পরিবেশকন্যা কাশ্মীরের জান্নাত 'ভারতের গ্রেটা থানবার্গ'



ফয়সাল আহমেদ, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম
পরিবেশকন্যা কাশ্মীরের জান্নাত 'ভারতের গ্রেটা থানবার্গ', ছবি: সংগৃহীত

পরিবেশকন্যা কাশ্মীরের জান্নাত 'ভারতের গ্রেটা থানবার্গ', ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সুইডেনের কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ পৃথিবীর কাছে নিজেকে পরিচিত করেছেন পরিবেশের সুরক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ নামে পরিচিত তার প্রচেষ্টার কথা এখন বিশ্বের পরিবেশ সচেতন মানুষের মুখে মুখে। চলতি বছরের শুরুতে সুইডেনের দুই সংসদ সদস্য গ্রেটা থানবার্গের পরিবেশবাদী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য তার নাম প্রস্তাব করেছেন। ২০১৯ সালেও গ্রেটার নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।

সুইডেনের কিশোরী গ্রেটার মতই ভারতের কাশ্মীরের জান্নাত নামের এক পরিবেশবান্ধব কিশোরী তার কাজের মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছেন। তার বয়সে গ্রেটার চাইতেও কম। তাদের কাজের ধরণটা আলাদা। উদ্দেশ্যে একই। দুইজনেই পরিবেশের সুরক্ষায় কাজ করছেন।

জান্নাতের বাড়ি কাশ্মীরের শ্রীনগরে। বয়স মাত্র সাত বছর। গত দুইবছর ধরে নিয়মিতভাবে শ্রীনগরের প্রসিদ্ধ ‘ডাল’লেককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন এই কিশোরী। তার কাজের স্বীকৃতিতে পরিবেশকন্যা কাশ্মীরবাসী জান্নাতের নাম এখন দাক্ষিণাত্যের হায়দারাবাদের পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে। আর গণমাধ্যম তাকে 'ভারতের গ্রেটা থুনবার্গ' বলে অবিহিত করছে।

পরিবেশকন্যা কাশ্মীরবাসী জান্নাতের নাম এখন দাক্ষিণাত্যের হায়দারাবাদের পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে

ভূস্বর্গ কাশ্মীরের শ্রীনগরের নয়নাভিরাম ডাল লেক ছবির মতো সুন্দর একটি জলাভূমি। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই লেকের বাণিজ্যিক ও নৈসর্গিক  গুরুত্ব অপরিসীম। কাশ্মীর ভ্রমণে ডাল লেকের নীলাভ স্নিগ্ধ পানিতে 'শিকারা' নামক দেশী বোটে জলভ্রমণ হবে না, তা অকল্পনীয়। কাশ্মীর ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণই হলো ডাল লেকে 'শিকারা' বা হাউসবোটে ঘুরে বেড়ানো, রাত্রিযাপন এবং জলে বিম্বিত প্রকৃতি ও নিসর্গের অবলোকন।

দিনে ও রাতের পালাবদলে ডাল লেকের পানিতে ভাসমান বাড়ি-সদৃশ্য দেশী হাউসবোট 'শিকারা' থেকে  অনিন্দ্য কাশ্মীরকে দেখা যায় অনেক মোহনীয় ও বহুমাত্রিক দ্যোতনায়। ডাল লেকে সাতশোর বেশী হাউসবোট আছে। এসবের ভিতরে অত্যাধুনিক হোটেলের মত থাকা-খাওয়ার নানা ধরণের সুবিধাজনক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। প্রতিটি বোটই সুসজ্জিত, আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন। 

মায়ের দরদী হাতে ছোট্ট কিশোরী জান্নাত ডাল লেককে পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত

কিন্তু এসব বোট ব্যবহারকারীদের নানা রকমের  বর্জ্য ও উচ্ছিষ্ট  ডাল লেককে নিত্যই দুষিত ও আবর্জনাময় করছে। জান্নাত সেইসব ময়লা সাফ করে ডাল লেককে নির্মল করতে সচেষ্ট। মায়ের দরদী হাতে ছোট্ট কিশোরী জান্নাত ডাল লেককে পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত।  

জান্নাতকে অনুপ্রেরণা দানকারী  বাবা তারিক আহমেদ পাটলু মিডিয়াকে বলেছেন যে, হায়দারাবাদে বসবাসকারী তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ফোন কল পেয়ে তিনি জানতে পারেন যে, তার মেয়ের নাম ও পরিবেশবাদী কর্মকাণ্ড সেখানকার স্কুল পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তখন তিনি তার বন্ধুকে কপিটি পাঠাতে বলেন। তিনি আরো বলেছেন যে, সংবাদটি শোনা তার জন্য একটি গর্বের বিষয় ছিল।

