রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে চিন্তিত প্রশাসন

  • মুহিববুল্লাহ মুহিব, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ছবি

কক্সবাজার: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দিন দিন ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এমন আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে।

পুলিশ বলছে, নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে রোহিঙ্গাদের অপরাধ ক্রমাগত বাড়ছে। গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের হাতে ২২ জন রোহিঙ্গা খুনসহ ৪ শতাধিক অপরাধ লিপিবদ্ধ হয়েছে। খুন, মাদক, অস্ত্র প্রদর্শনসহ রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধে শঙ্কিত স্থানীয়রাও। মাত্র এক বছরের মাথায় এভাবে অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি চিন্তিত প্রশাসনও।

বিজ্ঞাপন

সবশেষ, গত সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের চাকমারকুলের পাহাড়ি এলাকা থেকে গলাকাটা ৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন- বালুখালি ক্যাম্পের সৈয়দ হোসেনের ছেলে নুরে আলম (৪০), কুতুপালং ‘ডি’ ব্লকের জামাল হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল খালেক (২০) ও ‘ই’ ব্লকের আবদুল গফুরের ছেলে মো. আনোয়ার (৩৩)। আহত ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে উখিয়ার মালয়েশিয়া ফিল্ড হাসপাতালে ও অপরজনকে রেডক্রস ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এরপর ওই দিন বিকেলে উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় নিখোঁজ আরও ৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা হলেন- বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-ব্লকের বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, জামাল হোসেন ও মো. সোলাইমান। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া শুক্রবার (৩১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. আবু ইয়াছির (২২) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হন।

বিজ্ঞাপন

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণসহ নানা অপরাধ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মাঝে। মিয়ানমারে থাকাকালীন নিজেদের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তা বাংলাদেশে আসার পর ক্রমাগত প্রকাশ পাচ্ছে। এ অপরাধ দমনে দ্রুত প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তারা।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বর্তমান কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ বার্তা২৪.কমকে জানান, রোহিঙ্গারা সার্বিকভাবে নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সামনে জাতীয় নির্বাচন, এতে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ভঙ্গ করে কিনা, বাইরের কোনো গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে জানান, যেভাবে খুন, খুনের চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে এটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা জরুরি।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের নেতা এইচ এম নজরুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত একটি জাতিগোষ্ঠী। তারা অভ্যন্তরীণ ভাবে যে সংঘাতে জড়িয়ে যাচ্ছে এটা বাংলাদেশের জন্য হুমকি। এরা অস্ত্র কোন স্থান থেকে পায় তার উৎস বের করা জরুরি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, অপরাধের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবু গোয়েন্দা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে বিষয়টি নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলকে জানানো হয়েছে।