন মেয়েকে তার সহকর্মী পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে দেয়। অথচ সেখানে মেয়েটির কোনো হাত নেই। কিন্তু তার এই না পারার জায়গাটায় যখন একজন পুরুষ এগিয়ে আসে, তখন নারীর অবস্থান আর সেখানে হয় না। ফলে অবস্থানের দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে যায়।

বার্তা২৪: আপনি যখন একজন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ, এডিটর, হিসেবে আপনার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, তখন আপনার অধীনে নারীদের আপনি কতটা সহযোগিতা করতে পারেন? কী ধরনের সহযোগিতা?
নাসিমা খান: আমার প্রতিষ্ঠানে আমার যেই সহযোগিতা সেটা হচ্ছে আমার নারী কর্মীটি তার যে কোনো সমস্যা নিয়ে আমার কাছে যে কোনো সময় আসতে পারে, চাইতে পারে। আমি না থাকলে ফোন করতে পারে বা আমাদের প্রধান সম্পাদকের কাছে যেতে পারে। অর্থাৎ কোনো প্রটোকল আমাদের অফিসে নেই, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য।
এছাড়া আমার অফিসে প্রতি মাসে নারীদের নিয়ে একটি চা খাওয়ার সেশন হয়, যেখানে নারী কর্মীরা একসাথে বসে অফিসের বা কারো ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে বলে। আবার কী করলে নারীদের জন্য অফিস আরেকটু আরামদায়ক বা স্বচ্ছন্দ হবে, সেসব বিষয়েও আলোচনা করি।
তবে এসময় যেই অভিযোগটা বেশি পাই তা হচ্ছে কিছু পুরুষ কলিগের অসহযোগিতা। আবার কখনো হয়তো ডেস্কে বসে পুরুষ কর্মীটি এমন মন্তব্য করে যেটি একজন নারীর জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। আমাদের প্রধান সম্পাদক আমাদের মিটিংয়ে এসব নিয়ে আলোচনা করেন এবং আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করি।

বার্তা২৪: ডিসিসান মেইকার হিসেবে নারীদের অবস্থান কতটা এই সমাজে?
নাসিমা খান: নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দেশে নারীর সংখ্যা খুবই কম। নেই বললেই চলে। নারীরা শিক্ষায় কিছুটা এগিয়ে, কিন্তু কয়টা নারী আজ শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে তার অবস্থান গড়তে পেরেছে? আজ প্রায় ৬৪টা জেলার মধ্যে মাত্র ৮জন নারী, যাদের একজন আবার কিছুদিন আগে ওএসডি হলো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেছেন, নারী এত বেড়েছে যে কিছুদিন পরে আমাদের পুরুষদের কোটা দিতে হবে। কোটায় আসা যে নারী, তারা অধিকাংশই তো অধস্তন। কয়টা নারী শীর্ষপদে আছেন? প্রায় দুশোটি ইংরেজি, বাংলা ও অনলাইন পত্রিকার মাঝে নারী সম্পাদক রয়েছেন মাত্র ছয়জন। সিগনিফিকেন্ট রোল হিসেবে যে নারী আসছে, তাদের কিন্তু বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবস্থান গড়তে হয়েছে। প্রেসক্লাবে প্রথম সেক্রেটারি হিসেবে প্রথম নারী ফরিদা ইয়াসমীন। উনি প্রায়ই দুঃখ করে বলেন, কতটা শ্রম দিয়ে তাকে অবস্থান ধরে রাখতে হচ্ছে। আবার এই জায়গায় আসতেও তাকে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়েছে। বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে একজন নারীকে আসতে হয়, যেখানে একজন পুরুষকে হয়তো এতটা শ্রম দিতে হয় না।

বার্তা২৪: এবার ব্যক্তিগত এক বিষয় নিয়ে কথা বলি, আমাদের সোসাইটিতে সন্তানের নামের সাথে বাবার নামের পদবিটি যুক্ত হয়, একে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
নাসিমা খান: একে আমি ট্রাডিশন হিসেবে দেখি। সোশ্যাল কালচারের অংশ হিসেবে। কিন্তু আমি সবচেয়ে অপছন্দ করি যখন বিয়ের পরে মেয়েরা স্বামীর পদবি গ্রহণ করে।