খুদে কাশ্মীরকন্যা জান্নাত জানিয়েছেন, 'লেক পরিস্কার করার জন্য আমি আমার বাবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাই। আমি যে স্বীকৃতি পেয়েছি তা শুধু আমার বাবার কারণে।'

শ্রীনগরের লিন্টন হল স্কুলের ছাত্রী জান্নাত দুইবছর  আগে ২০১৮ সালে প্রথম আলোচনায় আসেন। তখন তার বাবা তারিক আহমেদ পাটলু সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। তাতে দেখা যায়, শ্রীনগরের দূষিত ডাল লেককে দেশী নৌকায় চেপে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ করার কাজ করছেন কিশোরী জান্নাত।

মর্মস্পর্শী বক্তব্যে  সেই ভিডিওতে জান্নাত বলেছিলেন, 'আমি আর বাবা লেককে পরিষ্কার রাখার একটু প্রচেষ্টা করলাম। আমরা সেখান থেকে প্রচুর নোংরা আবর্জনা উদ্ধার করেছি। কিন্তু এইটুকুতেই ডাল লেক পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। ডাল লেক আমাদের সম্পদ। আর এই কাজে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং লেকের সৌন্দর্য যাতে ফিকে না হয়ে যায় সেজন্য সবটাই উজাড় করে দিতে হবে।’

জান্নাতের পরিবেশবাদী কাজের সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। জান্নাত তার কথা ও কাজ দিয়ে মন জয় করে নেন দেশবাসীর। অভিভূত হন দেশটির প্রধানমন্ত্রীও। তিনি নিজে তাঁর টুইটার একাউন্টে সেই ভিডিও শেয়ার করে দেশটির নাগরিকদের আহবান জানিয়ে এই মর্মে মন্তব্য করেন, ‘এই ছোট্ট মেয়েটির কথা শুনুন, দেখবেন সকালবেলাটা দারুণ কাটবে আপনার। স্বচ্ছ অভিযানে একটি দুর্দান্ত আবেগ জড়িয়ে রইল।’

জান্নাত যখনই পেরেছেন তার বাবা তারিক আহমেদ পাটলুর সাথে কিংবা নিজে একা একাই লেক পরিষ্কারের কাজ করেছেন। লেকের পানিতে ভাসমান ও ডুবন্ত প্লাস্টিক, অ্যালকোহল বোতল এবং পলিথিন বর্জ্য খুঁজে বের করে ফেলেছেন আবর্জনার জন্য নির্ধারিত ডাস্টবিনে। লেক পরিস্কারে তারিক আহমেদ আবার একজন বিদেশি লোকের দ্বারা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যাকে তিনি কয়েক বছর আগে সিগারেটের ছাই পানিতে ফেলে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে দেখেছিলেন।

জান্নাতের লেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এই কাজ এখন তার স্কুলের বন্ধুদের কাছেও দারুণ সমাদৃত ও  পরিচিত। জান্নাত তার বন্ধুদেরও পরিবেশ সচেতন হতে আহবান করছেন। জোর দিয়ে বলছেন, বর্জ্য পদার্থ খোলা জায়গায় নয়, ডাস্টবিনে ফেলার জন্য। এছাড়াও তিনি স্থানীয় মানুষ এবং সেখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে লেকে আবর্জনা না-ফেলার আবেদন জানাচ্ছেন। লড়ে যাচ্ছেন লেক সুরক্ষায়, পরিবেশ সুরক্ষায়। তার সাথে বাবা ছাড়াও আছেন পুরো দেশ আর বিশ্বের পরিবেশবাদী মানুষ। পরিবেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা, প্রকৃতির প্রতি তীব্র মমতাবোধ কিশোরী জান্নাতকে পরিণত করেছে 'ভারতের গ্রেটা থানবার্গ'-এ।  আর তাকে রূপান্তরিত করেছে এক  অদম্য-উদ্যমী ও  অক্লান্ত-পরিশ্রমী পরিবেশকন্যায়।

পরিবেশকন্যা কাশ্মীরের জান্নাত 'ভারতের গ্রেটা থানবার্গ', ছবি: সংগৃহীত

   

নারীরাই সমাজের স্থপতি



ফাহমিদা নবী
নারীরাই সমাজের স্থপতি

নারীরাই সমাজের স্থপতি

  • Font increase
  • Font Decrease

নারীর জাগরণে অনেক পিছিয়ে আছি বললে ভুল হবে। যদি বলি, তবে প্রযুক্তির যুগে এসে সে কথা বলার কোন মানে হয় না। নারীও তাঁর অধিকারে এগিয়ে যাচ্ছে সাহস এবং শক্তিশালী মানসিকতার বদৌলতে। কেন পিছিয়ে থাকবে?

