‘জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল’ উন্নয়নে কাজ করবে সুমিতমো করপোরেশন ও বেজা

  • আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজ জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে। জাপানের সুমিতমো করপোরেশন ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) যৌথভাবে এ কাজ সম্পন্ন করবে।

বেজা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সরাসরি বিদেশে বিনিয়োগ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম বৈঠকে অংশ নেয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সি (জাইকা)। ওই বৈঠকে এই সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, জাপানের সুমিতমো করপোরেশন গত ৩০ বছরে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং ভারতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করে আসছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেখানে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার বিষয়েও আলোচনা করা হয়। নাশকতায় অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লে সুমিতমো করপোরেশন চুক্তি বাতিল করতে পারবে। এছাড়া বৈঠকে আরো ৩টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের কাছ থেকে যৌথ মালিকানায় কোম্পানিটির অনুমোদন নিতে হবে। কোম্পানির ৭৬ শতাংশ শেয়ার সুমিতমো করপোরেশনের এবং বাকি অংশের মালিক বেজা।

যৌথ কোম্পানিটি এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি উন্নয়ন, রাস্তা, খাল ও পুকুর খনন, পানি নিষ্কাশন, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, গ্যাস পাইপ লাইন ও তথ্য প্রযুক্তি যোগাযোগ লাইন স্থাপনের কাজ করবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়। পরের বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ২০১৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০১৭ সালের গুলশানের সন্ত্রাসী হামলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা পিছিয়ে যায়। অবশেষে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বেজা ও সুমিতমো করপোরেশন সমঝোতা  চুক্তি সই হয়। বেজার পক্ষে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ও সুমিতমোর পক্ষে আকিতো শিরায়িশি চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তি শেষে পবন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, জমি অধিগ্রহণের পর আগামী ডিসেম্বরে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে। আর আগামী বছর সুমিতমো করপোরেশন সেখানে উন্নয়নকাজ শুরু করবে। ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা খুব ক্ষতি করেছে। জাপানিরা এ ধরনের অস্থিরতা পছন্দ করে না। তাই এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বিলম্ব হয়েছে।

বেজার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে পাস হয়েছে। তবে ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইন স্থাপন এবং ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জাইকার কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার আশা করছে সরকার।

জাইকা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছিল। তবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বেশি উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জকে। সেখানে মোট এক হাজার ১০ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। প্রথম ধাপে প্রায় ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। চলতি মাসে ৪৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছে। এর মধ্যে ৭৬টির স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল পেয়েছে ৩টি দেশ। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭৪ একর জমিতে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। ভারত মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০৫৪ একর জমি চেয়েছে। সৌদি আরবও সেখানে বিনিয়োগের জন্য দুই হাজার একর জমি চেয়েছে।