বার্তা২৪: কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গী হিসেবে নাঈমুল ইসলাম খান কেমন?
নাসিমা খান: প্রথম কথা, জীবন সঙ্গী হিসেবে সাপোর্টটা না দিলে আমার এই জায়গায় আসবার কথা ছিল না। আমি একটা ঘটনা জানাই, আমি যখন মাস্টার্স পরীক্ষা চলার সময় আমার মেয়ের ডেঙ্গু হয়, ওর বয়স সাড়ে সাত মাস। তখন আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই যে পরীক্ষা আর দেব না। তখন নাঈম বলল, নাহ, পাস ফেল যা-ই করো, পরীক্ষা দিতে হবে তোমার। ফলে মাস্টার্স পাস করি। এভাবে জীবনে নানা ধাপে তাঁর সহযোগিতা পেয়েছি। আর সাংবাদিকতাতে তো তার হাত ধরেই আসা। আর আমি বলতে চাই, এই সাপোর্ট আসলে একজন নারী বা পুরুষের বহু সময়ে লাগে। পরিবার, ভাইবোন, হাজবেন্ড, কলিগ সবার কাছ থেকেই প্রয়োজন হয়। এই সাপোর্ট ছাড়া আসলে এগিয়ে যাওয়া যায় না।

বার্তা২৪: কাজের ক্ষেত্রে এমন কোনো দুঃখজনক বা বিরক্তির কোনো ঘটনা কি আছে যা আপনি এখনো মনে করলে অস্বস্তিবোধ করেন?
নাসিমা খান: সিপিডি-তে ঘটা একটা ঘটনা আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। সেখানে সংলাপগুলো হতো প্রেসক্লাবে বা ... আমরা যখন সেখানে যেতাম আমাদের পুরুষ সহকারী সামনে বসে আমাদের পেছনে মালামালের সাথে বসিয়েছে। তখন প্রথম কাজে যোগ দিয়েছি তাই কিছু বলতে পারিনি। পরে আমি মিটিংয়ে প্রসঙ্গটি বললে আমাদের প্রধান নির্বাহী ড. দেবপ্রিয় আমাদের জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনার পর আমার সাথে ওই সহকারী বেশ কিছুদিন কথা বলেনি। এমন আরো অনেক স্মৃতি আছে যা কাজ কবতে গিয়ে পেয়েছি। সেখানে প্রতিবাদ করে হয়তো আমার জায়গাটি আমার নিতে হয়েছে।

বার্তা২৪: সাংবাদিকতার জীবনে কোনো সুখস্মৃতি?
নাসিমা খান: আমি যেদিন ‘দৈনিক অর্থনীতি’র অফিসিয়ালি সম্পাদক হিসেবে যোগদান করি। আমার মনে আছে, আমার বাসায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান চলছিল। এরমাঝে হঠাৎ করেই নিউজটি নাঈমুল ইসলাম খান যখন সবাইকে বলে জানিয়ে আমাকে সারপ্রাইজড করেছিল। আর প্রত্যেকে আমাকে অভিনন্দন জানায়, ভীষণ ভালো লাগার এক স্মৃতি আমার জন্য।

বার্তা২৪: ক্ষমতায়নের শীর্ষে উঠে আসতে পেরেছেন সিড়ির বহু ধাপ পেরিয়ে, প্রথম ধাপে আজ যে মেয়েটি উঠতে যাচ্ছে তাদের জন্য কিছু বলুন।
নাসিমা খান: আমি তো বলব, প্রথমেই শিক্ষার কথা। পড়াশোনার ব্যপারে কখনো কম্প্রোপাইজ না করা। বাধা আসবেই জীবনে এটা সামলে সামনে চলতে হবে। আমার বিয়ে হবে, বেবি হবে, পরিবার, সমাজ, কর্মস্থলে নানা বাধা আসবে, তাকে স্বাভাবিক মনে করে এগিয়ে যাবার ব্যাপারে ডিটারমাইন্ড হতে হবে। আমার কলিগেরা কেউ আমাকে সাপোর্ট করবে, কেউ করবে না, এই বাধাগুলোকে পজিটিভলি সামাল দিয়ে কাজে মনোযোগী হওয়া। বাধাকে শক্তিতে রূপান্তর করা। কনসেনট্রেশন থাকতে হবে আমি করতে পারি এবং আরো কিভাবে নিজের যোগ্যতা দক্ষতা বাড়ানো যায়। নিজের কাজে ফোকাস করা। কে আমাকে করতে দিচ্ছে না, কে কী করছে তা নিয়ে সময় অপচয় না করে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষে অবিচল থাকা। তাহলেই কোনো মেয়ে আর পিছিয়ে যাবে না। দেরিতে হলেও মেয়েদের কাজের জন্য সমাজ তৈরি হচ্ছে। এখন নারীদের ছাড়া যে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব না সেটা সবাই বুঝতে পারছে।
একটা সময় ছিল প্রেসক্লাবসহ অনেক কর্মক্ষেত্রেই নারীদের জন্য আলাদা টয়লেট ছিল না, এখন প্রায় সব অফিসেই মেয়েদের আলাদা টয়লেট আছে। আবার এখন দাবি উঠছে অফিসে ডে কেয়ার করার। এই ডে কেয়ার তো মেয়েদের জন্যই শুধু না এটা সকল কর্মজীবী নারী ও পুরুষের প্রয়োজন। এখন তা করার বিষয়ে চিন্তা করছে সরকার। কাজ করতে করতে পথ তৈরি হয়েই যায়। তাই কাজকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবার মানসিকতা প্রতিটি মেয়ের যেন থাকে। কাজের মাধ্যমেই আসবে স্বাধীনতা আসবে মর্যাদা।