১৯০৮ সালের শ্রম আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি। বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া আমাদের নারীদের জাগরণের জন্য যখন পথ দেখালেন তখন থেকে অদ্যাবধি অবস্থানকে শক্ত এবং শক্তিশালী করবার দুর্নিবার পথ চলা কিন্তু থেমে নেই। তবুও আমরা আজো পিছিয়ে কেন? যে জাতি নারীদের সম্মান করতে পারে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

নারীরাই সমাজের প্রকৃত স্থপতি। নারীকে চিন্তা চেতনার শর্তে জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। আমাদের দেশে আত্মসচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই নারীদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; সবসময় এবং বারংবার। নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। এ শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজসেবার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে। আর তা করতে হলে সমাজ সম্পর্কে তাঁর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন।

নারী দিবস মানেই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া সৃষ্টিতে-কৃষ্টিতে সমতায় সেরা নারী যেন কোনভাবেই ভেঙে না পড়ে।

আমার তো মনে হয় নারী ফিনিক্স পাখি! সে যেভাবে বারবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাড়ায়। নিজের কিশোরবেলা থেকে শুরু করে সংসার, বিয়ে, সন্তান থেকে পরিবার পুরো সমাজ সংসারে তার চলাচল ভীষণ ইতিবাচক। তাঁর তো সময় নেই নেতিবাচকতায় চোখ রাখবার! থাকুক যতই বাধা তার ধৈর্যের কমতি নাই। হাসিমুখে সব কিছুতে তাঁর অংশগ্রহণ এক বিস্ময়।

সত্যি বলতে কী নারী মানেই “মা”। তাই নারী সব কিছুরই উদাহরণ। মাকে কখনো কঠিন হতে হয়, কখনো কোমল, কখনো বা সংসার কৌশলী, বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী।

নারীদের বলতে চাই জীবনে সংগ্রাম থাকবেই কিন্তু পিছিয়ে পড়া যাবে না। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কথা বলতে, না বলতে, সাহসে পথ চলতে শিখতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে।

আমাদের দেশে নারীদের অংশগ্রহণ এখন সর্বত্র। শুধু সাহস আর মানবিকতা পথটাকে আরেকটু চিনে চলতে হবে। কারণ অমানবিকতা আনাচেকানাচে চিরকালই দেখি।

আরেকটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতেই হবে যা মানবিক আচরণ। কিছু সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যদি সবাই এক সমতায় তবে এখনো পিতার সম্পত্তি বণ্টনে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কেন? বিশাল সমস্যা এখানেই রয়ে গ্যাছে। এই সমঅধিকারের প্রতিকার যতদিন না হবে বৈষম্যের ফাঁকটা রয়েই যাবে। এবং মেয়েদের উপর অত্যাচার কখনোই কমবে না।

পৃথিবীর কোন দেশে এই বৈষম্যতা নেই বলেই নারীরা অনেক সাহসে এবং সমতার অংশগ্রহণের নিশ্চিত থাকতে পারে।

আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। সমবণ্টন নিশ্চিত হোক। নারীর এগিয়ে যাওয়া আর রুদ্ধ হবে না।

আমি সব সময় মুগ্ধ হই আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে। কী প্রাণবন্ত হয়ে নারীদের অগ্রগতিতে তিনি কতটা ভূমিকা রাখছেন! প্রতি মুহূর্তে তিনি চান মেয়েরা এগিয়ে আসুক সাহসী হোক। তিনি এ ব্যাপারেও কাজ করছেন শুনেছি। আশা করি অবশ্যই পিতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমঅধিকার হবে। কাজেকর্মে, শিক্ষায় সমাজ সংসার জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখুক সমতায়। সেজন্য সুযোগ সুবিধায় নারীদের সম্মানকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

সকল নারীদের জন্য শুভ কামনা; আত্মবিশ্বাসে পথ চলা সফল হোক।

ফাহমিদা নবী: সংগীত শিল্পী

;

‘নারীবাদী’ শব্দের উৎপত্তি এবং এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক



নারীশক্তি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

নারী ক্ষমতায়নের বিশ্ববাসী / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

