বিপিএলে অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়ে অশ্রুসজল নাফিসা
বিসিবি’র আকস্মিক এক সিদ্ধান্তে নিজেদের আগের দাবি-দাওয়া থেকে সরে এসেছে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। বিসিবি জানিয়েছে-বিপিএলের সপ্তম আসরে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকছে না। সাত দলের সবগুলোই বিসিবি নিজেরাই পরিচালিত করবে। দলের মালিকানা কারো কাছে হস্তান্তর করা হবে না।
বিসিবি’র হঠাৎ এমন বেমক্কা ‘বাউন্সারে’ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মাথা নুইয়ে ফেলেছে! আগের সব দাবি-দাওয়া থেকে সরে এসে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এখন অনুনয়ের সুরে বিসিবির কাছে আবেদন জানাচ্ছে-প্লিজ আমাদের রাখুন! আমরা খেলতে চাই!
বিপিএল নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কড়া দাবির মিছিলে সবচেয়ে স্বোচ্চার ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল। সেই তিনিই বিসিবির ‘বিপিএল ঘোষণার’ দুদিনের মধ্যেই তার সব দাবি-দাওয়াকে সরিয়ে এখন অশ্রুসজল কণ্ঠে আকুতি জানাচ্ছেন টুর্নামেন্টে যেন তাদের রাখা হয়!
নাফিসা কামাল শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীতে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানেই তিনি তার নতুন অবস্থান তুলে ধরেন। এই সংবাদ সম্মেলনে নাফিসা কামাল যা বলেছেন তার সারমর্ম এমন-‘এবারের বিপিএল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে তার নামে করার বিসিবির সিদ্ধান্তকে আমরা অন্তর থেকে সমর্থন জানাই। বঙ্গবন্ধু মানেই দেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই পতাকা। এই মহান নেতার নামে অনুষ্ঠিতব্য এই বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও অতি অবশ্যই অংশ নিতে চায়। টানা ছয় বছর ধরে বিপিএলের সঙ্গে জড়িত আছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলের সবচেয়ে পুরানো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর একটি কুমিল্লা। বিপিএল যে আজ বিশ্বব্যাপি যে জনপ্রিয়তা ও দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে তাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেরও অবদান আছে। দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা। বিপিএল থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স সরে যাওয়ার কথা চিন্তাই করে না। আগের মতো এবারো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ধারাবাহিকভাবেই বিপিএলের সঙ্গে থাকতে চায়। দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে অবদান রাখতে চায়।’
বিপিএল নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বিসিবি বেশ কয়েকটি বৈঠক করে। প্রায় সব বৈঠকে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা তাদের দাবিদাওয়া বেশ জোরালো করছিলেন। বলেছিলেন-বিপিএলে খেলে তাদের আর্থিক লাভ হচ্ছে না। এমনকি এভাবে চলতে থাকলে তারা টুর্নামেন্টে অংশ নেবেন কিনা- তেমন একটা প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছিলো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বিসিবিকে। আর্থিক সমস্যা মিটিয়ে উঠার লক্ষে বিসিবির কাছে তারা টুর্নামেন্ট থেকে অর্জিত লভ্যাংশ দাবিও করেন। টুর্নামেন্টের স্টেক হোল্ডার হিসেবে তারা এমনসব দাবি দাওয়া তুলেন এসব বৈঠকে।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর এমনসব দাবি এবং টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই দলগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়ের আগাম চুক্তির সিদ্ধান্তে বিসিবি ভীষণ ক্ষেপে যায়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়-একলা চলার। ঠিক যে কায়দায় এনসিএল বা বিসিএল অনুষ্ঠিত হয়, তেমন করেই বিপিএলের সপ্তম আসর অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন- ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দাবি দাওয়া মানা বিসিবির পক্ষে কোনমতেই সম্ভব না। কিন্তু আমাদের তো বিপিএল চালাতে হবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সপ্তম আসরের বিপিএল বিসিবি নিজেরাই চালাবে। কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি এবার থাকবে না। তবে হ্যাঁ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি স্পন্সর হিসেবে থাকতে চায় তবে তারা থাকতে পারে। কিন্তু দলগুলোর সার্বিক পরিচালনার সঙ্গে জড়িত থাকবে বিসিবি, কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়।’
বিসিবির এমন সিদ্ধান্তে কুমিল্লা, রংপুরসহ প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মাথায় হাত। আর তাই তারা বিসিবির কাছে বৈঠকে পেশ করা সব দাবি দাওয়ার লম্বা তালিকা ছিঁড়ে ফেলে এখন শুধু বিপিএলে অংশগ্রহনের জন্য কাতরতা দেখাচ্ছে!
আরও পড়ুন-