   

নারীরাই সমাজের স্থপতি



ফাহমিদা নবী
নারীরাই সমাজের স্থপতি

নারীরাই সমাজের স্থপতি

  • Font increase
  • Font Decrease

নারীর জাগরণে অনেক পিছিয়ে আছি বললে ভুল হবে। যদি বলি, তবে প্রযুক্তির যুগে এসে সে কথা বলার কোন মানে হয় না। নারীও তাঁর অধিকারে এগিয়ে যাচ্ছে সাহস এবং শক্তিশালী মানসিকতার বদৌলতে। কেন পিছিয়ে থাকবে?

১৯০৮ সালের শ্রম আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি। বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া আমাদের নারীদের জাগরণের জন্য যখন পথ দেখালেন তখন থেকে অদ্যাবধি অবস্থানকে শক্ত এবং শক্তিশালী করবার দুর্নিবার পথ চলা কিন্তু থেমে নেই। তবুও আমরা আজো পিছিয়ে কেন? যে জাতি নারীদের সম্মান করতে পারে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

নারীরাই সমাজের প্রকৃত স্থপতি। নারীকে চিন্তা চেতনার শর্তে জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। আমাদের দেশে আত্মসচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই নারীদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; সবসময় এবং বারংবার। নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। এ শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজসেবার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে। আর তা করতে হলে সমাজ সম্পর্কে তাঁর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন।

নারী দিবস মানেই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া সৃষ্টিতে-কৃষ্টিতে সমতায় সেরা নারী যেন কোনভাবেই ভেঙে না পড়ে।

আমার তো মনে হয় নারী ফিনিক্স পাখি! সে যেভাবে বারবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাড়ায়। নিজের কিশোরবেলা থেকে শুরু করে সংসার, বিয়ে, সন্তান থেকে পরিবার পুরো সমাজ সংসারে তার চলাচল ভীষণ ইতিবাচক। তাঁর তো সময় নেই নেতিবাচকতায় চোখ রাখবার! থাকুক যতই বাধা তার ধৈর্যের কমতি নাই। হাসিমুখে সব কিছুতে তাঁর অংশগ্রহণ এক বিস্ময়।

সত্যি বলতে কী নারী মানেই “মা”। তাই নারী সব কিছুরই উদাহরণ। মাকে কখনো কঠিন হতে হয়, কখনো কোমল, কখনো বা সংসার কৌশলী, বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী।

নারীদের বলতে চাই জীবনে সংগ্রাম থাকবেই কিন্তু পিছিয়ে পড়া যাবে না। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কথা বলতে, না বলতে, সাহসে পথ চলতে শিখতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে।

আমাদের দেশে নারীদের অংশগ্রহণ এখন সর্বত্র। শুধু সাহস আর মানবিকতা পথটাকে আরেকটু চিনে চলতে হবে। কারণ অমানবিকতা আনাচেকানাচে চিরকালই দেখি।

আরেকটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতেই হবে যা মানবিক আচরণ। কিছু সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যদি সবাই এক সমতায় তবে এখনো পিতার সম্পত্তি বণ্টনে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কেন? বিশাল সমস্যা এখানেই রয়ে গ্যাছে। এই সমঅধিকারের প্রতিকার যতদিন না হবে বৈষম্যের ফাঁকটা রয়েই যাবে। এবং মেয়েদের উপর অত্যাচার কখনোই কমবে না।

পৃথিবীর কোন দেশে এই বৈষম্যতা নেই বলেই নারীরা অনেক সাহসে এবং সমতার অংশগ্রহণের নিশ্চিত থাকতে পারে।

আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। সমবণ্টন নিশ্চিত হোক। নারীর এগিয়ে যাওয়া আর রুদ্ধ হবে না।

আমি সব সময় মুগ্ধ হই আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। কী প্রাণবন্ত হয়ে নারীদের অগ্রগতিতে তিনি কতটা ভূমিকা রাখছেন! প্রতি মুহূর্তে তিনি চান মেয়েরা এগিয়ে আসুক সাহসী হোক। তিনি এ ব্যাপারেও কাজ করছেন শুনেছি। আশা করি অবশ্যই পিতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমঅধিকার হবে। কাজেকর্মে, শিক্ষায় সমাজ সংসার জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখুক সমতায়। সেজন্য সুযোগ সুবিধায় নারীদের সম্মানকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