‘নারীবাদী কিনা?’ প্রশ্নে পুরুষ কিংবা নারী- অনেককেই অপ্রস্তুত হতে দেখা যায়। কারো উত্তরে থাকে দ্বিধা। হাস্যকর হলেও সত্য, কেউ কেউ উত্তর দেয়,‘আমি নারীবাদী নই, তবে আমি সমতায় বিশ্বাসী।’ সমাজে অধিকাংশ মানুষের কাছে ‘নারীবাদী’ শব্দটার অর্থ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। বর্তমান সমাজে মানুষ নারীদের সমান অধিকারের দাবীর কথা শুনে হাসে। কিছু মানুষের মতে, নারীরা বরং বেশিই পাচ্ছে। বর্তমান সমাজচিত্র দেখে অনেকে মনে করেন, নারীবাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বরফখণ্ড ভাসতে দেখে, পানির নিচে তার আকার বোঝা যায় না। নারীবাদী  শব্দের সূচনা যখন হয়েছিল, তখন সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন ছিল।

নারীবাদ মানেই পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের মানসিকতা। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে-মানুষ হিসেবে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার প্রাপ্য, সেই নারীবাদী। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ের অনেক নারীবাদীদের মধ্যে পুরুষ বিদ্বেষী ভাব ফুটে ওটে। এই আচরণ কোনোভাবেই নারীবাদী হওয়ার প্রমাণ নয়!    

উনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবার ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিক চার্লস ফুরিয়ে ১৮৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। এরপর ১৮৭২ সালে  ফ্রান্স এবং ১৮৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে ফেমিনিজম এবং ফেমিনিস্ট শব্দ দু’টির ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা ভোটের অধিকার আদায়ে এবং নারী-পুরুষ সমান ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু করে। এই  আন্দোলন হয়েছিল কারণ, কর্মক্ষেত্রে সম্মান এবং আয়ের দিকে নারীরা ছিল পুরুষদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।  সমান অধিকার ছিল না বলেই, তা ছিনিয়ে নিতে বার বার আন্দোলনে নামতে হয়েছে নারীদের ।

স্রষ্টা পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ-কে পাঠিয়েছেন। অথচ বিবেক-বুদ্ধিবান মানব সমাজেই একপক্ষকে অপর পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। ব্যাপারটা কেমন বেখাপ্পা নয় কি?

একটা সময় নারীদের নিজ ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারও ছিল না। শিক্ষাগ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় স্বামীর মৃত্যু হলে, জীবিত নারীদের তাদের সাথে পুড়িয়ে মারা হতো। নারীর ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের সকলে মিলে তাকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করতো। সম্রাট আকবর তার রাজত্বকালে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চালু হয়ে বিধবা বিবাহ আইন। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ছেলেকে এক বিধবা কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে।

তৎৎকালীন এই অসমতার চিত্র, ইউরোপের অনেক লেখকের কলমে ফুটে উঠেছিল প্রাচ্যের বর্বরতা হিসেবে। তারা নারীদের প্রতি আচরণের কারণে, প্রাচ্যকে অনুন্নত বিবেচনা করতো। অথচ পশ্চিমের আচরণ যে নারীদের প্রতি খুব সম্মানজনক ছিল, নাও কিন্তু নয়!

ইংল্যান্ডের বাজারে একসময় বউ বিক্রি হতো। নারীদের লাল লিপস্টিক দিয়ে সাজ ছিল নিষিদ্ধ। কেবল দেহ ব্যবসায়ী নারীরাই লাল লিপস্টিকের ব্যবহার স্বাধীনভাবে করতে পারতেন। ১৮০০ সালের দিকে ঝগড়া করার অপরাধে এক ইউরোপীয়ান তার স্ত্রীর মুখে বেড়ি পড়িয়ে রাস্তায় হাঁটিয়েছিলেন। এমনকি নারী আন্দোলন এবং জাগরণের শুরুই হয়েছিল খোদ পশ্চিমের দেশগুলোতেই।  

সব মানুষেই নিজের জীবন স্বাধীনভাবে কাটাতে চায়। কেউই  পরাধীন থাকতে চায়না বিধায়, কালের বিবর্তনে বিশ্বজুড়ে বার বার বিদ্রোহ এবং আন্দোলন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েও লড়ে গেছে স্বাধীনতার জন্য। বর্তমান সমাজ নারীর প্রতি যথেষ্ট নমনীয় হলেও, শুরু থেকে এমনটা ছিল না। সেই কারণেই নারীরা আন্দোলন করে অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।    

;

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;