মোংলা বন্দরে প্রায় ৫০ শতাংশ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি

  • আবু হোসাইন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বাগেরহাট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

মোংলা বন্দরে রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এ রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গত ২০১৬-১৭ইং অর্থ বছরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ইং অর্থ বছরে যা বেড়ে প্রায় ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে বন্দরে বিদেশি জাহাজের আগমন ও কার্গো হ্যান্ডলিং (পণ্যের ওঠা-নামা)। এক বছরের ব্যবধানে কন্টেইনার আগমনের সংখ্যাও আড়াই গুণ বেড়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে বন্দরে বিদেশি জাহাজ এসেছিল ২৮২ টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২৩ টিতে। একই সঙ্গে বন্দরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায় ২২৬ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আসে ৭৮৪ টি জাহাজ।

বিজ্ঞাপন

এ সময় কার্গো হ্যান্ডলিং (পণ্যের ওঠানামা) হয় ৯৭ দশমিক ১৬ লক্ষ মেঃ টন। রাজস্ব আদায় হয় ২৭৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এক সময়কার স্থবির মোংলা বন্দরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব ব্যয় বাদে নিট মুনাফা ছিল সাড়ে ৭১ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিট মুনাফা হয় ১০৯ কোটি টাকা। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/17/1547727011139.jpg

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ,কে,এম ফারুক হাসান বলেন, আমদানি-রফতানিতে আশার সার করেছে মোংলা বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মোংলা বন্দরে কন্টেইনার আনার খরচ বেশি। এছাড়া নাব্য সংকটের কারণে আশানূরূপ জাহাজ ভিড়তে পারেনা। এ সমস্যা সমাধানে প্রকল্প চলমান রয়েছে। জটিলতার অবসান হলে এ বন্দরে আমদানি-রফতানি আরো বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, মোংলা বন্দর উন্নয়নে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়ে ৭টি চলমান রয়েছে। ভারত ও চীনের অর্থায়নে একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার বাস্তবায়ন শেষ হলে বন্দরের গতিশীলতা পাল্টে যাবে। বন্দরের উন্নয়নে সরকার সার্বিক বিষয় নিয়মিত মনিটরিং করছেন বলেও জানান তিনি।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, ২০০৯ সালের পর থেকে লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বর্তমানে এ বন্দরে ৬টি নিজস্ব জেটি, ব্যক্তি মালিকানাধীন ৭টি জেটি, ২২ টি অ্যাঙ্কোরেজের মাধ্যমে ৩৫ টি জাহাজ এক সঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব। ৪টি ট্রানজিট শেড, ২টি ওয়ার হাউজ, ৪টি কন্টেইনার ইয়ার্ড, ২টি পার্কিং ইয়ার্ডের মাধ্যমে মোংলা বন্দর বার্ষিক ১00 লাখ মেট্টিক টন কার্গো এবং ৭০ হাজার টিইউজ কন্টেইনার এবং ২০ হাজারেরও বেশি গাড়ী হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/17/1547727025745.jpg

মোংলা কাস্টম ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ সুলতান হোসেন খান বলেন, পারস্পারিক সহযোগীতার মনোভাব নিয়ে বন্দরের সমস্যা ও সংকটের সমাধান করা গেলে মোংলা বন্দরের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে। সেই সঙ্গে বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়বে এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমা লে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী স্টিভিডরস কোম্পানি ‘রহমান এন্টারপ্রাইজ’র সত্ত্বাধিকারী মো: মশিউর রহমান বলেন, মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। শ্রমিকরা এখন কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছে। মোংলা বন্দরে যে পরিমাণ জাহাজ আসছে তা অন্য বছরের তুলনায় রেকর্ড গড়ে তুলেছে। আমরা ব্যবসায়ীরা চাইবো এই ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে।

মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরের যাত্রা হয়। বন্দরটি বঙ্গোপসাগর থেকে ১৩১ নটিক্যাল মাইল উজানে অবস্থিত। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে খুলনার চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটিতে বিদেশি একটি জাহাজ নোঙ্গরের মাধমে প্রথম এর নামকরণ করা হয় চালনা বন্দর। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে অধিকতর সুবিধাজনক হওয়ায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মোংলায় স্থানান্তর করা হয়। যেটি এখন মোংলা সমুদ্র বন্দর।

সূত্রটি আরো জানায়, এ বন্দর দিয়ে রফতানিকৃত পণ্য হচ্ছে, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চিংড়ি, ক্লে টাইলস, চামড়া ও অন্যান্য সাধারণ পণ্য। বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্য খাদ্য শস্য, সার, ক্লিংকার, মেশিনারী, রিকন্ডিশন গাড়ি, এলপি গ্যাস, কয়লা, লাইম স্টোন, পাম অয়েল, কাঠের লগ, পাথর ও অন্যান্য সাধারণ পণ্য।