সকল নারীদের জন্য শুভ কামনা; আত্মবিশ্বাসে পথ চলা সফল হোক।

ফাহমিদা নবী: সংগীত শিল্পী

;

‘নারীবাদী’ শব্দের উৎপত্তি এবং এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক



নারীশক্তি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

‘নারীবাদী কিনা?’ প্রশ্নে পুরুষ কিংবা নারী- অনেককেই অপ্রস্তুত হতে দেখা যায়। কারো উত্তরে থাকে দ্বিধা। হাস্যকর হলেও সত্য, কেউ কেউ উত্তর দেয়,‘আমি নারীবাদী নই, তবে আমি সমতায় বিশ্বাসী।’ সমাজে অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘নারীবাদী’ শব্দটার অর্থ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। বর্তমান সমাজে মানুষ নারীদের সমান অধিকারের দাবীর কথা শুনে হাসে। কিছু মানুষের মতে, নারীরা বরং বেশিই পাচ্ছে। বর্তমান সমাজচিত্র দেখে অনেকে মনে করেন, নারীবাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বরফখণ্ড ভাসতে দেখে, পানির নিচে তার আকার বোঝা যায় না। নারীবাদী  শব্দের সূচনা যখন হয়েছিল, তখন সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন ছিল।

নারীবাদ মানেই পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের মানসিকতা। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে-মানুষ হিসেবে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার প্রাপ্য, সেই নারীবাদী। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ের অনেক নারীবাদীদের মধ্যে পুরুষ বিদ্বেষী ভাব ফুটে ওটে। এই আচরণ কোনোভাবেই নারীবাদী হওয়ার প্রমাণ নয়!    

উনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবার ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিক চার্লস ফুরিয়ে ১৮৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। এরপর ১৮৭২ সালে  ফ্রান্স এবং ১৮৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে ফেমিনিজম এবং ফেমিনিস্ট শব্দ দু’টির ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা ভোটের অধিকার আদায়ে এবং নারী-পুরুষ সমান ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু করে। এই  আন্দোলন হয়েছিল কারণ, কর্মক্ষেত্রে সম্মান এবং আয়ের দিকে নারীরা ছিল পুরুষদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।  সমান অধিকার ছিল না বলেই, তা ছিনিয়ে নিতে বার বার আন্দোলনে নামতে হয়েছে নারীদের ।

স্রষ্টা পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ-কে পাঠিয়েছেন। অথচ বিবেক-বুদ্ধিবান মানব সমাজেই একপক্ষকে অপর পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। ব্যাপারটা কেমন বেখাপ্পা নয় কি?

একটা সময় নারীদের নিজ ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারও ছিল না। শিক্ষাগ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় স্বামীর মৃত্যু হলে, জীবিত নারীদের তাদের সাথে পুড়িয়ে মারা হতো। নারীর ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের সকলে মিলে তাকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করতো। সম্রাট আকবর তার রাজত্বকালে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চালু হয়ে বিধবা বিবাহ আইন। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ছেলেকে এক বিধবা কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে।

তৎৎকালীন এই অসমতার চিত্র, ইউরোপের অনেক লেখকের কলমে ফুটে উঠেছিল প্রাচ্যের বর্বরতা হিসেবে। তারা নারীদের প্রতি আচরণের কারণে, প্রাচ্যকে অনুন্নত বিবেচনা করতো। অথচ পশ্চিমের আচরণ যে নারীদের প্রতি খুব সম্মানজনক ছিল, নাও কিন্তু নয়!

ইংল্যান্ডের বাজারে একসময় বউ বিক্রি হতো। নারীদের লাল লিপস্টিক দিয়ে সাজ ছিল নিষিদ্ধ। কেবল দেহ ব্যবসায়ী নারীরাই লাল লিপস্টিকের ব্যবহার স্বাধীনভাবে করতে পারতেন। ১৮০০ সালের দিকে ঝগড়া করার অপরাধে এক ইউরোপীয়ান তার স্ত্রীর মুখে বেড়ি পড়িয়ে রাস্তায় হাঁটিয়েছিলেন। এমনকি নারী আন্দোলন এবং জাগরণের শুরুই হয়েছিল খোদ পশ্চিমের দেশগুলোতেই।  

সব মানুষেই নিজের জীবন স্বাধীনভাবে কাটাতে চায়। কেউই  পরাধীন থাকতে চায়না বিধায়, কালের বিবর্তনে বিশ্বজুড়ে বার বার বিদ্রোহ এবং আন্দোলন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েও লড়ে গেছে স্বাধীনতার জন্য। বর্তমান সমাজ নারীর প্রতি যথেষ্ট নমনীয় হলেও, শুরু থেকে এমনটা ছিল না। সেই কারণেই নারীরা আন্দোলন করে অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।    

;

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;