প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছাড়ছে আসামির স্বজনরা!

  • ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছাড়ছে আসামির স্বজনরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছাড়ছে আসামির স্বজনরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

নড়াইল: ফরহাদ কাজী সিংগাশোলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে ২য় সাময়িক পরীক্ষা রয়েছে তার। এ কারণে গভীর রাতে বাড়িতে বসে লেখাপড়া করছিল সে। হঠাৎ প্রতিপক্ষের ২০-২৫ জন লোক বাড়িতে এসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাট শুরু করে। তারা চলে যাওয়ার সময় রেখে যায়নি ফরহাদের পড়ার বইগুলোও। এ ঘটনার পর পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে তার। বর্তমানে নানি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ফরহাদ।

বলছিলাম নড়াইলের কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের জান্নাত কাজীর বাড়ির কথা। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে এ বাড়িতে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে প্রায় একমাস ধরে চলছে হামলা-ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কবির মণ্ডল (৪০) নামে একজন নিহতের ঘটনার প্রায় একমাস অতিবাহিত হলেও আসামি পক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট করা থেমে নেই। গত সোমবার রাতেও একাধিক বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট করে বাদী পক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের জান্নাত কাজী, ইউসুফ সরদার, সোহেলের বাড়িসহ কমপক্ষে ১০টি বাড়ি ভাঙচুর করে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। বাড়িতে থাকা নারী-শিশুদের দিন কাটছে ভয়ে আতঙ্কে। পুরুষ শূন্য রয়েছে বাড়িগুলো। এখানে প্রতিরাতেই কোনো না কোনো আসামির বাড়িতে চলে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা। পুলিশ ঘটনার পর থেকে পাহারায় থাকলেও এরই মধ্যে চলছে এসব তাণ্ডব।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/04/1536050996834.jpg

জান্নাত কাজীর বাড়ির পাকা ঘর ভেঙে লুটপাট চালানো হয়েছে। ঘরের মধ্যে আলনা, পালঙ্ক, ড্রেসিং টেবিলসহ যা যা ছিল সবই নিয়ে গেছে। বাড়ির নারীদেরকেও মারধর, এমনকি শিশুরাও হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জান্নাত কাজীর স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বেগম।

হামলার শিকার ইউসুফ সরদারের বাড়িতে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি। সবাই ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আর এ সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন নতুন ওয়াল করা টিনের ঘর ভেঙে দিয়েছে। এ বিষয়ে ওই বাড়ির আশপাশের লোকজন কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।

এদিকে এ ঘটনায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও তা পায়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শমশের আলী বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করে বার্তা২৪.কমকে জানান, ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে গত ৫ আগস্ট সকালের দিকে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি সমর্থিত ইনামুল হক এনাম মেম্বারের দলের সমর্থকদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু সমর্থিত বখতিয়ার হোসেন সাবুর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহতদের নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কবির মণ্ডল নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্যান্যদের নড়াইল ও খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত কবির মণ্ডল নিলু খান সমর্থিত বলে জানা যায়। এ ঘটনায় ৪১ জনকে আসামি করে কালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।